বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। বাঙালির দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা সংস্কৃতির ধারক–বাহক। একসঙ্গে উৎসব আনন্দ আর জ্ঞানের সমন্বয় আর কোনো আয়োজনে বুঝি হয় না। বইমেলা তাই আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গেই মিশে গেছে। অমর একুশে বইমেলা শুরু হয়েছে। শুরু থেকেই বইমেলা ঘিরে ব্যাপক আয়োজন লক্ষ করা গেছে। বইপ্রেমীরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য। নতুন বই নতুন লেখক কবির মিলনস্থল এই বইমেলা।বইমেলার কেন্দ্রবিন্দু হলো বই। যুগ যুগ ধরে যা জ্ঞান বিতরণের মহাদায়িত্ব পালন করে আসছে। বই মেলায় যাবো, অথচ বই নিবোনা এমন তো হতে পারেনা।নতুন–পুরোনো লেখক–কবি–প্রকাশক, মেলার দর্শক সবাই উপস্থিত হয়। বইমেলায় যাওয়া থেকে শুরু করে বই বিক্রি করাই শেষ কথা নয় অথবা মেলার সার্থকতা নয়। মিলনমেলায় সবাই একত্র হওয়াটাও উদ্দেশ্য।মানুষ পড়তে ভালোবাসে। মুদ্রিত আকারে বই প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সেই ঝোঁক আরো বেড়ে যায়। নতুন বইয়ের গন্ধ এসব যেন আমাদের আত্মার সঙ্গে মিশে যায়। আজো আত্মার সঙ্গে মিশেই রয়েছে। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ ইত্যাদি সাহিত্যের নানা শাখা–প্রশাখা বিস্তার লাভ করে মানুষের আত্মার খোরাক জোগাতে থাকে। তৈরি হয়েছে আলাদা আলাদা পাঠকশ্রেণি।এসব পড়ুয়া বইপ্রেমীদের হাত ধরে তৈরি হয় বইয়ের সংগ্রহশালা। সেসব সংগ্রহশালায় থরে থরে শোভা পেতে থাকে পাঠকের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।বই পড়াটা নেশা ছিল অনেকের কাছেই। আজও খুঁজলে সেসব পাঠক পাওয়া যাবে। কিন্তু আগের তুলনায় তা একেবারে হাতেগোনা। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। বহুদিন পর পুরোনো বই হাতে নিলে যে ঘ্রাণ এসে নাকে লাগে সেই ঘ্রাণ আজ কমই পাওয়া যায়।
আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বই কখনো পুরনো হয় না। কেবল পাঠক পরিবর্তন হলে বইটি আবার নতুন স্বাদ উপহার দিতে পারে।পৃথিবীর বিভিন্ন বড় বড় শহরে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেসব শহরেও বইমেলায় পাঠকদের প্রাণসঞ্চার করে।নিয়মিত চর্চা ছাড়া যেমন কোনো কাজই সফলতা অর্জন করা সম্ভব না, তেমনি সম্ভব না সাহিত্যেও। অনেকেই হঠাৎ দু–একটা বই বইমেলায় নিয়ে আসে। তারপর তারা সাহিত্যের জগৎ থেকে হারিয়ে যায়। এটা সাহিত্যের জন্য শুভসংকেত নয়। বইমেলা সব বিভেদ দূর করে বাঙালির প্রাণের সঞ্চার।