বান্দরবানে পরিবেশ বিধ্বংসী সিন্ডিকেট চক্র পাহাড়ের পর এবার স্কেভেটর দিয়ে সাঙ্গু নদীর চরের বালু তুলে জমি ভরাটের জন্য বিক্রি করছে। বৃহস্পতিবার সকালে বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড হেডম্যানপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সাঙ্গু নদীর চরের দুটি স্থান থেকে স্কেভেটর দিয়ে বালুর চর কেটে ডাম্পার ট্রাকে তোলা হচ্ছে। ছয়টি ট্রাকে করে চরের বালুগুলো নেয়া হচ্ছে বালাঘাটা উপ–বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্ধারিত জমিতে। বর্ষার শুরুতে পরিবেশ বিধ্বংসী এ কর্মকাণ্ডের কারণে নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে একশ পরিবারের বসত ঘর।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েকদিন ধরে সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের হেডম্যানপাড়া এলাকায় স্কেভেটর লাগিয়ে সাঙ্গু নদীর চর কাটা হচ্ছে। দুটি স্কেভেটর দিয়ে কাটা চরের বালুগুলো ৬টি ডাম্পার ট্রাকে করে দিনে–রাতে পাশ্ববর্তী এলাকায় জমি ভরাটের কাজ করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল বড়ুয়া, রাজুময় বলেন, তাদের পাড়াটি সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী নিচু এলাকায়। নদীর চরটি কেটে ফেলায় বর্ষায় ভাঙনের মুখে পড়েছে গ্রামটি। এখনি এ অপকর্ম বন্ধ না করলে নদী ভাঙনে পাড়াটি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বালু উত্তোলনে প্রভাবশালী চক্র জড়িত থাকায় সরাসরি বাধা দিতে সাহস পাচ্ছে না কেউ। ইতিমধ্যে চরের প্রায় ১ লাখ ঘন ফুটেরও বেশি বালু সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই চক্রটি নদীর চর থেকে বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ তাদের। বালু উত্তোলনে নিয়োজিত স্কেভেটর চালক মো. সুমন বলেন, নাজিম, সম্রাট নামের কয়েকজনের নির্দেশনায় চরের বালু কেটে ট্রাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনদিন ধরেই দিনরাতে আঠারো ঘণ্টা গাড়িগুলো চলছে।
নিজেকে নদীর চরের জায়গার মালিক দাবি করে চাইচা থোয়াই মারমা বলেন, ৩৫ হাজার টাকা চুক্তিতে বালাঘাটা এলাকার নাজিম নামে এক ব্যক্তিকে বালু তোলার অনুমতি দিয়েছেন। তবে নদীর চর থেকে বালু উত্তোলন বা বিক্রি করা যে অপরাধ তা তার জানা ছিল না।
মো. নাজিম উদ্দীন বলেন, নদীর চর থেকে বালু উত্তোলন করে বিদ্যুৎ উপ–কেন্দ্রের জমি ভরাটের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ঠিকাদারের সাথে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ভরাটের জন্য সম্রাট নামে এক ব্যক্তির চুক্তি হয়েছে বলে শুনেছি।
এ বিষয়ে বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফা সুলতানা খান হীরামনি জানান, নদীর চর থেকে বালু উত্তোলনের সাথে সম্রাট নামে এক ব্যাক্তির সংশ্লিষ্টতার খবর পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মে বান্দরবান সদর উপজেলার বালাঘাটা বাকিছড়া, থোয়াইংগ্যা পাড়া এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে মো. নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ২৯ মে বান্দরবান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফা সুলতানা খান হীরামণি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পরে একই অপরাধে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আরও ২টি মামলা দায়ের করা হয়।