বাদশার টেক পার হতেই যত ভয় আতঙ্ক

চকরিয়ার কাকারা-মানিকপুর সড়ক রাতে সক্রিয় ডাকাতদল, যানবাহনের গতিরোধ করে চলে লুটপাট

চকরিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৪ জুলাই, ২০২২ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

চকরিয়ার কাকারা-মানিকপুর সড়কের বাদশার টেক নামক স্থানটি নির্জন পাহাড়ি এলাকা। সড়কটির ওই স্থান দিয়ে যাওয়া-আসার সময় বিভিন্ন যানবাহনের চালক-যাত্রীরা প্রতিনিয়ত থাকেন ভয়-আতঙ্কে। কারণ এটি দীর্ঘদিনের একটি ডাকাতির স্পট। এই স্থান পার হওয়ার সময় সংঘবদ্ধ সশস্ত্র ডাকাত-সন্ত্রাসীদলের সদস্যরা যাত্রী-সাধারণের সর্বস্ব লুট করে নেয়। অবশ্য পুলিশের কঠোর তৎপরতার কারণে বছর দুয়েক যাত্রী-সাধারণ নির্ভয়ে ওই স্থান পার হতে পেরেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাদশার টেকটি ফের অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বাদশার টেক সংলগ্ন সড়ক লাগোয়া স্থানীয় একটি মসজিদের খালি জায়গায় ঝুঁপড়ি দোকানঘর গড়ে তোলা হয়েছে। সেই দোকানে ব্যবসার নামে চলে মূলত অপরাধীদের আড্ডা। সন্ধ্যার পর পরই বিভিন্ন স্থান থেকে ডাকাত-সন্ত্রাসী জড়ো হয়ে সেই দোকানে অবস্থান করতে থাকে। রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে সদলবলে ওইসব ডাকাত-সন্ত্রাসী সোজা চলে যায় নির্জন পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে। সেখানে বিভিন্নস্থানে ওঁত পেতে থাকে তারা। এরপর সুযোগ বুঝে সড়কটিতে চলাচলরত বিভিন্ন যানবাহন তথা সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে সর্বস্ব লুটে নেয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পূর্ব কাকারা উত্তর পাহাড়তলী বাদশার টেক জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. আজিজ মিয়া বলেন, কাকারা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বাদশার টেক এলাকার মৃত মজুলুর রহমানের ছেলে আহামদ হোছন ও তার ছেলে ওসমান গনি সড়কের পাশের মসজিদ-কবরস্থানের জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে ঝুঁপড়ির মতো করে দোকান ঘর তৈরি করে। মূলত ব্যবসার নামে ওই দোকান তৈরি করলেও সেখানে রাতভর চলে ডাকাত-সন্ত্রাসীদের আড্ডা। এমনকি সেখানে রকমারি মাদকের আসরও বসানো হয়। চলে নারী নিয়ে আসামাজিক কার্যকলাপ। আর সেখান থেকেই রাতের অন্ধকারে সড়কটির বাদশার টেক নামক নির্জন স্থানে গিয়ে সড়কে চলাচলরত বিভিন্ন যানবাহন এবং সাধারণ মানুষের গতিরোধ করে সর্বস্ব লুট করে আসছে ডাকাত-সন্ত্রাসীরা।
মসজিদ কমিটির সভাপতিসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সড়কটিতে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে পুলিশ টহল দিয়ে থাকে। তবে সেই টহল স্থায়ী না হওয়ায় ডাকাত-সন্ত্রাসীরা তাদের অপরাধকর্ম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে যদি বাদশার টেকের কাছে স্থাপিত ঝুঁপড়ি দোকানটিতে পুলিশ অবস্থান নেয় তাহলে এই সড়কে কোনো ডাকাতি বা লুটের ঘটনা ঘটবে না। একইভাবে মসজিদ-কবরস্থানের জায়গা থেকে সেই অবৈধ দোকানটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হলে সড়কটিতে ডাকাতি বা কোনো লুটের ঘটনা ঘটবে না বলেও তাদের অভিমত।
তবে অভিযুক্ত ওসমান গনির বাবা আহামদ হোছন দাবি করেছেন, তারা ক্রয়কৃত জায়গায় দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন। জায়গাটি মসজিদ-কবরস্থানের নয়। তার দোকানে রাতভর কোনো আড্ডাও চলে না এবং বিভিন্ন স্থান থেকে অপরিচিত কোনো লোকও দোকানে আসে না।
কাকারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সাহাব উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, নির্জন পাহাড়ি এলাকার বাদশার টেকটি দীর্ঘদিনের একটি ডাকাতির স্পট। সেখানে রাতভর পুলিশের টহল ব্যবস্থা জোরদার করা উচিত। তবে স্থানীয় মসজিদ-কবরস্থানের জায়গার ওপর ঝুঁপড়ি দোকান তৈরি করে সেখানে অপরাধীদের আড্ডা বসে কিনা তা আমার জানা নেই। এই বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে পরবর্তীতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী দৈনিক আজাদীকে বলেন, চকরিয়ার কাকারা-মানিকপুর সড়কের বাদশার টেক নামক স্থানটি অনিরাপদ বলে শুনেছি। তাই সড়কটিতে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে স্থানীয় মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকেও একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাপা নেতা সামশুল আলম মাস্টারের ইন্তেকাল
পরবর্তী নিবন্ধফের স্থগিত চাম্বল ইউপি নির্বাচন, প্রতিবাদে মানববন্ধন