বাড়ছে পরিবারভিত্তিক সংক্রমণ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৩ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

এপ্রিলের শুরুতে করোনায় আক্রান্ত হন নগরীর খুলশী এলাকার ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তিনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। জ্বর ও কাশি দেখা দিলে তিনি নমুনা পরীক্ষা করান। রিপোর্টে তার করোনা পজিটিভ আসে। কয়দিন পর নমুনা পরীক্ষায় তার পরিবারের আরো ৫ জনের শরীরেও করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। যদিও অন্যদের শরীরে তেমন কোন উপসর্গ বা লক্ষণ ছিল না।
দেওয়ান বাজার এলাকার এক পরিবারে প্রথমে দুজনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। দুজনের করোনা পজিটিভ আসার কয়েকদিন পর অন্যদেরও নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। এতে আরো ৬ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। এর মধ্যে কয়েকজনের মৃদু উপসর্গ থাকলেও অন্যদের শরীরে কোন ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ ছিল না। একই ভাবে গত সপ্তাহে প্রথমে নিজে করোনায় আক্রান্ত হন জামালখানের বাসিন্দা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক চাকরিজীবী। পরে নমুনা পরীক্ষায় তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের করোনা পজিটিভ আসে। তিনদিনের মাথায় ওই ব্যক্তির মা-বাবার শরীরেও করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এভাবে একই পরিবারের সবাই কিংবা বেশির ভাগ সদস্য ভাইরাসটির সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। অর্থাৎ একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রেহাই পাচ্ছেন না। সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাসটির সংক্রমণের মাত্রা ও তীব্রতা বাড়ার কারণে এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তাই পরিবারের কারও শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়া মাত্র নমুনা পরীক্ষার পাশাপাশি তাকে আলাদা করে (আইসোলেশনে) রাখার পরামর্শ চিকিৎসকদের। চিকিৎসকরা বলছেন- পরিবারের অন্য সদস্যদের যাতে ভাইরাসটি সংক্রমিত না করতে পারে, সে জন্য সতর্কতা হিসেবে কারও উপসর্গ দৃশ্যমান হওয়া মাত্রই তাকে আলাদা রাখতে হবে। বাসার একটি কক্ষে তিনি সম্পূর্ণ আলাদা থাকবেন। ওই কক্ষেই তার খাওয়া-দাওয়া থেকে সব হবে। মোটকথা তিনি ওই কক্ষ থেকে বের হবেন না। অন্যরাও পারতপক্ষে ওই কক্ষে যাবেন না। সংক্রমণ থেকে পরিবারের অন্য সদস্যদের রক্ষা করতে হলে এটুকু অবশ্যই মানতে হবে। অন্যথা একজন আক্রান্ত হলেই পরিবারের সকলের সংক্রমিত হবার ঝুঁকি থেকেই যায়।
একই সাথে পরিবারের একাধিক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন জানিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. আবদুর রব মাসুম আজাদীকে বলেন, এখন একই সঙ্গে পরিবারের অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। আগে হয়তো কেউ একজন আক্রান্ত হলেও পরিবারের অনেকে সংক্রমিত হননি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন ঘরের একজন আক্রান্ত হলেই বাকিদেরও সংক্রমণ ধরা পড়ছে। ভাইরাসের সংক্রমণের তীব্রতা বাড়ায় এমনটি হচ্ছে। অর্থাৎ বর্তমানে ভাইরাসটি একজন থেকে অন্য জনে খুব দ্রুত সংক্রমিত করছে।
প্রথম দিকের ভাইরাসের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ের এ ভাইরাসে ভিন্নতা রয়েছে বলে মনে করেন বিআইটিআইডি হাসপাতালের করোনা টিমের ফোকাল পারসন ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন- ২০২১ সালে যে ভাইরাসটি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তা ভাইরাসটির নতুন একটি ধরণ (ভ্যারিয়েন্ট)। আগের ভাইরাসের তুলনায় নতুন ধরণের এই ভাইরাসের সংক্রমণের তীব্রতা তুলনামূলক বেশি। যার কারণে একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের অন্যদেরও দ্রুত সংক্রমিত করছে। দেখা যাচ্ছে- যথেষ্ট সচেতন ও সতর্ক থাকা সত্ত্বেও পরিবারের অন্যরা রেহাই পাচ্ছেন না।
এবার (দ্বিতীয় ঢেউয়ে) আক্রান্তের শুরুতেই ভাইরাসটি রোগীর ফুসফুসে সংক্রমিত (ইনফেকশন) করছে জানিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, আগে কিন্তু আক্রান্তের দ্বিতীয় সপ্তাহে রোগীর ফুসফুসে ইনফেকশন পাওয়া যেত। অর্থাৎ রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা যেত একটু দেরিতে। কিন্তু এখন আক্রান্তের ২ থেকে ৩ দিনের মাথায় রোগীর ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ছে এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। এটি খারাপ একটি দিক। যার কারণে সচেতনতার পাশাপাশি সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে, পরিবারে একই সাথে অনেকে আক্রান্ত হলেও আক্রান্তদের বেশির ভাগই ঘরে বসেই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলছেন। তবে হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে কারও কারও। বিশেষ করে বয়স্ক ও শরীরে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য জটিলতা থাকা আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত
পরবর্তী নিবন্ধকরোনার রিপোর্টে বিভ্রান্তি