রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভের সুনির্দিষ্ট কয়েকটি নিশানায় হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে অধিবাসীদের সতর্ক করার পরই গতকাল মঙ্গলবার নগরীর কেন্দ্রস্থলে একটি টিভি টাওয়ারে রকেট হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেইন সরকারের জরুরি সেবা বিভাগ টিভিতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামলায় কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছে। এর আগে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় কিয়েভে হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে অধিবাসীদের সতর্ক করেছে এবং এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। মঙ্গলবার বিকালে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, রুশ বাহিনী কিয়েভে ইউক্রেনের সিকিউরিটি সার্ভিসের (এসবিইউ) প্রযুক্তি কেন্দ্রগুলো এবং প্রধান সাই-অপস সেন্টারকে (সেন্টার ফর ইনফরমেশন এন্ড সাইকোলোজিক্যাল অপারেশনস) নিশানা করে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ‘নির্ভুলভাবে লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম’ অস্ত্র দিয়ে ওইসব নিশানায় হামলা চালানো হবে জানিয়ে কাছাকাছি এলাকাগুলো থেকে অধিবাসীদেরকে সরে যেতে বলা হয় বিবৃতিতে। কিয়েভের টেলিভিশন টাওয়ারটিতে হামলার পর টাওয়ারটির কাছে ঘন কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। তবে টাওয়ারের ওপর কোনও গোলা পড়েছে কিনা তা এখনও পরিষ্কার জানা যায়নি। ৩৮০ মিটার লম্বা (১২৫০ ফুট) টাওয়ারটি এখনও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। খবর বিডিনিউজের।
ইউক্রেইনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলেছে, বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কিছু সময়ের জন্য চ্যানেলগুলো বন্ধ থাকবে। সোশ্যাল মিডিয়ার ফুটেজে দেখা গেছে, টিভি টাওয়ারস্থলে বিস্ফোরণ হয়েছে। ফুটেজটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রচারণা বন্ধ করতেই এই হামলা শুরু করছেন তারা। মঙ্গলবারেই কিয়েভের দিকে এগুতে শুরু করেছে রাশিয়ার প্রায় ৪০ মাইল লম্বা একটি সাঁজোয়া বহর। সেই বহরের ছবি ধরা পড়েছে উপগ্রহচিত্রে। সেনাসদস্যর সঙ্গে ট্যাংক, সাঁজোয়া গাড়িও আছে এই বহরে। স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, বহরটি উত্তর দিক থেকে কিয়েভে এগুচ্ছে। এই ছবি প্রকাশ্যে আসার পরই কিয়েভ-সংলগ্ন এলাকায় বোমা ফেলা শুরু করেছে রাশিয়া।
রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ করছে: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রাশিয়ার বোমাবর্ষণকে যুদ্ধাপরাধ বলে বর্ণনা করেছেন। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ করছে। রাশিয়া বাহিনী খুব নির্মমভাবে খারকিভকে কামানের গোলার নিশানা করেছে। এটি একটি শান্তিপূর্ণ স্থান, শান্তিপূর্ণ শহরতলী। রুশরা জানে তারা কোথায় গোলাবর্ষণ করছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টসহ দেশটির স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তারা এমনকী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাও বলছে, আবাসিক এলাকায় হামলার ঘটনা তদন্ত করে দেখা দরকার।
জেলেনস্কি বলেছেন, একটি রাষ্ট্র, যারা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়ে যুদ্ধাপরাধ করে তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হতে পারে না।
রাশিয়া এর আগে আবাসিক এলাকাগুলোকে হামলার নিশানা করার কথা অস্বীকার করেছে। তবে যুদ্ধাপরাধ খতিয়ে দেখার দায়িত্ব পালন করা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) রাশিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরুর চেষ্টায় আছে।
অস্ত্র পাঠালে প্রতিশোধের হুমকি : এদিকে সুইডেন, নরওয়ে এবং ফিনল্যান্ড ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার দেশগুলোর পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে রাশিয়া। দেশটি হুমকি দিয়ে বলেছে, কোনো দেশ যদি ইউক্রেনে অস্ত্র দেয় এবং সে অস্ত্র যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার হয়, তবে ওই দেশের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া হবে।
দ্বিতীয়দফা বৈঠক আজ : ইউক্রেন সংকট সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা আজ বুধবার দ্বিতীয়দফা বৈঠকে বসবেন। ইউক্রেনের সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদ সংস্থা তাস গতকাল মঙ্গলবার এ খবর দিয়েছে। ইউক্রেইন-রাশিয়া প্রথমদফা বৈঠক সোমবার অনুষ্ঠিত হয়। বেলারুশ সীমান্তে পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলা ওই বৈঠকের পর উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা পরামর্শের জন্য যার যার রাজধানীতে ফিরে যান।











