বাহারছড়ায় বেড়িবাঁধ কেটে মাছের ঘের নির্মাণের অভিযোগ, উত্তেজনা

বাঁশখালী প্রতিনিধি | সোমবার , ২২ মার্চ, ২০২১ at ৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নে পাউবো’র বেড়িবাঁধ ও জলকদর খালের বাঁধ কেটে মাছের ঘের নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে দু’পক্ষে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জলকদর খালে প্রায় ৫শ জনের মত অবৈধ দখলদার রয়েছে। তার অধিকাংশ বাঁশখালীর বাহারছড়া, শেখেরখীল, কাথরিয়া ও গণ্ডামারা এলাকায়। এদিকে গতকাল বিকেলে জলকদর খালের বাঁধ কেটে এবং বাহারছড়া ইউনিয়নের বাঁশখালা গ্রামে পাউবোর সরকারি জমির সাথে অন্যের জমি জবর দখলের সময় দু’পক্ষে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে খবর পেয়ে বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজুল ইসলাম ও বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা এস আই মুজিবুর রহমান দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত হন। এসময় সরকারি জায়গা দখলকারীর লোকজন এবং এস্কেভেটর রেখে চালকও পালিয়ে যায়।
পুলিশ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাহারছড়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাঁশখালা গ্রামে জলকদর খালের কিনারে ১৯৯১ সালের ঘর্ূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয় লোকজনদেরকে ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। এই বেড়িবাঁধের ভিতরে স্থানীয় মতিউর রহমানের ছেলে ছাবের আহমদ ও আমির হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ, রফিক আহমদ, জাফর আহমদ, জাকের আহমদ, আজিজ আহমদের মালিকানাধীন জমিসহ সরকারি ৩ একর জমি রয়েছে। বেড়িবাঁধের ভিতরে সরকারি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমির উপর উপকূলীয় বন বিভাগ গাছের চারা রোপণ করেছে। এলাকায় জমির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় কতিপয় ভূমিদস্যু সরকারি জায়গার উপর রোপিত গাছ কর্তনসহ ৩ একর জায়গা দখলে নিয়ে মাছের ঘের তৈরির কাজ শুরু করে। এই নিয়ে এলাকায় সচেতন মহল প্রতিবাদ জানালে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে।
ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গার মালিক দাবিকারী আবদুল আজিজ ও মোহাম্মদ হারুন জানান, বেড়িবাঁধের ভিতর অংশে সরকারিভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড অধিগ্রহণ করলেও খতিয়ানে আমাদের জায়গা রয়েছে। এই জায়গার উপর কতিপয় ভূমিদস্যুর নজর পড়েছে। তারা জোরপূর্বক রাতের অন্ধকারে এস্কেভেটর দিয়ে মাছের ঘের তৈরির চেষ্টা চালায়। সরকারি জায়গা দখলে নিয়ে মাছের ঘের ও গাছ কাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে মাওলানা জাকের আহমদ নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান।
বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা এস.আই মুজিবুর রহমান বলেন, এলাকায় উত্তেজনার খবর পেয়ে এলাকা পরিদর্শনে এসেছি। জায়গা যেহেতু পানি উন্নয়ন বোর্ডের তারা যদি অবৈধ দখল উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেয় তাহলে আমরা সহযোগিতা করব। আর সরকারি জায়গায় দখল করে মাছের ঘের তৈরি অবৈধ।

বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি জায়গায় কোনো অবস্থাতেই জবর দখল করা যাবে না। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধটির অংশ কেটে মাছের ঘের তৈরি করা হচ্ছে। এলাকার জনগণ বাধা দিলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জোরপূর্বক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ জনগণের জন্য বেড়িবাঁধ ও বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে, সেগুলো কেটে এ ধরনের কাজ কোনো অবস্থায় শোভনীয় নয়। তিনি প্রশাসনকে এ ব্যাপারে অবহিত করবেন বলে জানান ।
বাঁশখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা বলেন, বাহারছড়ায় পাউবো’র জায়গা দখলে নেয়ার ঘটনায় স্থানীয়ভাবে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। পানি উন্নয়নের জায়গা কোনো অবস্থাতে মাছের ঘের করা যাবে না। জলকদর খালের কিনারে বেড়িবাঁধ তৈরি হয়েছে ঝড় ও জলোচ্ছাস থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য। তিনি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নিয়ে অচিরেই জলকদর খালের অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবারও বোর্ড কর্তাদের নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য সাকিবের
পরবর্তী নিবন্ধচুয়েট শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার