প্রথম রোজায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি দেখে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি তেল-চিনি, চাল, মসলাসহ বেশ কিছু পণ্যের দামে সন্তুষ্ট হলেও গরুর মাংস, ফল ও কিছু সবজির দামে অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রভাব দেখেছেন। সামপ্রতিক সময়ে দর বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি আর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির সক্ষমতার বাস্তবতায় সংবাদ মাধ্যমে ‘ইতিবাচক খবর’ তুলে ধরার কথাও বলেন তিনি। রোববার সকালের দিকে কারওয়ান বাজার এলাকার মুদি দোকানগুলোতে যান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা তার সঙ্গে ছিলেন। খবর বিডিনিউজের।
এ সময় তিনি পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা, বাজার পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী নিয়মিত বাজারে আসেন কি না এমন প্রশ্নও আসে তার কাছে। এর উত্তরে তিনি বলেন, প্রতি ১৫ দিন পর পর নিজে বাজার করি। মাছ কিনি, তরিতরকারি কিনি। তবে আমাদের কাজ না যে প্রতিদিন বাজারে গিয়ে কন্ট্রোল করা। সত্য কথাটা আপনারা বলেন। আন্তর্জাতিক বাজারে এই দাম, দেশে কোন দাম হওয়া উচিত সেই নিউজটা আপনারা করেন। ‘টিসিবির মাধ্যমে ২৫০ জনকে দিতে পারি। কিন্তু সেখানে যদি ৩০০ জন মানুষ গিয়ে দাঁড়ায় তাহলে ৫০ জন তো পাবে না। আপনার এই ৫০ জন নিয়েই নিউজ করেন। কিন্তু ২৫০ জন যে পণ্য পেল সেই নিউজটা আপনারা করেন না।’
খালি নেতিবাচক খবর দিয়ে সংবাদপত্রের কাটতি বাড়ানো খুব ভালো কথা নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পজিটিভ নিউজটাও করা দরকার। কোথাও যদি চুরি করে থাকে সেই খবরও আপনারা দিতে পারেন। কখনও কখনও সুবিধামত সময়ে আপনারা বিব্রত করার চেষ্টা করেন। চালের দাম খাদ্য মন্ত্রণালয় দেখেন। আমাদের তো ১৯টা পণ্য, এই পণ্যগুলোর দাম নিয়ে আমরা কাজ করি। এখন যদি বলেন টিনের দাম বেড়ে গেল কেন, এখন যদি বলেন অ্যারোপ্লেনের দাম বেড়ে গেল কেন? আই কান্ট অ্যানসার দ্যাট কোয়েশ্চেন।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে প্রশ্ন এসেছে আমি কেন আজকে বাজারে আসলাম? অবশ্যই দাম বেড়েছে। বেড়েছে বলেই টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি মানুষকে আমরা সুলভ মূল্যে পণ্য দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। তারপর আমরা যে দামটা রোজার আগে ঠিক করে দিলাম, সেটা ঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে কি না সেটা দেখার জন্যই আমি এসেছি। কোথাও কোনো অনিয়ম আছে কি না। আমি যদি প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে বাজারে আসি তাহলে ৫০ বিলিয়নের যে রপ্তানি সেটা কেমন করে কন্ট্রোল করব। আমার তো ভোক্তা অধিকারের এডিশনাল সেক্রেটারি আছে। উনি বাজারে আসা মানেই আমার আসা।
ঘুরে দেখার পর বাজার পর্যবেক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রণে আছে। বিভিন্ন খুচরা বাজারে কিছুটা হেরফের হচ্ছে দূরত্বের কারণে। সেজন্য পাইকারি পর্যায়ে দামটা ঠিক রাখার চেষ্টা চলছে।
