বাবুর স্বাধীনতা পদক গ্রহণ করলেন ছেলে জাবেদ

আনোয়ারা প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২১ মে, ২০২১ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে বর্ষীয়ান রাজনীতিবীদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুকে দেওয়া ‘স্বাধীনতা পদক ২০২১’ (মরণোত্তর) গ্রহণ করেছেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে তিনি এই পদক গ্রহণ করেন।
পদক গ্রহণের পর পরই ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম এসে নেতাকর্মীদের সাথে স্মরণীয় এই অর্জনের আনন্দ ভাগাভাগি করেন। এসময় আনোয়ারা-কর্ণফুলীর সিনিয়র নেতারা ভূমিমন্ত্রীকে মিষ্টিমুখ করান ও যুদ্ধকালীন সময়ের নানা স্মৃতি তুলে ধরেন। উপস্থিত ছিলেন আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী, কর্ণফুলী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী, আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম,এ,মান্নান চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি এস,এম,আলমগীর চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এম,এ, মালেক, ভূমিমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব রিদোয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েম, চেয়ারম্যানদের মধ্যে মোঃ সোলেমান, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, জানে আলম, এম,এ কাইয়ুম শাহ, অসীম কুমার দেব, আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ আলী, অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন বাবু, বোরহান উদ্দীন চৌধুরী মুরাদ প্রমুখ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে আয়োজিত ‘স্বাধীনতা পদক ২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে এই পুরস্কার তুলে দেন।
পুরস্কার গ্রহণের পর ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই পুরস্কার, চট্টগ্রামবাসীর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার পিতাকে এই পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে পুরো চট্টগ্রামবাসীকে সম্মানিত করেছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তার পিতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। কোনো স্বীকৃতির আশায় তারা সেদিন যুদ্ধে যাননি। দেশ ও জাতিকে পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত করাই ছিল তাদের লক্ষ্য আর বঙ্গবন্ধু ছিল তাদের ধ্যান-জ্ঞান। বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতা অর্জনের ৫০তম বর্ষে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এই সম্মান প্রাপ্তি অনেক বেশি আনন্দের বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজ এলাকা আনোয়ারা কর্ণফুলীতে সংসদ সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, আখতারুজ্জামান বাবুর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তি শুধু তার পিতা বা একটি পরিবারের সম্মান নয়। এই সম্মান পুরো আনোয়ারা-কর্ণফুলীবাসীর। এই সম্মান চট্টগ্রামবাসীর। সুখে দুঃখে এলাকাবাসীর পাশে থেকে এই সম্মানের প্রতিদান দিতে সচেষ্ট থাকবেন বলে জানান তিনি।
আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ১৯৪৫ সালে ৩ মে চট্টগ্রামের আনোয়ারার হাইলধর গ্রামের জন্ম গ্রহণ করেন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ এবং চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যগণের মধ্যে তিনি অন্যতম। তাঁর পাথরঘাটাস্থ বাসভবনে ‘জুপিটার হাউস’ থেকেই সংগ্রাম কমিটির কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা এই বাসভবন থেকে সাইক্লাস্টাইল করা হয় এবং কালুঘাট অস্থায়ী বেতার কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের সমম্বয় এবং স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করে ভারতে অবস্থিত প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি এপ্রিলে ভারতে গমন করেন এবং বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির সদস্য হিসেবে শরণার্থী শিবির ব্যবস্থাপনায় গুরুত্‌্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপ ও আমেরিকা সফর বিশ্ব-জনমত গড়ে তোলা ও তহবিল সংগ্রহে অসামান্য অবদান রাখেন।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯৭২ সালে গণপরিষদ সদস্য এবং পরবর্তীতে ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বরেণ্য এই দেশপ্রেমিক ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়ে আসছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগুণীদের পথে তরুণরাও হাঁটবে
পরবর্তী নিবন্ধবুধবার চন্দ্রগ্রহণ, দেখা যাবে বাংলাদেশের আকাশে