বাজেটে ৭ প্রস্তাবনা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৮ মে, ২০২১ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

আসছে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খলিলুর রহমান। সাত দফা প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে- স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষাখাত, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী রপ্তানি শিল্পের উন্নয়ন, বে টার্মিনালের জন্য বিশেষ বরাদ্দ, আয়কর, ভ্যাট এবং স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা।
বাজেট প্রস্তাবনায় মেট্রোপলিটন চেম্বার সভাপতি বলেন, করোনার মহামারীর এই বাজেটে সরকারকে অবশ্যই স্বাস্থ্যখাতের দিকে নজর দিতে হবে। করোনা প্রতিরোধে অন্তত ৩০ কোটি ডোজ টিকা আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া মহল্লা ভিত্তিক করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি তা তদারকি করতে ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন ভিত্তিক ১০ জনকে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিতে হবে। কেউ যাতে মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করতে না পারে তাই মহামারী আইন সংশোধন করে শাস্তির ব্যবস্থা রাখতে হবে। অন্যদিকে গত প্রায় এক বছর ৪ মাস দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, তাই শিক্ষা খাতের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সপ্তাহের পাঁচদিনের অনলাইন পড়াশুনা পর্যালোচনা করার জন্য অন্তত একদিন মাস্ক পরে এবং দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ ঘণ্টার জন্য হলেও পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। অপরদিকে আন্তর্জাতিক জরিপ কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্স তালিকায় ব্যয় বহুল ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৬৮তম। যা দেশের রপ্তানি উন্নয়নে আরও বড় প্রতিবন্ধকতা। এর থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজনে কাস্টমস কার্যক্রম সহজীকরণ করা, বন্দরের খরচ কমানো এবং শিপিং কর্মকাণ্ড এজেন্টদের আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। যার প্রস্তাব আমরা কর্তৃপক্ষের নিকট দিয়েছি। আমরা আশাবাদী আসছে বাজেটে বিষয়টির দিক নির্দেশনা থাকবে যার ফলে দেশে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমবে। এছাড়া রপ্তানি উন্নয়নে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা রপ্তানির কাঁচামাল বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্তকরণ। রপ্তানি আদেশ আসলে বন্ডে কাঁচামাল অন্তর্ভুক্তির জন্য বন্ড কর্তৃপক্ষের অফিসে দৌঁড়াতে হয়, না হলে কাস্টমস পণ্য ছাড় দেয় না। বন্ডে গিয়ে কাঁচামালের এইচএস কোড অন্তর্ভুক্ত করা সময় সাপেক্ষ। এই ঝামেলার কারণে অনেক বায়ার রপ্তানি বিমুখ। তাই আমরা প্রস্তাব করেছি যেহেতু আমরা যা কিছু আনি সবকিছু কাস্টমস পাশ বইয়ে লিখে চালান ছাড় হয়, তাই রপ্তানিকারকের রপ্তানি আদেশ মতে, এইচএস গণ্য করে চালান দিলে রপ্তানি উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। আশা করি দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সামনের বাজেটে আমাদের প্রস্তাব গৃহীত হবে।
বাজেট প্রস্তাবনায় খলিলুর রহমান আরো বলেন, সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প এবং প্রতিবেশি দেশ তথা সেভেন সিস্টার অঞ্চল থেকে বন্দরের আয় বৃদ্ধির বে টার্মিনাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা প্রস্তাব করছি, আসন্ন বাজেটে এই বে টার্মিনালের জন্য যেন বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়। অন্যদিকে আমরা শুনেছি এবার কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো হচ্ছে। যা আসলে একটি ভালো উদ্যোগ। কর্পোরেট ট্যাক্স কমলে ব্যাংক সুদ কমবে, এবং সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসবে। ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করার সাথে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র এবং অনলাইনে কর প্রদান সার্টিফিকেট দেয়ার নিয়ম চালু সময়ের চাহিদা। কর কাঠামো তুলনামূলক বিচারে বিত্তবানদের পক্ষে। সহজতর কর ব্যবস্থাপনা কর আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়ক। স্বণোদিত কর প্রদানের সীমা ৩ লাখের পরিবর্তে ৪ লাখ এবং প্রবীণ করদাতার বেলায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা করা উচিত। এছাড়া শিক্ষা খাতে সরকারের ব্যয় উল্লেখযোগ্য হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি করদাতাদের বেলায় শিক্ষা খাতে খরচ রেয়াত নেই। বিষয়টি আগামীতে কর রিটার্ন দাখিলে অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। এছাড়া সেকশন ৮২(সি) মোতাবেক টার্নওভারের ওপর শূণ্য দশমিক ৬ শতাংশ মিনিমাম ট্যাক্স ধার্য্য করা হয়েছে। এই অবস্থায় সকল প্রতিষ্ঠান কমিশন ব্যবসায় নিয়োজিত। প্রতিষ্ঠানের কমিশন আয়ের পরিবর্তে মোট প্রাপ্তির ওপর টার্নওভার ট্যাক্স ধার্য্য করা হলে তা অযৌক্তিক হবে। কমিশন ব্যবসায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের ওর টার্নওভার ট্যাক্স ধার্য্যের বিষয়টি বিশদ ব্যাখা করা প্রয়োজন। অপরদিকে রপ্তানির জন্য আমদানিকৃত কাঁচামাল ব্যতীত অপ্রয়োজনীয় আমদানির ওপর সকল প্রকার কর অথবা ভ্যাট আরোপ করা আবশ্যক। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের চাইতে আমদানিকৃত পণ্যের ভ্যাট অথবা কর কম হওয়ায় স্থানীয় শিল্পোদ্যেক্তারা নিরুৎসাহিত হন। স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেয়ার নতুন কৌশল প্রয়োগ করা গেলে আমদানি নির্ভরতা কমবে। দেশীয় শিল্প বিকাশে বিশেষ সুবিধা অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই। ভ্যাট অব্যাহতি প্রাপ্ত পণ্যের ওপর ট্রেড ভ্যাট চালু করে এনবিআর দ্বৈতনীতি অবলম্বন করেছে। এতে খুচরা এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের হয়রানির পাশাপাশি মূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আশা করি আমাদের প্রস্তাব মতে আসছে বাজেটে ভ্যাট বিষয়ে সহায়ক দিকনির্দেশনা আসবে। অন্যদিকে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি বৃদ্ধি এবং আমদানি সমমানের গুণগত মানের পণ্য উৎপাদনকারী স্থানীয় শিল্প সুরক্ষা ভারসাম্য করতে বিশেষ সুযোগসহ বহুমুখী নীতি সহায়তা আবশ্যক। অবাধ আমদানি নীতি কোনো দেশই সমর্থন করে না। স্থানীয় বিনিয়োগকারী যদি আমদানি সমকক্ষ গুণগত মানের পণ্য কম দামে উৎপাদন করতে পারে, সেক্ষেত্রে আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক, ট্যারিফ, নন ট্যারিফ ইত্যাদি প্রয়োগ করা সময়ের দাবি। আমাদের আমদানি বাণিজ্য অনেক সহজ হলেও রপ্তানির বড় অংশই প্রতিনিয়ত ট্যারিফ নন ট্যারিফ বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই আমাদের রপ্তানির সক নন ট্যারিফ বাধা অপসারণে পদক্ষেপ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅস্বাভাবিক জোয়ারে নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
পরবর্তী নিবন্ধসয়াবিন তেলের দাম একবারে বাড়ল লিটারে ১২ টাকা