‘বনের ফুসফুসে বালুর অস্ত্র’ দেখতে গেলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। গতকাল দৈনিক আজাদী পত্রিকার শেষ পাতায় ‘বনের ফুসফুসে বালুর অস্ত্র’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে একইদিন বিকেলে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের সেই লম্বাশিয়া এলাকায় যান পরিবেশ উপদেষ্টা।
এ সময় তিনি বলেন, লম্বাশিয়ায় পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন বন্ধে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাহাড় কাটার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বালু উত্তোলনের স্থান এমনভাবে সুরক্ষা করতে হবে যাতে ওই স্থানে কেউ ঢুকতে ও বের হতে না পারে। পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন ও বন দখলের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হবে। যারা পাহাড় কাটে, বন দখল করে তারা দেশ ও জাতির শত্রু। এদিকে, উপদেষ্টা লম্বাশিয়ায় পাহাড় কেটে বালু উত্তোলনের স্থান পরিদর্শনে যাবার খবর শুনার পর মাঝপথে রাস্তার কিছু অংশ কেটে দেয় বালুখেকোরা। যাতে উপদেষ্টার গাড়ি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারে। তবে উপদেষ্টা রাস্তা কেটে দেয়া স্থানে গাড়ি থেকে নেমে প্রায় এক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পাহাড়ের ক্ষত চিহ্ন পরিদর্শন করেছেন।
এরআগে দুপুরে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কার্যালয়ে বন বিভাগের চট্টগ্রাম সার্কেলের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় স্থানীয় সংবাদকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের সীমানা নির্ধারণের পর বিদ্যমান বন রক্ষায় জোর দেওয়া হবে। অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চলবে। মানুষের দুর্ভোগ না বাড়িয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। হাতি–মানুষ দ্বন্দ্ব কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। একসময় হাতির দাঁত ও হাঁড়ের জন্য হাতি মারা হতো। এই ধরনের অর্গানাইজড ক্রাইম রোধে প্রয়োজনে গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগানো হবে। হাতি–মানুষ দ্বন্দ্বের সমাধানে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা হবে।
বন রক্ষা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও অপরাধ দমনে সরকার কঠোর অবস্থানে আছে। মতবিনিময় ও লম্বাশিয়া পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শনে উপদেষ্টার সাথে ছিলেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক ড. মোল্লা রেজাউল করিম, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক সানাউল্লাহ পাটোয়ারী, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় কর্মকর্তা আবু নাছের মুহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ, উপকূলীয় বন বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন, কক্সবাজার দক্ষিণের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম, কক্সবাজার উত্তরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মারুফ হোসেন, সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তফিকুল আলম, লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইনামুল হাসান, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা নুর জাহান, দীপান্বিতা ভট্টাচার্য্য, লোহাগাড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রবিউল আলম খান, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. গাজী বাহার উদ্দিন, জলদী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান শেখ, চুনতি বন রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবীর ফাহাদসহ বনবিভাগের কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।