বিক্ষুব্ধ এ বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে মহানবীর (দ.) আদর্শের বিকল্প নেই

| শুক্রবার , ৩০ অক্টোবর, ২০২০ at ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ

আজ ১২ রবিউল আউয়াল। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)। বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লামের জন্ম ও ওফাত দিবস। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এ দিনে মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশে মা আমেনার কোল আলো করে প্রিয় নবী (দ.) ইসলামের শেষ নবী হিসেবে আসেন এই পৃথিবীতে। জন্মের পূর্বেই পিতৃহারা হন এবং জন্মের অল্পকাল পরই বঞ্চিত হন মাতৃস্নেহ থেকে। অনেক দুঃখ-কষ্ট আর অসীম প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হয়ে ওঠেন। অসভ্য বর্বর ও পথহারা মানব জাতিকে সত্যের সংবাদ দিতে তিনি তাদের কাছে তুলে ধরেন মহান রাব্বুল আলামীনের তাওহীদের বাণী।
একটা সময় গোটা আরব জাহান ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। মানুষ হয়ে পড়েছিল বেদীন। তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। এ যুগকে বলা হতো আইয়ামে জাহেলিয়াত। তখন মানুষ মারামারি আর হানাহানিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তি পূজা করত। এ থেকে মানুষকে মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহতায়ালা হজরত মোহাম্মদ (দ.)-কে এই ধরাধামে পাঠান। মহানবী অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুয়তপ্রাপ্ত হন। আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভ করেন। পবিত্র কোরআন শরিফে বর্ণিত আছে, ‘মহানবীকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীকে সৃষ্টি করতেন না।’ এ কারণে এবং তৎকালীন আরব জাহানের বাস্তবতায় এই দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সমপ্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) হিসেবে পালন করে থাকে। চট্টগ্রামে বর্ণাঢ্য জুলুসের মাধ্যমে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপন করা হয়। তবে বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে এবার ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস বের হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ৮টায় নগরের ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ-এ-কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে জুলুস বের হবে। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর ১২ রবিউল আউয়াল আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় এ জুলুস হয়ে আসছে। ওই বছর নগরের বলুয়ার দীঘি খানকাহ থেকে আল্লামা তৈয়্যব শাহ (রা.) এ জুলুসের প্রচলন করেন। গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বিশেষ শাখা থেকে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জুলুস আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথমত আমরা মাস্ক না পরলে কাউকে জুলুসে অংশ নিতে কিংবা আলমগীর খানকাহ, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসা মাঠ এলাকায় ঢুকতে দেব না। দ্বিতীয়ত মাদরাসা মাঠ, খানকাহ, আশপাশের সব সড়কে জীবাণুনাশক পানি ছিটানো হবে। এ ছাড়া যেহেতু সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে জুলুস করার অনুমতি পাওয়া গেছে তাই অন্যান্য বারের মতো লাখো লোকের সমাগম হবে না। যারা জুলুসে আসবেন তাদের বিতরণের জন্য আমরা ভক্ত আশেকদের বেশি বেশি মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার আনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। আনজুমান, গাউসিয়া কমিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগেও মাস্ক বিতরণের ব্যবস্থা থাকবে। আখেরি মোনাজাতে করোনামুক্ত বিশ্বের জন্য দোয়া করা হবে।
মহানবীর (দ.) ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা সামগ্রিক জীবনে তাঁর মাঝে বিকশিত হয়েছে আরও উন্নত ও মহত্তম গুণাবলি। তিনি একজন আদর্শ পরোপকারী, আদর্শ শিক্ষক, আদর্শ প্রচারক, আদর্শ সৈনিক, আদর্শ সেনাপতি, আদর্শ বিপ্লবী, আদর্শ নেতা ও আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক। তিনি শ্রমিকের আদর্শ, তিনি ব্যবসায়ীর আদর্শ, অতিথিপরায়ণতার আদর্শ, বিচারকের আদর্শ- সর্বোপরি পৃথিবী যতদিন টিকে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত তিনি সর্বমানবের কাছে সর্বোৎকৃষ্ট অনুসরণীয় আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকবেন। আজ পৃথিবীর অমুসলিম মনীষীরাও স্বীকার করেছেন একমাত্র হযরত মোহাম্মদ (দ.) এর পথ অনুসরণের মাধ্যমে আজকের বিশ্ব তাবৎ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে। মহান আল্লাহর প্রদর্শিত পথে মানবজাতিকে পরিচালনার জন্য যুগে যুগে যেসব নবী রাসূল এসেছেন তাদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন হযরত মোহাম্মদ (দ.)। তাই অশান্ত আর বিক্ষুব্ধ আজকের এ বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (দ.) এর আদর্শের কোনো বিকল্প নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে