বাস্তবায়নে দরকার সর্বোচ্চ সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা

মুদ্রানীতি ঘোষণা | বৃহস্পতিবার , ২২ জুন, ২০২৩ at ৯:১৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩২৪ অর্থবছরে ছয়মাস মেয়াদী মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। মুদ্রানীতিতে ৯% সর্বোচ্চ সুদসীমা উঠিয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে সুদের সর্বোচ্চ হার দাঁড়াবে ১১.%। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে সুদহার ছয়মাস মেয়াদী ট্রেজারী বিলের সাথে সমন্বয় করে বাজারভিত্তিক করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৮.% সুদে ধার নিতে পারবে ব্যাংক। এজন্য রেপো ও বিডার্স রেপোর সুদহারও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ডলারের একক বিনিময় হার নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছে রিজার্ভের হিসাবয়নে আইএমএফ’র প্রেসক্রিপশন অনুসরণ করা হয়েছে।

এক নজরে যেটা বলা যায়আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদহার ১১% থেকে ১২%, রেপো (যে সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ধার দেয়) সুদ ৬% থেকে ৬.৫০%, বিডার্স রেপো ৪.২৫% থেকে ৪.৫০%। মুদ্রানীতির আলোচ্য বিষয় আইএমএফ এর শর্ত মেনে এটা করা হয়েছে। নীতি সুদহার করিডর প্রথা চালু। এর মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ব্যাংকের টাকা ধারের সুদ নির্ধারণ করা হবে। অপরদিকে এসএমই ও ভোক্তা ঋণের সুদহার হবে ১% বেশি সরকারী নীতির ঋণ প্রবাহের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৪৩%

মুখ্য সমস্যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। গত অর্থ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। গত মে মাসেও মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৯৪%, যা গত বছরে রেকর্ড। অবশ্য সবদেশেই মূল্যস্ফীতি চলছে। একই কারণে বেকারত্ব ও মন্দার ঝুঁকিতে পড়বে ব্রিটেন।

গভর্নর ও প্রধান অর্থনীতিবিদ বলছেনআমরা চাই ঋণের সুদের হার বাড়ুক। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর ধার নেবে না। সরকারের ঋণ গ্রহণ প্রক্রিয়াও খরচবহুল হোক। তাহলে বাজারে টাকা কম সঙ্কুলান হবে। আবার সরকারের সাপ্লাইচেইন অক্ষুণ্ন থাকবে।

তারা আরো বলছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দেবে। এটি খারাপ কিছু নয়। দুনিয়ায় সব দেশে এটা চালু আছে। চলতি বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই বিলবন্ড কিনে নেয়ার মাধ্যমে সরকারকে ৭০৭৫ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করেছে। বাজারে তারল্য সংকটের কারণে এটি করা হয়েছে। আগামী ছয়মাসেও তারা তা করবে। গভর্নর বলছেন সরকার চলতি অর্থবছরে বাজারে ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এ কারণে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা উঠে এসেছে। সেজন্য তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট বলছেন২০২১ বছরে রেকর্ড ৩৩.২৫ বিলিয়ন বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়। চলতি বছরে এটা ১৭.৪২ বিলিয়নে নেমে আসবে। ২৩২৪এ ঘাটতি ১৭.৭৬ বিলিয়ন ডলার থাকবে। চলতি অর্থ বছরে ব্যালেন্স আর পেমেন্টের ঘাটতি ৮.% বিলিয়ন ডলার হবে। আগামী অর্থ বছরে ১.% বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত থাকবে বলে ফোকার্স করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যখন মুদ্রানীতি ঘোষণা করছে তখন থিংকট্যাং সিপিডি বাজেটের তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা বলছে “অর্থনীতির নীতি এখন সুবিধাভোগীদের জন্য”। মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদহার কিছুটা বাড়লেও, এই নীতি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে’। মুদ্রানীতির মূল বার্তাটি হচ্ছেপ্রাইভেট সেক্টরে নিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। কর্মসংস্থান কমে যাবে। মূল্যস্ফীতি, মধ্যবিত্ত শ্রেণির পড়তির দিকে যাবে। এটা কোনোমতেই হেলদি নয়।

আমরা আশা করবো নির্বাচন সামনে রেখে মেগাপ্রকল্প না নিয়ে, দুর্নীতি লুট বন্ধ করে সরকার বাজেট ও মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ সদিচ্ছায় সচেষ্ট হোক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে