বিএনপি-জামায়াত দুদিকে!

এখনই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছে না কেউ

| সোমবার , ২৯ আগস্ট, ২০২২ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে সশস্ত্র অবস্থান নেওয়ায় দেশ স্বাধীনের পরে নিষিদ্ধ হয় জামায়াতে ইসলামী। পরবর্তীতে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সময় ১৯৭৯ সালে পুনরায় রাজনীতির সুযোগ পায় তারা। এরপর খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব বিএনপি জোটে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে দলটি। সেই সম্পর্ক ২০২২ সালে এসে দুদিকে চলে গেছে। গত শনিবার কুমিল্লার রুকনদের উদ্দেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের ভার্চুয়ালি দেওয়া এক বক্তব্যে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। তার ওই বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দুই দলের মধ্যে যে আর সুসম্পর্ক নেই, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সেই আলোচনা আরও জোরদার হয়েছে। খবর বাংলানিউজের।
ওই ভিডিওতে জামায়াত আমির বলেন, আমরা এতদিন একটা জোটে ছিলাম। ছিলাম বলে আপনারা হয়তো ভাবছেন, কিছু হয়ে গেছে নাকি? আমি বলি হয়ে গেছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি একটি জোট ছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। সেটা আর ফিরে আসেনি।
তিনি বলেন, বছরের পর বছর এ ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না। এই জোটের সঙ্গে বিভিন্ন দল যারা আছে, বিশেষ করে প্রধান দলের (বিএনপি) এই জোটকে কার্যকর করার কোনো চিন্তা নেই। বিষয়টা আমাদের কাছে স্পষ্ট দিবালোকের মতো এবং তারা আমাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বাস্তবতা হচ্ছে নিজস্ব অবস্থান থেকে আল্লাহর ওপর ভর করে পথচলা। তবে হ্যাঁ, জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব ইনশাল্লাহ। বিএনপির সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছি। তারা ঐকমত্য পোষণ করেছে। তারা আর কোনো জোট করবে না। এখন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব। যদি আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করেন, তাহলে আগামী দিনগুলোতে কঠিন প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। দোয়া করেন, এসব ত্যাগ যেন আল্লাহর দরবারে মঙ্গলজনক হয়। এ ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ পাক যেন আমাদের পবিত্র একটি দেশ দান করেন। যে দেশটা কোরআনের আইনে পরিচালিত হবে। এছাড়া ভিডিওতে ‘বিএনপি শরিয়া আইনে বিশ্বাস করে না’ বলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্যে হতাশ হওয়ার কথা বলেন জামায়াত নেতা।
জামায়াতের অতি সহিংসতায় সম্পর্ক দুদিক করেছে : দশম সংসদ নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযুক্ত নেতাদের বিচার বন্ধ করতে আন্দোলনে নামে জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে বিএনপি মাঠে থাকলেও স্বাধীনতা বিরোধী অপরাধের বিচারে মাঠে ছিল না। তখন বিএনপি নেতারা নানাভাবে জামায়াতকে ব্যাপক সহিংসতায় অভিযুক্ত করেন। সেই সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপরও হামলায় অভিযুক্ত করা জামায়াতে ইসলামীকে। এসব নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিএনপি। অন্যদিকে জামায়াতে তাদের দলের নেতাদের বাঁচাতে মাঠে না নামার বিএনপিকে দোষারোপ করে।
খালেদার হাত ধরে জামাতের সঙ্গে অলিখিত জোট : জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোটের আলোচনা হয়েছিল ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেই। জামায়াত নেতা মুজিবুর রহমানের লেখা একটি বইয়ে উল্লেখ আছে, তারা সে সময় ১০০টি আসন চেয়েছিল বিএনপির কাছে। কিন্তু খালেদা জিয়া রাজি না হওয়ায় জোট হয়নি। পরে অঘোষিতভাবে ৩৫টি আসনে জামায়াতকে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিনিময়ে তারাও দেশের বাকি আসনগুলোতে বিএনপির হয়ে কাজ করেছে।
এরপর বিএনপির বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির আন্দোলনে জামায়াত ইসলামী মাঠে নামলে সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়। ১৯৯৬ সালে বিএনপি ও জামায়াত পুরোপুরি আলাদা নির্বাচন করে। তখন ভরাডুবি হয় জামায়াতের। তারা জেতে মাত্র তিনটি আসনে। অন্যদিকে বিএনপিও এ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়। ফলে বিএনপি ও জামায়াত দুই পক্ষই একে অন্যের গুরুত্ব বুঝতে পারে।
আনুষ্ঠানিক জোটে বিএনপি-জামায়াত : তারপর ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলনে অন্য দুই দলসহ চার দলীয় জোট গঠন করে জামায়াত-বিএনপি। সঙ্গে ছিল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং আজিজুল হকের ইসলামী ঐক্যজোট। চার দলীয় জোট গঠনের অল্প সময়ের মধ্যেই প্রথমে এরশাদ এবং পরে আজিজুল হক জোট ছেড়ে দেন। তবে সমালোচনার মধ্যেও জামায়াতকে বিএনপি কখনো ছাড়তে রাজি হয়নি। জোট গঠনের দুই বছর পরে ২০০১ সালে যে জাতীয় নির্বাচন হয়, তাতে এই জোট দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসে। যার কারণ হিসেবে মনে করা হয় বিএনপি-জামায়াত দুই দলের ভোট যোগ হওয়াকে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধী বিরোধী আন্দোলনে এ জোট বিপাকে পড়ে। নির্বাচনে ভরাডুবি হয় এই জোটের। জামায়াতকে সঙ্গী করে বড় ব্যবধানে হেরে যায় বিএনপি।
জামায়াতকে ছাড়ার গুঞ্জন অনেক দিনের : বিএনপির জামায়াত ছাড়ার প্রসঙ্গ নানা সময় এসেছে। দশম সংসদ নির্বাচনের পর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের জোট কৌশলগত। সময় এলেই তিনি জামায়াতকে ত্যাগ করবেন। এর মধ্যে ২০২১ সালের শুরুতে বিএনপি এই জোট ত্যাগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েও পরে আর গণমাধ্যমকে কিছু জানায়নি।
এখনই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছে না কেউ : জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, এটা দলীয় বক্তব্য না। ব্যক্তি ও দলীয় বক্তব্য এক নয়। এ রকম যদি সিদ্ধান্ত হয় তাহলে দল থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।
অপরদিকে জামায়াতের সঙ্গে জোট ছিন্নের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সময়মতো জানাব। এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক জিএমসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
পরবর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়া আবার হাসপাতালে ভর্তি