বাসের ভাড়া বৃদ্ধি : চরম চাপের মধ্যে জনসাধারণ

| মঙ্গলবার , ৯ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

ডিজেলচালিত দূরপাল্লার বাস ও নগর পরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে নতুন করে ভাড়া নির্ধারণের পর দেশের বিভিন্ন অংশে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও পরিবহন মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তেলের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার রাজধানীর বিআরটিএ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাসের ভাড়া পুনর্নির্ধারণের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে সড়ক মহাসড়কে বাস চলাচল শুরু হয়। ওই বৈঠকের পর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ সারা দেশে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট তুলে নিয়ে বাস চালানোর আহ্বান জানান। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৪২ পয়সা থেকে বেড়ে এক টাকা ৮০ পয়সা হয়েছে। মহানগরে বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে দুই টাকা ১৫ পয়সা।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর সবার সঙ্গে আলোচনা করে বাস ও লঞ্চের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। কিন্তু বরাবরের মতো পরিবহন মালিকদের সুবিধা দিতে যাত্রী প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে মালিকদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ভাড়া বৃদ্ধির পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ অভিযোগ করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার অবৈধভাবে এক লাফে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ২৩ শতাংশ বাড়িয়েছে। এই অজুহাতে বাস-ট্রাক ও লঞ্চের মালিকেরা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে পরিবহন ধর্মঘটের নামে জনগণকে জিম্মি করে ডিজেল চালিত যানবাহনের পাশাপাশি সিএনজি, অকটেন ও পেট্রোল চালিতসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। আর বাস ও লঞ্চ মালিকদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে সরকার তাদের চাহিদা অনুযায়ী একচেটিয়া ভাড়া বাড়িয়ে দিতে যাত্রী প্রতিনিধি বাদ দিয়ে বাস ও লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধির আয়োজন করেছে।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যাত্রীর স্বার্থ বিকিয়ে গলাকাটা ভাড়া নির্ধারণ করা হলে দেশের সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে নিয়েই তা প্রতিহত করা হবে। এখানে উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় জ্বালানি মন্ত্রণালয়। লিটারে দাম বাড়ে ১৫ টাকা। রাতেই তা কার্যকর হয়। এর ফলে ডিজেল ও কেরোসিন তেলের নতুন দর হয় প্রতি লিটার ৮০ টাকা, যা আগে ছিল ৬৫ টাকা। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর পর বাসভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শুক্রবার থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পণ্যবাহী যান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন মালিক ও শ্রমিকরা। গত চার দিনের অঘোষিত এই পরিবহন ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়ে দেশ। ঘর থেকে যারা বের হয়েছেন, তারা সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন। পথে পথে ছিল দুর্ভোগ। শিশু ও বয়স্কদের পড়তে হয় সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়। ভর্তি ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা পড়েন আরও বিপাকে। কয়েক গুণ ভাড়া দিয়ে বিকল্প উপায়ে তারা কেন্দ্রে পৌঁছেন।
যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী মানুষ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সড়কে বাস না পেয়ে অফিসগামীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, লেগুনা চলাচল করলেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কমল। এ সুযোগে এসব যানবাহনে নেওয়া হয় বেশি ভাড়া। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছেন যাত্রীরা।এ বিষয়ে যাত্রীদের পক্ষে বলা হয়েছে, দায়িত্বশীলতা নেই বলেই এমন তুঘলকি কারবার করা হচ্ছে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। জনগণকে মহাবিপদের দিকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বলছেন, বাস ভাড়া বৃদ্ধির অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত মানা যায় না। করোনা সংকটে জনগণ এমনিতেই বিপর্যস্ত। এই সংকটকালে বাস ভাড়া বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের প্রতি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র শামিল। এ সময়ে ভাড়া বাড়ানো সম্পূর্ণ অন্যায়, অযৌক্তিক ও জনগণের সাথে এক নির্মম তামাশা ছাড়া কিছুই না।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সড়কে চাঁদাবাজির বন্ধের পদক্ষেপ না নিয়ে, জ্বালানি তেলের মূল্য না কমিয়ে, বাস ভাড়া বৃদ্ধি করে জনগণকে চরম চাপের মধ্যে ফেলা হচ্ছে। গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে যাত্রী হয়রানি আরও বৃদ্ধির সুযোগ তৈরী করে দেয়া হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তাঁরা। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি জনজীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে যেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তেমনি ভোগান্তির শিকার হবে যাত্রী সাধারণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে