বায়ুদূষণ রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে

| শনিবার , ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদীতে গতকাল ৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে যে, দেশব্যাপি বায়ুমান পরীক্ষা করে বায়ু দূষণের দিক দিয়ে নবম অবস্থানে রয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। গাজীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র-ক্যাপস। গাজীপুরের পর ঢাকা দ্বিতীয় এবং নারায়ণগঞ্জ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বলে উঠে এসেছে তাদের গবেষণায়। তিন জেলার পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কিশোরগঞ্জ। অন্যদিকে দূষণের মাত্রা সবচেয়ে কম ছিল মাদারীপুরে, প্রতি ঘনমিটারে ৪৯ দশমিক শূন্য ৮ মাইক্রোগ্রাম পিএম ২.৫ পাওয়া গেছে সেখানে। মাদারীপুরের পরের অবস্থানে পটুয়াখালী ও মেহেরপুর জেলা।
বায়ু দূষণ এমনভাবে বেড়ে চলেছে, যাকে রোধ করা না গেলে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে আমাদের। বিবিসির একটা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বায়ু দূষণ রোধ করা গেলে মোটামুটি পাঁচটি উপায়ে উপকৃত হবে বাংলাদেশ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে : গড় আয়ু বাড়বে। স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার বলছে, বায়ু দূষণ রোধ করতে পারলে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়বে এক বছর তিন মাসের বেশি। দ্বিতীয়ত, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ু দূষণ রোধ করা গেলে সবচেয়ে বড় যে উপকারটি হবে সেটি হবে ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সহায়তা’। বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রকোপ রোধে বায়ু দূষণ রোধ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয়ত, রোগ সংক্রমণ থেকে রক্ষা : বায়ু দূষণের জন্য মানুষের শরীরে যেসব রোগের সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে, সেগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে যদি দূষণ রোধ করা যায়।
চতুর্থত, প্রতিবন্ধী সমস্যা : প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম নেয়ার সংখ্যা কমে যাবে, তেমনি শিশু ও মানুষের গড় আয়ু বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি প্রজন্ম যদি দীর্ঘসময় ধরে বায়ু দূষণের ভেতর দিয়ে যায়, তাহলে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম অনেক ক্ষতির মুখোমুখি হবে। সেটা কাটিয়ে ওঠা যাবে দূষণ রোধ করতে পারলে। পঞ্চমত, অর্থনৈতিক সুবিধা : বায়ু দূষণ কমানো গেলে একদিকে যেমন মানুষের অসুস্থতা কমবে, গড় আয়ু বাড়বে, সময় সাশ্রয় হবে, পাশাপাশি বেড়ে যাবে জিডিপিও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘নিজেদের আর্থিক সাশ্রয় যেমন হবে, তেমনি জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে।’ দূষণ রোধে কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপের অভাবে বায়ু দূষণের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলে মনে করেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠা, শহরের চারপাশে ইটভাটা, শহরের মধ্যে নানা কারখানা স্থাপন তো বায়ু দূষণের একটি কারণ। সেই সঙ্গে শহরের প্রচুর ধুলা এবং নির্মাণ কাজের বায়ু দূষণ হচ্ছে। ট্রাফিক জ্যামের কারণে গাড়িগুলো রাস্তায় অতিরিক্ত সময় ধরে চলছে, সেগুলো অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ করছে, এসবও বায়ু দূষণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বায়ু দূষণের কারণে পরিবেশ অতিরিক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে, সেই গরম ঠাণ্ডা করার জন্য মানুষ অতিরিক্ত এসি ব্যবহার করছে, আবার তাতে বায়ু দূষণ আরো বাড়ছে। এর জন্য প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাগুলো হলো রাস্তায় পানি দিয়ে ধুলা নিয়ন্ত্রণ বা ময়লাগুলো পুড়িয়ে ফেলার মতো নানা ব্যবস্থা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বায়ুদূষণ রোধে আমাদের কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে, সবার আগে দূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করে দূষণ কমিয়ে আনতে হবে। নগরীর আশপাশের ইটের ভাটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আগুনে পোড়ানো লাল ইটের বিকল্প সিমেন্ট বালুর ব্লক ইটের ব্যবহার বাড়াতে হবে। ইটের ভাটাগুলোতে উন্নত ও দূষণমুক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। সপ্তাহের ভিন্ন দিনে জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলার ব্যবস্থা করতে হবে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সমন্বয়হীনভাবে রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে হবে। সেবাদানকারী সংস্থার সংস্কার কাজে সমন্বয় এনে স্বল্প সময়ে সংস্কার শেষ করতে হব। নির্মাণসামগ্রী উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখা যাবে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে, যাতে করে যেখানে সেখানে নগর বর্জ্য বা কৃষি বর্জ্য উন্মুক্তভাবে পোড়ানো না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। অন্যদিকে প্রচলিত আইনকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে শিক্ষামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। একইসঙ্গে প্রশাসনিক ব্যবস্থার সফল প্রয়োগ একান্তভাবে প্রয়োজন। সর্বোপরি জনগণকে বায়ুদূষণের সামগ্রিক বিষয়ে তথ্যপ্রদান, শিক্ষিতকরণ ও উদ্বুদ্ধকরণ অত্যন্ত জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে