বায়ুদূষণ থেকে রক্ষা পেতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

| শনিবার , ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১১:২৭ অপরাহ্ণ

বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের জনসাধারণের গড়ে সাড়ে ৫ বছর আয়ু কমেছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গড়ে সাড়ে ৫ বছর আয়ু কমেছে বাংলাদেশিদের। আর এর জন্য দায়ী বায়ুদূষণ। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট (ইপিআইসি) প্রকাশিত এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেঙ (একিউএলআই) জানালো এ তথ্য। ওই সূচকে টানা তিন বছরের মতো সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় আছে দিল্লি। তাতে বলা হয়, বায়ুদূষণে ভারতীয়দের ৪০ শতাংশেরই ৯ বছর করে আয়ু কমবে। একিউএলআই আরও জানিয়েছে, সামগ্রিকভাবে বায়ুদূষণ কমানো গেলে বিশ্বের সবার গড় আয়ু অন্তত দুই বছর বেড়ে যাবে (৭২ থেকে ৭৪ হবে)। এ গবেষণায় চীনের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, ২০১১ সাল থেকে দেশটিতে বায়ুদূষণ কমছে। এর ফলও পেতে শুরু করেছে চীনারা। সেখানকার গড় আয়ু প্রায় ২ দশমিক ৬ বছর বেড়েছে। বাতাসে বিষাক্ত কণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার) (পিএম ২.৫)-এর উপস্থিতি পরিমাপ করেই এ গবেষণা চালানো হয়েছে। এ কণা তৈরি হয় মূলত গাড়ির ধোঁয়া জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। বাতাসে এর পরিমাণ কমানো গেলেই বাড়ানো যাবে গড় আয়ু, কমানো যাবে বায়ুদূষণজনিত রোগবালাই।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবেশ ও জীবন একে অপরের পরিপূরক। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে অব্যাহত থাকে জীবনচক্র। তবে মানুষের জীবনচক্রে গৃহপালিত প্রাণির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আবার প্রাণিদেরও বেঁচে থাকতে নির্ভর করতে হয় পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার ওপর। পরিবেশের বিপর্যয় মানে জীবনের বিপর্যয়। প্রাণিস্বাস্থ্য, প্রাণি উৎপাদন ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন একটি আন্তঃসম্পর্কিত জটিল প্রক্রিয়া, যার ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে রোগের প্রাদুর্ভাব, উৎপাদন ব্যবস্থাসহ আরও অনেক কিছু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈরী জলবায়ুর করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বাংলাদেশও। এর পাশাপাশি যোগ হয়েছে পরিবেশদূষণ। দূষণের দোষে দূষিত হয়ে উঠছে চারপাশ। শিল্প বর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য, প্রাণিজ এবং অন্যান্য বর্জ্যসহ বিভিন্ন রাসায়নিক বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্যের ওপর। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গৃহপালিত প্রাণি। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে চারণভূমির অভাবে প্রাণি খাদ্যের অভাব হচ্ছে, তাপজনিত, ভেক্টরবাহিত এবং সংক্রামক রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে প্রাণিসম্পদ উৎপাদন হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। অতিবৃষ্টি, উচ্চতাপমাত্রা এবং খরার ফলে মানুষের অজান্তেই সৃষ্টি হচ্ছে একের পর এক শক্তিশালী ভাইরাস। জলবায়ু পরিবর্তনে বিভিন্ন প্রাণির জটিল ও কঠিন রোগ দেখা দিচ্ছে। পরিবেশের ওপর জলবায়ুর প্রভাবের জন্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত, ভেক্টর প্রভাবিত এবং খাদ্যাভাবজনিত রোগসহ নানা রোগ হয়ে থাকে। নদীর এক কূল ভেঙে গড়ে উঠছে আরেক কূল। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন পরিবেশ, যা অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের জন্য বাসযোগ্য হয়ে ওঠে না। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা জরুরি। প্রকৃতি ও পরিবেশের মাঝেই বিচিত্র জীবনের বিকাশ ঘটে। পরিবেশের জন্যই মানুষ ভাল মন্দ হয়। পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজন শান্তিময় সুস্থ পরিবেশ। বেঁচে থাকার জন্য যে পরিবেশের প্রয়োজন, সে পরিবেশ নানা কারণে জটিল আকার ধারণ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, নগরীতে এমন অনেক উপাদান ও পদ্ধতি বিদ্যমান, যেগুলোর সম্মিলিত প্রতিক্রিয়ায় নগরীর আবহাওয়া ক্রমশ দূষিত হচ্ছে। যে সব উপাদান বা পদ্ধতি পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সংকীর্ণ সড়ক, যানজট, মোটরযানে নিম্নমানের অথবা মবিলমিশ্রিত জ্বালানি ব্যবহার, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পুরনো মোটরযানের অবাধ চলাচল, ঠাসাঠাসি যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা, খোলা ট্রাকে মাটি বালি-আবর্জনা-কয়লা বা সিমেন্ট পরিবহন, পুরনো লক্কড় ঝক্করমার্কা শিল্প কারখানা, শহরের আশেপাশে ইটের ভাটা, খোলা জায়গায় বর্জ্য-আবর্জনা পড়ে থাকা প্রভৃতি। এছাড়া আরও কিছু উপাদান নগরীর বাতাসকে ভারি করে। যেমন : আবর্জনা পোড়ানোর ধোঁয়া, সময়মতো বর্জ্য অপসারণ না করা, অব্যবস্থাপনার কারণে কঠিন বর্জ্য ফেলার স্থাপনাগুলোতে আবর্জনা খোলা অবস্থায় পচতে থাকা, অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি এবং তা থেকে ধুলো ময়লা কাদা সৃষ্টি, খোলা জায়গায় নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা, খোলা পয়ঃপ্রণালী ও নর্দমা, খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ, কাঁচা বাজারের পচনশীল বর্জ্য এবং উন্মুক্ত জায়গায় গরু-ছাগল জবাই-তার থেকে রক্ত যত্রতত্র ছিটিয়ে পড়া। দূষণের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। দূষণ জনিত মৃত্যুতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা বায়ু দূষণের, যা মোট মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। তাই ধূলাবালি থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআসামি সাবেক ডিসি এডিসি পৌর মেয়রসহ ৪০
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের আওয়াজ কি ঢাকা শুনতে পাচ্ছে না