বাসের ভেতর গৃহবধূকে দল বেঁধে ধর্ষণ

দিনেদুপুরে অক্সিজেন এলাকায় ঘটনা, চালক ও সহকারীসহ গ্রেপ্তার ৩

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২১ জুন, ২০২২ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে একটি বাসের ভিতরে দলবেঁধে এক তরুণী গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে বাসটির চালক, সহকারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠালে আদালত তাদের প্রত্যেকেরই তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। গত রোববার দুপুরে অক্সিজেন এলাকার কেডিএসএস গার্মেন্টসের বিপরীতে রেল লাইনের পাশের রাস্তায় পার্কিং করা বাসে দলবেঁধে ধর্ষণের ওই ঘটনা ঘটে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হল বাঁশখালীর থানার বাণীগ্রাম গুচ্ছগ্রাম এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে চালক নুরুল আলম (৩২), ভূজপুর থানার দাঁতমারা ইউনিয়নের নতুনপাড়া মোখলেছুর রহমানের ছেলে চালকের সহকারী রবিউল হক (২৪) ও একই থানার উত্তর জুসখোলা মহানগর ইব্রাহিম চেয়ারম্যানের বাড়ির আবুল কালামের ছেলে অন্য বাসের সহকারী মো. শাহজাহান (২২)।

পুলিশ এবং আদালত সূত্র জানিয়েছে, নগরীর ডবলমুরিং থানা এলাকায় এক তরুণী গৃহবধূ স্বামীসহ ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তরুণীর হালকা মানসিক সমস্যা রয়েছে। গত কয়েকদিন আগে দেওয়ানহাটে একটি জুতার দোকানে স্বামীসহ গিয়ে জুতা কেনার জন্য দোকানদারকে ৩শ টাকা অগ্রিম দিয়ে আসেন। গত ১৮ জুন ওই তরুণী তার স্বামীসহ জুতার দোকানটিতে যায়। জুতা কেনাকাটা এবং অগ্রিম দেয়া নিয়ে ওই সময় দোকানের লোকজনের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দোকানদার ও তার লোকজন গৃহবধূ ও স্বামীকে মারধর করে দোকান থেকে বের করে দেয়। তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নেন। স্বামী এবং তাকে মারধর করার ঘটনার ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ওইদিন বিকেলে ওই তরুণী স্বামীকে নিয়ে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন ছিন্নমূল ১ নম্বর সমাজে বসবাসরত চাচার বাসায় গিয়ে রাতে থাকেন। পরদিন বেলা ১১টা নাগাদ কাউকে কিছু না বলে তরুণী চাচার বাসা থেকে বের হয়ে যান। তিনি আদালত ভবনে গিয়ে মামলা করার জন্য রাস্তায় নামেন। ওই সময় ছিন্নমূলের সামনে একটি রিকশাওয়ালার কাছে তিনি আদালত ভবনে যাওয়ার কথা বললে রিকশাওয়ালা বলেন যে, তার পক্ষে এতদূর যাওয়া সম্ভব হবে না। তিনি বুদ্ধি দেন যে, তার রিকশায় চড়ে অক্সিজেন পর্যন্ত গেলে ওখান থেকে বাসে চড়ে তিনি আদালতে যেতে পারবেন। তরুণী ওই রিকশাওয়ালার সঙ্গে অক্সিজেন যান। সেখানে রিকশা থেকে নামার আগে তিনি রেললাইনের পাশে একটি বাস দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পান। বাসের সহকারী তখন যাত্রী নেয়ার তোড়জোড় করছিল। রিকশাওয়ালাকে বিদায় দিয়ে ওই তরুণী তখন বাসের সহকারীকে আদালতে যাওয়া যাবে কিনা জিজ্ঞেস করলে সহকারী জানায় যে এই বাস আদালতেই যাবে। ওই সহকারী তরুণীকে বাসে তুলে নেয়। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ তরুণী যখন বাসে চড়েন তখন তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল। বাসের সহকারী চালকের সঙ্গে চোখের ইশারায় কথা বলে বাসের দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে তরুণীকে বাসের সিটের উপরই ধর্ষণ করে। একে একে তিনজন ধর্ষণ করার পর তরুণীর আচার-আচরণে তারা মনে করে যে মাথায় গোলমাল যেহেতু আছে তাই আর কোনো সমস্যা নেই। বৃষ্টি কমে আসলে তারা তরুণীকে বাস থেকে নামিয়ে দেয়।

তরুণীর কথা-বার্তায় হালকা মানসিক প্রতিবন্ধিতা থাকলেও জ্ঞানবুদ্ধি বেশ টনটনে বলে মন্তব্য করে পুলিশ জানিয়েছে, বাস থেকে নামিয়ে দেয়ার পর তরুণী অঙিজেন মোড়ের ট্রাফিক পুলিশ বঙে চলে যায়। ওখানে অবস্থানরত টিআই এবং সার্জেন্টকে ঘটনা বলে। কিন্তু পুলিশ বাসের ভিতরে এমন একটি ঘটনা ঘটার বিষয়টি শুরুতে বিশ্বাস করেনি। কিন্তু তরুণীর দৃঢ়তায় এক সার্জেন্ট এবং কনস্টেবল তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাসটির খোঁজে যান।

পুলিশ জানিয়েছে, তরুণীকে বাস থেকে নামিয়ে দেয়ার পর চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটের বাসটি (চট্টমেট্রো-জ-১১-০১৬৯) যাত্রী নিয়ে ফটিকছড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই সময় পুলিশ এবং ওই তরুণী বাসটির কাছে গেলে সহকারী মোহাম্মদ শাহজাহানকে দরজায় দেখতে পায়। তরুণী সহকারীকে ধর্ষক হিসেবে শনাক্ত করে পুলিশকে জানান যে, এও তাকে নির্যাতন করেছে। পুলিশ তাকে ধরার সঙ্গে সঙ্গে বাসের চালক এবং অপরজন গাড়ি থেকে নেমে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি কামরুজ্জামানকে ঘটনাটি জানানো হয়। ওসি নিজে উপস্থিত হয়ে ভিকটিম এবং গ্রেপ্তার সহকারীকে থানায় নিয়ে আসেন। ঘটনার ব্যাপারে একটি মামলা রুজু করা হয়। পরবর্তীতে শাহজাহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত ঘটনা বের করা হয়। পরে পুলিশ রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ চালক নূরুল আলমকে হাটহাজারী বাস স্ট্যান্ড এলাকায় ও রবিউল হককে ফটিকছড়ি থেকে রাত দেড়টা নাগাদ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। বাসটির সুপারভাইজার খাগড়াছড়ি মাটিরাঙার রাজু পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি অভিযান চলছে বলেও বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান।

এর আগে গত ১৯ মে রাতে নগরীর বাকলিয়া থানার রাহাত্তারপুল এলাকায় সড়ক থেকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় এক তরুণীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। ওই তরুণী কীভাবে বাস থেকে পড়ে গেলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। কেউ বলছিলেন, তাকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আবার কেউ বলছিলেন, তিনি বাস থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। পাঁচ দিন পর ২৬ মে ওই তরুণীর চেতনা ফেরার পর পুলিশ তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে, ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে তিনি বাস থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যান। ওই ঘটনায় বাসটির চালক ও সহকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় নিখোঁজ ২ ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধ৬০ বছর বয়সের পর লোকজন পেনশন পাবেন