নবগঠিত টাস্কফোর্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চারটা মন্ত্রণালয় নিয়ে বসছিলাম। আগামীকাল আবার বসব। কয়দিনের মধ্যে কী পার্থক্য সেটা দেখব। যেদিন ঢাকা শহরে ৬০ টাকা কেজি দরে বেগুন দেখলাম সেই দিনই আমি রংপুরের পীরগাছা বাজারে ঘুরেছিলাম। ওইখানে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা কেজি। পরিবহনসহ অন্যান্য কিছু নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারপরও সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভোররাতে যে ট্রাক আসবে সেখানে আমরা নজরদারি করতে চাই। একটা দোকানে চাল ৪৪ টাকা দরে বিক্রি করছে। ৪১ টাকা ৩০ পয়সায় কিনে ১ টাকা ৩০ পয়সা পরিবহন খরচ দিয়ে সে চালটা এনেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে কেউ মোটা চাল কিনতে চায় না। দোকানদার বলছে রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে সবাই চিকন চাল খায়। বাস্তবতা হচ্ছে মানুষের সামর্থ্য আছে।
বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, গরম মসলার দাম পড়তির দিকে। কিন্তু জিরার দাম কিছুটা বেড়েছে। দারুচিনি, গোল মরিচ এগুলো দাম কমার দিকে। প্রতিকেজি ৭৪ টাকা দেখলাম চিনির দাম, যেটা আমরা ৭৫ টাকা বেঁধে দিয়েছিলাম। তবে অধিকাংশ দোকানেই কিন্তু চিনি তেমন দেখলাম না। একটা দুটা দোকানে দেখলাম।
‘ওভারঅল যেটা দেখলাম, আমাদের যেটা বেশি কনসার্ন ছিল সেটা হল তেল। এখনও কোনো কোনো দোকানে ১৬৮ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল রয়ে গেছে। যেটা আমরা আগে দাম ঠিক করেছিলাম। সেই বোতলগুলো এখনও ডিসপোসড করা হয়নি। কিন্তু আমরা যেটা বুঝলাম দোকানিরা সেগুলো ১৫৮/১৫৯ টাকায় বিক্রি করছে। এ হলো বাজারের অবস্থা।’
সরকার গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬৮ ঠিক করে দিলেও পরে ভ্যাট কমানোর পর দামও কমিয়ে আনা হয়। বর্তমানে প্রতিলিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬০ টাকা।
টিপু মুনশি বলেন, আমি ভোক্তা অধিকারকে নিয়মিত মনিটর করতে বলেছি। এমনও হতে পারে যে আজকে আমি এসেছি বলে হয়ত দাম কম। এটা মনিটর করতে বলেছি। ফলফলাদির দাম বেড়ে গেছে। ডিজি ও বাজারের মালিক সমিতিকে বলে গেলাম। এটা রিজনেবল হওয়া উচিত। রমজান মাসে মানুষ সংযমি হবেন। সেখানে যদি আমরা সুযোগ নিই তাহলে আল্লাহ তো আমাদের মাফ করবেন না। ন্যায্য মূল্য রাখা দরকার। ভোর রাতে যেসব ফল ফলাদি আসে সেগুলো দাম বেশি।
প্রতিটি দোকানে দামের তালিকা রাখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু কিছু দোকানে দেখলাম না। পরবর্তীতে এ বিষয়ে কঠোরতা দেখাতে হবে। পাকা রশিদ থাকতে হবে। এফবিসিসিআই ৪৬ জনের কমিটি করেছে, ৪৬টি দ্রব্য মনিটর ও নিয়ন্ত্রণ করবে।
ব্যবসায়ীরা ন্যায্য দামে পণ্য বিক্রি করবেন এটাই আমাদের দাবি। এটাই আমরা বলতে এসেছি। অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে কোনো রকমে ছাড় দেবেন না।
মাংসের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মাংসের দাম প্রতিবার সিটি করপোরেশন ঠিক করে। এবার কিন্তু তারা করেন নাই। কেন করেন নাই আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।
এখন বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ৯০০ টাকার ওপরে। গতবছর গরুর মংস সাড়ে ৫০০ এবং খাসির মাংস সাড়ে ৭০০ টাকার মধ্যে ছিল।
ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, মাংসের দাম নিয়ে সিটি করপোরেশন থেকে চিঠি পেয়েছি। এ বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে। গত সপ্তাহে এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি, আমরা বসছি এটা নিয়ে।