বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন বেশিরভাগ রোগী

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১০ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নগরে সরকারি-বেসরকারি ১০টি হাসপাতালে ৮১১টি শয্যা আছে। বিপরীতে গতকাল সেখানে ভর্তি ছিলেন মাত্র ৫২৫ জন করোনা রোগী। এর বাইরে লালদীঘি পাড়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি ছিলেন মাত্র চারজন। হাসপাতালে শয্যা খালি থাকায় প্রমাণ করে করোনা সংক্রমিতরা সবাই হাসপাতালমুখি হচ্ছেন না। বেশিরভাগই চিকিৎসা নিচ্ছেন বাসায়। অবশ্য কোভিড রোগীর জন্য বিদ্যমান ৬৬টি আইসিইউ শয্যার ৫৮টিতে গতকাল রোগী ভর্তি ছিলেন।
হাপসাতালে রোগী ভর্তি না হওয়ার কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ বাড়লেও কমেছে ভয়। গতবার যে রকম আতংক ছিল এবার তেমনটি নেই। ফলে বাসায় বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। অবশ্য সংক্রমণ তীব্র না হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে নিরুৎসাহিত করছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, সংক্রমিত হওয়ার পর জ্বর, কাঁশি বা সর্দি থাকলেই হাসপাতালে ভর্তির জন্য দৌঁড়াতে হবে না। এক্ষেত্রে জাতীয় হটলাইন, সিভিল সার্জন অফিস, সিটি কর্পোরেশন বা অন্য চিকিৎসকের টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা মানতে হবে। তবে অক্সিজেন লেবেল কমে গেলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। প্রসঙ্গত, গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে কোভিড সংক্রমিত হয়েছেন ৪৩ হাজার ৫৬৮ জন।
হাসপাতালগুলোর চিত্র : সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কোভিড চিকিৎসায় ১০টি হাসপাতালের মধ্যে সরকারি ৫টি হাসপাতালে আসন সংখ্যা ৫০৬টি। বিপরীতে গতকাল ভর্তি ছিলেন ২৪২ জন। এর মধ্যে ১৮০ শয্যার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ১৪৩ জন, ৩০ শয্যার ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ১৪ জন, ১৪০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৯৫ জন ভর্তি ছিলেন। এছাড়া ৫৪ শয্যার চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতাল ও ১০০ শয্যার হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি ছিলেন না।
এদিকে বেসরকারি পাঁচ হাসপাতালের মধ্যে ১১৮ শয্যার চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ৯৫ জন, ৩৫ শয্যার ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৩৫ জন, ৫৩ শয্যার ম্যাঙ হাসপাতালে ৪৩ জন ভর্তি ছিলেন। তবে দুটি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি ছিল। এর মধ্য ৫৬ শয্যার পার্কভিউ হাসপাতালে ৬৫ জন এবং ৪৩ শয্যার আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতালে ৪৫ জন ভর্তি ছিলেন।
যে কারণে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন :
ভারপ্রাপ্ত জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান আজাদীকে বলেন, এটা ঠিক আক্রান্ত বেশি হচ্ছেন কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে কম। আসলে যারা বেশি সিরিয়াস নন তারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না, তারা বাসায় থেকে ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ কারণে এখনো সরকারি-বেসকারি হাসপাতালে করোনা বেড খালি আছে। আগে উপসর্গ দেখা দিলেই সবাই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যেত। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে তবেই পরীক্ষা করাতো। তখন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। এখন এই আতঙ্ক কমে গেছে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ডাক্তারা অনলাইনে পরামর্শ দিচ্ছেন। বিএমএর ১০০ জন ডাক্তার অনলাইনে সেবা দিচ্ছেন। এরকম আরও অনেক চিকিৎসক অনলাইনে সেবা দিচ্ছেন। এ কারণে বেশিভাগ রোগী হাসপাতালে না এসে বাসায় সেবা নিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর আজাদীকে জানান, কোভিড রোগীদের জন্য এখনো পর্যন্ত পর্যাপ্ত শয্যা রয়েছে। আজকের দিন পর্যন্ত ঠিক আছে। তবে যেভাবে করোনা আক্রান্তের হার বাড়ছে সেটা আশংকাজনক। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতাল, আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালের পাশাপাশি হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেনারেল হাসপাতাল পূর্ণ হয়ে গেলে আমরা হলি ক্রিসেন্টে ভর্তি করাবো।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ও করোনা ইউনিটের চিকিৎসক ডা. এইচ. এম হামিদুল্লাহ আজাদীকে বলেন, অনেকে আতংকগ্রস্ত হয়ে পজিটিভি হওয়ার সাথে সাথেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য দৌঁড়ায়। হালকা জ্বর-কাঁশি হলেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য যথেষ্ট কারণ না কিন্তু। এতে আতংকিত হওয়ারও কিছু নাই। যদি কোনো খারাপ লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন শ্বাস কষ্ট বা অঙিমিটারে যদি ৯৩ শতাংশের নিচে চলে আসে, বুকে ব্যথা, তীব্র কাঁশি থাকে তাহলে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এর বাইরে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার জন্য টেলিমিডিসিনগুলো চালু আছে। যেমন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিভিল সার্জনের অফিসের মাধ্যমেও টেলিমিডিসিন সেবা নেয়া যায়। অনেক চিকিৎসকও টেলিমিডিসিন সেবা দেন। সরাসরিও দিচ্ছেন। অর্থাৎ কোনো না কোনোভাবে স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ নেয়ার সুযোগ আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে এল আরও ৩ লাখ ৬ হাজার ডোজ টিকা
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপি রাজনীতিকে আবাসিকে রূপ দিয়েছে : কাদের