ধান ও চালের বাজারে অবৈধ মজুদদারি ঠেকানো এবং মজুদের হিসাবে স্বচ্চতা আনতে ফুড গ্রেইন (খাদ্যশস্য) লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করে সরকার। কিন্তু জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের নীরবতার সুযোগে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এই লাইসেন্স নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এছাড়া যাদের কাছে এই লাইসেন্সটি আছে তারা সময়মতো তা নবায়ন করছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
জানা গেছে, লাইসেন্সের আওতায় না আসায় একজন ব্যবসায়ীর কাছে কি পরিমাণ ধান-চালের মজুদ আছে তা জানতে পারছে না জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়। নিয়ম মতে, সকল ব্যবসায়ী ফুড লাইসেন্স নিয়ে প্রতি মাসে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে ধান-চালের মজুদের হিসাব দিতে বাধ্য থাকবেন।
খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৬ সালের কন্ট্রোল অব এসেনসিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট অনুসারে ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু হওয়ার প্রেক্ষাপটে তৎকালীন সরকার ১৯৮৯ সালে খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ ও ব্যবসায়ীদের মজুদ সংক্রান্ত এসআরও বাতিল করে। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার খাদ্যশস্যের ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর থেকে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের ওপর সরকার কার্যত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন বলেন, আমাদের সমিতির অধিভুক্ত অনেক ব্যবসায়ীর কাছে খাদ্যশস্যের লাইসেন্স আছে। আবার কিছু সংখ্যকের কাছে নাই। এটাও খাদ্য বিভাগের নীরবতার সুযোগে অনেকে এই লাইসেন্স নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তবে সরকারও বিষয়টিতে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। না হলে তো এত বছর লাগার কথা না। তবে সবার কাছে এই লাইসেন্সটি থাকলে কার আড়ত-গুদামে কী পরিমাণ চাল রয়েছে, সেটি সরকারের কাছে হিসাব থাকত।
চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রফিক উল্লাহ বলেন, আমাদের শতভাগ মিল মালিকদের খাদ্যশস্যের লাইসেন্স আছে। খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে মাঝে মাঝে পরিদর্শক এসে আমাদের মজুদ পরিস্থিতি তদারকি করে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আবদুল কাদের দৈনিক আজাদীকে বলেন, খাদ্যশস্যের লাইসেন্সের বিষয়ে আমাদের মাসিক সভায় আলোচনা হয়। আমাদের খাদ্য পরিদর্শকরা লাইসেন্সের বিষয়টি তদারকিও করছে। যারা লাইসেন্সের আওতায় নাই তাদের লাইসেন্স নিতে তাগাদা দিচ্ছি।
উল্লেখ্য, গত ২০১১ সালের ৪ মে গেজেট জারি করে কী পরিমাণ খাদ্যশস্য কতদিন মজুদ রাখা যাবে তা নির্ধারণ করে দেয় খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। গেজেট অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী এক টনের বেশি খাদ্যশস্য বা খাদ্যসামগ্রী মজুদ রাখতে পারবেন না। এ ছাড়া আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং চালকলের মালিকরা সরকার নির্ধারিত হারে ধান ও চাল নির্ধারিত সময়ের জন্য মজুদ করতে পারবেন। অটোমেটিক, হাসকিং ও মেজর চালকলের মালিকরা তাদের পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার পাঁচ গুণ ধান ৩০ দিনের জন্য মজুদ করতে পারবেন। অটোমেটিক ও মেজর চালকলের মালিকরা পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার দুই গুণ চাল এবং হাসকিং চালকলের মালিকরা সর্বোচ্চ ১০০ মেট্রিক টন চাল ১৫ দিন পর্যন্ত মজুদ রাখতে পারবেন। পাইকারি বিক্রেতারা সর্বোচ্চ ৩০০ টন ধান বা চাল ৩০ দিন মজুদ রাখতে পারবেন। অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা ১৫ দিনের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ টন এবং আমদানিকারকরা আমদানিকৃত ধান বা চালের সবটুকু ৩০ দিন পর্যন্ত মজুদ করতে পারবেন।












