বাড়ছে কন্টেনার পরিবহন

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২২ আগস্ট, ২০২২ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম-ইউরোপ রুটে কন্টেনার পরিবহন বাড়ছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কার বন্দরের ঝামেলার কারণে জনপ্রিয় হচ্ছে সরাসরি সার্ভিস। গত তিন মাসে চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ১২ হাজার টিইইউএস রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার সরাসরি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে। তবে ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টগুলোর সংকট ঘুচে গেলে এই সার্ভিস টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রে জানা যায়, দেশের তৈরি পোশাকের বড় আমদানিকারক দেশ হচ্ছে ইউরোপ। চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ইউরোপে পণ্য পাঠানো যেত না। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই কন্টেনার নিয়ে জাহাজ প্রথমে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা বা মালয়েশিয়ায় যায়। ওখানকার ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট থেকে এসব কন্টেনার ইউরোপ, আমেরিকাগামী বড় বড় মাদার ভ্যাসেলে বোঝাই করা হয়। বিশ্বব্যাপী জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতা তৈরি হওয়ায় সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও পোর্ট কেলাং বন্দরে গত কয়েক মাস ধরে বড় জট চলছে।
জটের কারণে চট্টগ্রাম থেকে কন্টেনার নিয়ে উপরোক্ত তিনটি ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে গিয়ে ইউরোপগামী জাহাজে স্থান পেতে বেগ পেতে হচ্ছিল। একেকটি মাদার ভ্যাসেলকে গড়ে ১০-১৫ দিনের জটলায় পড়তে হচ্ছিল। এই অবস্থায় স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম থেকে ২২-২৩ দিনে যেসব কন্টেনার ইউরোপে পৌঁছাত, সেগুলোতে গড়ে ৪৫-৫০ দিন সময় লাগছিল। এতে ইউরোপের আমদানিকারকদের ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকট দেখা দেয়।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ইউরোপের বড় বড় কয়েকটি তৈরি পোশাক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান একাধিক ফ্রেইট ফরোয়ার্ডস প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় চট্টগ্রাম-ইউরোপ সরাসরি শিপিং লাইন চালু করার উদ্যোগ নেয়। শুরুতে চট্টগ্রাম থেকে ইতালির একটি রুটের সূচনা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইতালির রাভেনা বন্দরে জাহাজ চলাচল শুরু করার পর ইউরোপের অনেক আমদানিকারকের শেষ রক্ষা হয়। এতে ১৮ দিনে চট্টগ্রাম থেকে ইতালিতে পণ্য বোঝাই কন্টেনার পৌঁছাতে শুরু করল। এর আগে সময় লাগছিল প্রায় ৫০ দিন।
চট্টগ্রামের রিলায়েন্স শিপিং এই লাইনটি পরিচালনা করছে। রিলায়েন্স শিপিংয়ের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাশেদ জানান, ইতোমধ্যে এই রুটে দশ হাজার টিইইউএসের বেশি কন্টেনার পরিবহন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ইতালিতে নিয়মিত পণ্য পরিবাহিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে চট্টগ্রাম থেকে নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম ও ইংল্যান্ডের লিভারপুল রুটে পণ্য পরিবহনের বিষয়টি দেখভাল করে ফনিঙ শিপিং। অপেক্ষাকৃত ছোট জাহাজ দিয়ে এই লাইনটি পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আগে সময় লাগত ৪৫-৫০ দিন। এখন ২৩ দিনে পণ্য যাচ্ছে। মাস তিনেকের মধ্যে এই রুটে দুই হাজার টিইইউএস কন্টেনার পরিবাহিত হয়েছে বলে জানান ফনিঙ শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যাপ্টেন সৈয়দ সোহেল হাসনাত। তিনি বলেন, ২২ মে থেকে আমরা ইউরোপে সরাসরি জাহাজ পরিচালনার কার্যক্রম শুরু করি। ইতোমধ্যে ২ হাজার টিইইউএস কন্টেনার পাঠিয়েছি। আমাদের টার্গেট ছিল মাসে তিনটি জাহাজ পরিচালনা করা। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে তা হচ্ছে না। গতকাল একটি জাহাজ ৪শ টিইইউএস কন্টেনার নিয়ে যাত্রা করেছে। ২৯ তারিখ আরো একটি জাহাজ আসবে। প্রতি মাসে চট্টগ্রাম থেকে দুটি ট্রিপ দেয়া সম্ভব হলে সবার জন্য সুবিধা হতো।
চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ইউরোপ নৌ রুট বাণিজ্যিকভাবে সফল রুট হওয়ার সম্ভাবনা আছে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু জাহাজ ভাড়া নয়, এই ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে সময়টা বড় ফ্যাক্টর। পণ্য পরিবহনের সময়কাল অর্ধেকে নেমে আসার বিষয়টি রপ্তানি বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ১৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি
পরবর্তী নিবন্ধসপ্তাহের ব্যবধানে ডলারের দাম কমল চার টাকা