বান্দরবানে ম্রো জনগোষ্ঠীর লংমার্চ-বিক্ষোভ

নাইতং পাহাড়ে হোটেল নির্মাণ বন্ধের দাবি

বান্দরবান প্রতিনিধি | রবিবার , ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:১১ অপরাহ্ণ

বান্দরবানের চিম্বুকের নাইতং পাহাড়ে পাহাড়িদের ভূমি দখল করে পাঁচ তারকা হোটেল, বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ঐতিহ্যবাহী বাঁশির সুরে লংমার্চ করেছে ম্রো জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। পরে তারা স্থানীয় রাজবাড়ি মাঠে ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশও করেছে।
আজ রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল পৌনে নয়টায় চিম্বুক পাড়াবাসীর ব্যানারে বান্দরবানের থানচি সড়কের রামড়ি পাড়া থেকে বান্দরবান শহর অভিমুখে লংমার্চ শুরু করে ম্রো জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ম্রো জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোরদের লংমার্চ গিয়ে শেষ হয় স্থানীয় রাজবাড়ি মাঠে।
লংমার্চে ঐতিহ্যবাহী ম্রো বাঁশের বাঁশি বাজিয়ে পাঁচ তারকা হোটেল ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদ জানায় ম্রো জনগোষ্ঠী। দীর্ঘ লংমার্চে ম্রো জনগোষ্ঠীর সহস্রাধিক নারী-পুরুষ ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশগ্রহণ করে।
চিম্বুক পাহাড় ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা ম্রো জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও অংশ নেয় আন্দোলনে।
পরে স্থানীয় রাজবাড়ি মাঠে ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চিম্বুক পাড়াবাসীর অন্যতম নেতা রেংচং ম্রো। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চিংপা ম্রো। প্রতিবাদে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বান্দরবান বন ও ভূমি রক্ষা পরিষদের সভাপতি জুমলিয়ান আমলাই।
দাবিগুলো হচ্ছে ১. চিম্বুকের নাইতং পাহাড়ে পাহাড়িদের ভূমি দখল করে পাঁচ তারকা হোটেল, বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প বাতিল করতে হবে। ২. অবৈধভাবে ভূমি দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী স্থানীয় পাড়াবাসী, জনপ্রতিনিধি, ছাত্র জনতাকে হয়রানি ও হুমকি-ধমকি প্রদান করা বন্ধ করতে হবে। ৩. চিম্বুকের ম্রোদের বংশপরম্পরায় ভোগদখলীয় জায়গায় কোনো ধরনের পর্যটন বা বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। ৪. স্থানীয় মানুষের ভূমি দখল করে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র সম্প্রসারণের উদ্যোগ কোনোভাবেই গ্রহণ করা যাবে না। ৫. যে উদ্দেশ্যে চিম্বুক পাহাড়ের ভূমি ব্যবহার করা হউক না কেন, তা স্থানীয় কার্বারি, হেডম্যান, জনপ্রতিনিধি ছাড়াও চিম্বুক পাহাড়ের সকল পাড়াবাসীকে অন্তর্ভুক্ত করে আলোচনা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের কাপ্রু পাড়া এলাকায় চন্দ্র পাহাড় নামক স্থানে সিকদার গ্রুপের তত্বাবধানে একটি পাঁচ তারকা মানের রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। তবে ম্রো জনগোষ্ঠীদের অভিযোগ, তাদের ভোগদখলীয় ভূমি দখল করে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে বেশ কয়েকটি ম্রো পাড়া উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তারা।
তবে সিকদার গ্রুপ এবং পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ম্রো জনগোষ্ঠীর ভূমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। এদিকে পার্বত্য জেলা পরিষদের তথ্যমতে, পার্বত্য জেলা পরিষদের ভোগদখলীয় বন্দোবস্তির প্রক্রিয়াধীন লামা উপজেলাধীন নাইতং পাহাড়ে ৩০২নং মৌজার অন্তর্ভুক্ত এলাকায় ২০১৪ সালে হটিকালচার এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে রাস্তা নির্মাণ ও ছোট ছোট কিছু উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।
পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর ৬৯ পদাতিক বান্দরবান সেনানিবাসের প্রস্তাবনা এবং অনুরোধে ২০১৬ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে ২০৫৫ সাল পর্যন্ত ৪০ বছরের জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদ ও সেনা কল্যাণ সংস্থার মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তিতে ১৮টি শর্ত প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাস্টম ব্রিজ এলাকায় তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেফতার তিন
পরবর্তী নিবন্ধভারতে হিমবাহ ধসে শতাধিক মৃত্যুর আশঙ্কা