ঈদে অতিথি আপ্যায়নের ক্ষেত্রে কমেছে খোলা লাল সেমাই কিংবা বাংলা সেমাইয়ের কদর। বিভিন্ন নামী দামী ব্র্যান্ডের সেমাই কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক বছর ধরে সংকুচিত হচ্ছে বাংলা সেমাইয়ের বাজার। বাংলা সেমাইয়ের প্রচলনটা প্রধানত ঈদ নির্ভর। ঈদে অতিথি গেলে এক সময় বাটিভর্তি সেমাই দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। তবে সময়ের সাথে সাথে উচ্চবিত্তরা বাংলা সেমাই থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বর্তমানে বাংলা সেমাইয়ের জায়গা নিয়েছে বাহারি মোড়কের লাচ্চা সেমাই। কারখানা মালিকরা বলছেন, বর্তমানে বাংলা সেমাইয়ের বাজার মন্দা। ময়দার দাম বাড়ার কারণে সেমাইয়ের দামও বেড়ে গেছে। গতকাল চাক্তাই–রাজাখালীর কয়েকটি সেমাইয়ের কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, কারখানার শ্রমিকেরা বাঁশের মাথায় সেমাই ঝুঁলিয়ে রোদে শুকাতে দিচ্ছেন। অনেকে সেমাই তৈরির খামি আগুনে দিচ্ছেন। রোদে ভালোভাবে সেমাই শুকানো শেষে তেলে ভাঁজার পরে প্রস্তুত করা হচ্ছে সেমাই। তবে এখন খোলা সেমাইয়ের চাহিদা কমার কারণে অনেকে খোলা লাচ্চা সেমাই তৈরির দিকে ঝুঁকছেন। তবে বাজারের প্যাকেটজাত লাচ্চা সেমাইয়ের কাছে বারবার বাজার হারাচ্ছেন কারখানা মালিকরা।
জানা গেছে, চাক্তাই ও রাজাখালীতে এক সময় আমরিন সেমাই, সোনার মদিনা সেমাই, জমজম সেমাই, আঙুর ব্র্যান্ড, হরিণ ব্র্যান্ড, ভাই ভাই ব্র্যান্ড, কেবি ব্র্যান্ড, দুই আমসহ আরো কিছু কারখানা সেমাই উৎপাদন করতো। কিন্তু প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে কারখানা মালিকরা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। কারখানার সংখ্যা কমার পাশাপাশি কমেছে সেমাইয়ের দামও। বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩৫ কেজির টুকরি সেমাইয়ের দাম পড়ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। যা গত বছরের চেয়ে ২০০ টাকা কম।
চাক্তাই শিল্প বণিক সমিতির সভাপতি হারুনুর রশিদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, এক সময় বাংলা সেমাই বা লাল সেমাইয়ের জয়জয়কার অবস্থা ছিল। কালের পরিক্রমায় এই সেমাই এখন কদর হারিয়েছে। চাক্তাই–রাজখালী এলাকায় আজ থেকে ২০ বছর আগেও ৪০টির বেশি সেমাই কারখানা ছিল। তবে পর্যায়ক্রমে বন্ধ হতে হতে এখন মাত্র উৎপাদন করে ১০–১২টি কারখানা। যেসব কারখানা উৎপাদনে রয়েছে তারাও আবার খুব একটা ভালো নেই।
তিনি আরো বলেন, এখন মানুষের রুচিও পরিবর্তন হয়েছে। তাই লাল সেমাই কিংবা বাংলা সেমাই কেবল নিম্নবিত্তদের খাবারই হয়ে আছে। তবে কিছু কিছু মধ্যবিত্ত পরিবার অভ্যাসগত কারণে এই সেমাই কিনে নিয়ে যান। তাও পরিমাণেই খুবই অল্প পরিমাণে। বলা যায়, আধুনিক লাচ্চা সেমাইয়ের কাছে বাজার হারিয়ে বাংলা সেমাইয়ের কারখানাগুলো বন্ধ হতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া অনেক কারখানা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রেখে চলতে পারেনি। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরির কারণে প্রশাসনের অভিযানে কারখানা সিলগালার পাশাপাশি জরিমানাও করা হয়। এটিও কারখানা বন্ধ হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ ছিলো।
রাজাখালীর জোরান ব্র্যান্ডের স্বত্বাধিকারী আকবর হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সেমাইয়ের চাহিদা কমে গেছে। তাই বাজার মন্দা। এছাড়া গত দুই বছর ধরে দামও বাড়তি। এক সময় দূরদুরান্ত থেকে বাংলা সেমাই কিনতে আমাদের কারখানায় ভিড় করতো। এখন সেটি খুব একটা দেখা যায় না।