বাস খাদে, ১৯ মৃত্যু

মাদারীপুরের দুর্ঘটনা অনুমোদনহীন সেই গাড়িটি আগেও ঘটিয়েছিল দুর্ঘটনা

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ২০ মার্চ, ২০২৩ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

মাদারীপুরের শিবচরে বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে যে ১৮ জনের পরিচয় জানা গেছে তাদের মধ্যে ৯ জনই গোপালগঞ্জের। এছাড়া খুলনার আছেন চারজন, বাকিরা বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা।

গতকাল রোববার সকাল পৌনে ৮টার দিকে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় রেলিং ভেঙে খাদে পড়া ইমাদ পরিবহনের বাসটি খুলনা থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল। খুলনা থেকে অল্প কিছু যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসা বাসটির অধিকাংশ যাত্রী গোপালগঞ্জ থেকে উঠেছিলেন বলে জানা গেছে।

এদিকে এক্সপ্রেসওয়েতে যে বাস দুর্ঘটনায় ১৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, ইমাদ পরিবহনের সেই গাড়িটি এর আগেও দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিল। সেই কারণে তার রুট পারমিট স্থগিত ছিল বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। শুধু তাই নয়, বাসটির ফিটনেসের মেয়াদও শেষ হয়েছিল দুই মাস আগে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী, বাসটির সড়কে ছিল অননুমোদিত। খবর বিডিনিউজের।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিবুল ইসলাম জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে ১৭ জনের মরদেহ শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা ছিল। তাদের মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। একজনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। তাদের মধ্যে গোপালগঞ্জের বাসিন্দারা হলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক ও সদর উপজেলার শান্তি রঞ্জনের ছেলে অনাদী রঞ্জন মজুমদার (৫৩), শহরের পাঁচুড়িয়া এলাকার সামচুল হক রোডের মাসুদ আলমের মেয়ে সুরভী আলম সুইটি (২২), ব্যাংকপাড়ার বাসিন্দা আবু হেনা মোস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি (২০), সদর উপজেলার ছুটকা গ্রামের নশর আলী শেখের ছেলে সবজি শেখ, একই উপজেলার পাঁচুড়িয়া গ্রামের মো. মাসুদের মেয়ে সুইটি আক্তার (২২), বনগ্রামের সামসুদ্দিন শেখের ছেলে মোস্তাক শেখ (৪০), গোপীনাথপুর গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে হেদায়েত মিয়া বাহার (৪২), টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কাঞ্চন শেখের ছেলে মো. কবির শেখ, মুকসুদপুর উপজেলার আদমপুর গ্রামের আমজাদ আলীর খানের ছেলে মাসুদ খান (৩০)। আরেকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন।

খুলনা জেলার নিহতরা হলেন সোনাডাঙার শেখ আহমেদ আলী খানের ছেলে শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪২), চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের ছেলে চিন্ময় প্রসন্ন মণ্ডল, ডুমুরিয়া উপজেলার পরিমল সাধুর ছেলে মহাদেব কুমার সাধু, টুটপাড়ার শাজাহান মোল্লার ছেলে আশরাফুল আলম লিংকন। এছাড়া দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিতোডাঙ্গা গ্রামের সৈয়দ মুরাদ আলীর ছেলে মো. ইসমাইল (৩৮), নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার কালনা গ্রামের বকু সিকদারের ছেলে ফরহাদ সিকদার (৩০), সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সখীপুর গ্রামের আমজেদ আলী সরদারের ছেলে রাশেদ সরদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের আলী আকবরের ছেলে জাহিদ। পরিচয় নিশ্চিত হওয়াদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান ইউএনও রাজিবুল ইসলাম।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, শিবচরের দুর্ঘটনায় নিহত দুজন হলেন ইমাদ পরিবহনের বাসটির সুপারভাইজার মিনহাজুর রহমান বিশ্বাস (২৫) এবং বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষক শেখ আলী আকবর (৭৫)

স্বামীর পাঠানো ভিসায় সৌদি যেতে পারবেন ঝুমা? : রোজার শুরুতে সৌদি প্রবাসী স্বামীর কাছে যাবেন বলে দেবরকে সঙ্গে নিয়ে কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসছিলেন ঝুমা বেগম। এক দুর্ঘটনায় থমকে গেছে তার জীবন, তার স্বপ্ন।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর সৌদি প্রবাসী আমিনুল ইসলামের স্ত্রী ঝুমা বেগম চার সন্তানের জননী। ঢাকায় আসার জন্য ইমাদ পরিবহনের যে বাসে তিনি চড়েছিলেন, গতকাল সকালে মাদারীপুরের শিবচরে বঙ্গবন্ধু এঙপ্রেসওয়ের রেলিং ভেঙে সেটি খাদে পড়ে যায়। ঝুমার দেবর মো. সজীবসহ (২৫) এ পর্যন্ত মোট ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এ ঘটনায়। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। ঝুমার পা ভেঙে গেছে; মাথা ও কোমরে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। এখন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। ৩৪ বছর বয়সী এই নারী কোনোদিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন কিনা তা চিকিৎসকরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। পুলিশ ও যাত্রীদের কেউ কেউ বলেছেন, বাসটি চালানো হচ্ছিল অনেক বেশি গতিতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম ও সিলেট বন্দর ব্যবহারে ভারতকে প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর
পরবর্তী নিবন্ধঅপারেশন সার্চ লাইটের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন জেনারেল ইয়াহিয়া