বিআরটিএ সার্ভারে হাজারও প্রতারক

অন্যের টিআইএনে ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধন, পড়ছে ধরা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

‘চট্টমেট্রো-গ-১১-৫৩২৫’ গাড়িটির মালিক নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে একজন উপসচিবের টিআইএন সনদ (আয়কর প্রত্যয়নপত্র) ব্যবহার করে গাড়ি নিবন্ধন করে ব্যবহার করছিলেন। শুরু থেকে গাড়ি নিবন্ধনে টিন সনদ বাধ্যতামূলক থাকলেও বিআরটিএর সফটওয়্যারে এসব সনদ যাচাই করার সুযোগ ছিল না।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতে বিআরটিএর সফটওয়্যার হালনাগাদ করার পর একে একে ধরা পড়ছে এসব প্রতারণার কাহিনী। বিআরটিএ বলছে, সরকারি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে এ ধরনের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে সফটওয়্যারে ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে। টিআইএন সনদ নিশ্চিত করার পাশাপাশি ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগার কার্যালয়ের পরিচালকের দায়িত্বে আছেন ইশরাত রেজা। তিনি সরকারের উপসচিব মর্যাদার একজন কর্মকর্তা। সম্প্রতি বিআরটিএর সফটওয়্যারের একটি স্বয়ংক্রিয় ম্যাসেজ আসে তার মোবাইলে। ম্যাসেজে জানানো হয় গাড়ির বিপরীতে ৩৭ হাজার ৫শ টাকা আয়কর বকেয়া রয়েছে তার। কিন্তু তার ব্যক্তিগত গাড়ির বিপরীতে ২৫ হাজার টাকা আয়কর বকেয়া থাকার কথা। বিষয়টি জানতে তিনি যোগাযোগ করেন বিআরটিএতে। বিআরটিএ থেকে তাকে জানানো হয়, তার ব্যক্তিগত টিআইএন নম্বর ব্যবহার করে দুটি গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে। ‘চট্টমেট্রো-গ-১১-৫৩২৫’ নম্বরের গাড়িও একটি। অথচ এই গাড়িটি তার নয়। এ নিয়ে ইশরাত রেজা নগরীর খুলশী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
জানা গেছে, ‘চট্টমেট্রো-গ-১১-৫৩২৫’ নম্বরের গাড়িটির মালিক মো. নজরুল ইসলাম। তার পিতার নাম আনিসুর রহমান। চট্টগ্রামে নিবন্ধিত হলেও বর্তমানে ঢাকার মিরপুর বিআরটিএতে গাড়িটি সংযুক্ত রয়েছে। ডকুমেন্ট হালনাগাদ কার্যক্রম সুবিধার জন্য গাড়ির মালিক নিজেই বিআরটিএতে আবেদন করে সংযুক্ত করে নিয়েছেন। তথ্য অনুযায়ী, প্রাইভেট কারটির ফিটনেস ২০১৭ সালের ২ মে থেকে এবং ট্যাঙটোকেন ২০১৮ সালের ৬ মার্চ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর আর হালনাগাদ করা হয়নি।
বিআরটিএর কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ১৫ লক্ষাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে। রাজস্ব আইন অনুযায়ী, একই টিন নম্বরে যার দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে, তাকে দ্বিতীয় গাড়ির জন্য সাধারণ ফি’র অতিরিক্ত টাকা জমা দিতে হয়। আবার আগে গাড়ি কিনে যাদের টিআইএন ছিল না, তারা অন্যের টিআইএন দিয়ে ব্যাংকে টাকা জমা দিত। টিআইএন নম্বর না থাকলে ব্যাংকে সফটওয়্যারে টাকা রিসিভ হত না। এক্ষেত্রে যাদের টিআইএন ছিল না তারা অন্যের টিআইএন দিয়ে ব্যাংকে টাকা জমা দিত। সে অনুযায়ী বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন পেত। শুরুর দিক থেকে এসব টিআইএন যাচাইয়ের সুযোগ ছিল না।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ইশরাত রেজা আজাদীকে বলেন, ডিজিটাল যুগে একজন সরকারি কর্মকর্তার টিআইএন নম্বর আরেকজন ব্যবহার করে গাড়ির নিবন্ধন নেওয়া বিস্ময়ের। এগুলো জালিয়াতি ও প্রতারণা। আবার একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আমার জন্যও বিষয়টি বিড়ম্বনার। আমার মতো হাজার হাজার গাড়ির মালিক এ ধরনের ঘটনার শিকার হতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে থানায় জিডি করেছি। বিআরটিএ চট্টগ্রামকেও লিখিতভাবে জানিয়েছি। বিআরটিএর উচিত, যারা এ ধরনের অনৈতিক ঘটনার সাথে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিএর এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় গতিশীল করতে বিআরটিএর সফটওয়্যার হালনাগাদ করা হয়েছে। এখন এক টিআইএন ব্যবহার করে একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধন করার ঘটনা ধরা পড়ছে। মোট গাড়ির ৫-১০ শতাংশ এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এগুলো এক ধরনের প্রতারণা। তারা জালিয়াতির মাধ্যমে টিআইএন সার্টিফিকেট তৈরি করে বিআরটিএতে জমা দিতেন। জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে টিআইএন হালনাগাদ করা হচ্ছে।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি) তৌহিদুল আলম আজাদীকে বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বিআরটিএর সফটওয়্যারটি আপডেট করা হয়েছে। এতে আগে যারা ভুল করে কিংবা অন্যের টিআইএন নম্বর ব্যবহার করে গাড়ি নিবন্ধন করেছেন, তাদের একাউন্ট ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে। তারা চাইলে নিজস্ব টিআইএন নম্বর ছাড়া গাড়ির ডকুমেন্ট হালনাগাদ করতে পারবেন না। তারপরও একজনের আয়কর অন্যজনকে পরিশোধ করতে হবে না। গ্রাহকরা এ ধরনের সমস্যা পেলে সরাসরি বিআরটিএতে যোগাযোগের অনুরোধ করছি। সাথে সাথে বিষয়টি সংশোধন করে দেওয়া হচ্ছে।
প্রতারণার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে সরকারের রাজস্ব আদায় মুখ্য। সে কারণে প্রথমবারের মতো অনিয়মগুলো সংশোধনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অন্যের টিআইএন ব্যবহার করে যারা গাড়ি নিবন্ধন নিয়েছেন, তারা নিজ উদ্যোগে সংশোধন করে নেবেন। অন্যথায় পরে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটানা তৃতীয় সিরিজ জয়
পরবর্তী নিবন্ধহালদা নয়, পানি চাঁদপুর থেকে