বাংলা ভাষার মূল্যায়ন চাই

মর্জিনা হক চৌধুরী পপি | সোমবার , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ

মাতৃভাষা স্রষ্টার এক অসাধারন দান। শিশু তার মায়ের বুলিতে নিজের পারিপার্শ্বের সঙ্গে পরিচিত হয়। পরে এর উপর ভর করে শুরু হয় শিশুর শেখার পালা। জীবনের শেষ পর্যন্ত এ ভাষাই হয় মানুষের সুখ-দুঃখ,আনন্দ – বেদনা ভাগাভাগি ও ভাব প্রকাশ করার মাধ্যম। ভাষা বহতা নদীর মতো চঞ্চল। স্থিরতা এর স্বভাব বিরুদ্ধ। পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ভাষার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট্যের কারনে কালের গর্বে কত ভাষা হারিয়ে গেছে তার কোন হদিস নেই, আবার নতুন কত ভাষার জন্ম হয়েছে তারও কোন ইয়ত্তা নেই। জীবন ও জীবনাচরণের জন্য ভাষা। জীবনবোধের ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে আঞ্চলিক ভাষার উৎপত্তি। মানুষ জন্মের পর থেকেই তার মাটি ও মাকে চিনে থাকে। সে সুবাদে মাটির সোঁদা গন্ধের পাশাপাশি বোল শিখে যায় মায়ের মুখ থেকে। এ জন্যই জীবনবোধের দর্শনে মা ও মাটি একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে ধরতে পারি। যে ভাষার সাথে একুশ শব্দটি মিশে আছে, সে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মাটির কাছাকাছি থেকে জীবন ও জীবিকা নিশ্চিত করা জরুরী। এ ভাষার জন্য দিতে হয়েছে রক্ত , বিলাতে হয়েছে তাজা প্রাণ। রক্তের দামে কেনা মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা। আমার বাংলা, আমার দুখিনী মায়ের বর্ণমালায় গাঁথা মালা।।বিশ্বের ইতিহাসে কোনো জাতি বা গোষ্ঠী তাদের মুখের ভাষা, মায়ের ভাষা রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছে এমন দ্বিতীয়টি হয়তো নেই। অথচ আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষার জন্য দিতে হয়েছে বুকের তাজা রক্ত। কিন্তু হায়! এত ত্যাগ আর জীবনের বিনিময়ে পাওয়া মুখের ভাষা আজ চোখের জলে ভেজায় তার জমিন। রফিক, সালাম, জব্বার, বরকতরা কি ভাষার অবমূল্যায়ন, অপব্যবহার, বিকৃতি করার জন্য কি জীবন দিয়েছিলো। ভিনদেশী ভাষার মিশ্রনে আমার মায়ের ভাষা বাংলার ১২ টা বাজাচ্ছে সেদিকে কারো খেয়াল নেই। বিশ্বের সব ভাষাকেই সম্মান করে বলছি, আগে আমার মাতৃভাষার ব্যবহার তারপর অন্য ভাষা।
বাংলা ভাষা ছাড়া মন উজাড় করে ভাব প্রকাশ করা যায় না। তাই সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারে মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। নিরর্থক ইংরেজি প্রবণতা এবং মাতৃভাষার প্রতি অবহেলা হীনম্মন্যতার পরিচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। যে জাতির ভাষা যত সমৃদ্ধ সে জাতি ততই উন্নত। তাই একুশের চেতনার উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাকে সব ক্ষেত্রে প্রচলনের জন্য প্রয়োজন বাংলা ভাষার জন্য একটু সদিচ্ছা। প্রয়োজন জীবন জীবিকার সাথে বাংলাকে যৌক্তিকভাবে সংযুক্ত করা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকুশ
পরবর্তী নিবন্ধআমার ভাষা আমার অহংকার