বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাড়াতে নীতি সহায়তায় জোর প্রধানমন্ত্রীর

‘আমেরিকান কোম্পানির জন্য তৈরি হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’

| বুধবার , ৭ এপ্রিল, ২০২১ at ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে দুদিক থেকে পর্যাপ্ত নীতি সহায়তা দেওয়ার উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পাঠানো ভিডিওবার্তায় দুদেশের চলমান বাণিজ্য সম্পর্ক তুলে ধরে তিনি একথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে শিল্প কাঁচামাল ও ভোক্তাসামগ্রী- যেমন তুলা, সয়াবিন ও গম রপ্তানি করতে যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো শুল্ক দিতে হয় না। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও সমপ্রসারণের জন্য উভয় দেশ থেকে পর্যাপ্ত নীতি সহায়তা দেওয়া জরুরি। বৈদেশিক সহায়তার উপর বাংলাদেশের নির্ভরতা অনেক কমলেও উল্টো দিকে লাখ লাখ যুবকের কর্মসংস্থানের জন্য প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের যে বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিয়েছে তার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বিডিনিউজের।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা ও বিনিয়োগের বাংলাদেশ আশাব্যঞ্জক গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরে তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দ্রুত সমপ্রসারণশীল দেশীয় বাজার ও ৪০০ কোটি লোকের বিশাল আঞ্চলিক বাজারের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংযোগই বাংলাদেশকে আকর্ষণীয় করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকে সহজ করতে বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে ভৌত, আইনি ও আর্থিক অবকাঠামোর উন্নতিসাধন করছে। দ্রুত শিল্পায়নের জন্য আমার সরকার ১০০টি ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠা করছে। শিল্প কারখানা গড়তে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর জন্য নিবেদিত একটি ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ আমরা তৈরি করে দিচ্ছি।
যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথে যাত্রার শক্তিশালী অংশীদার’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটি আমাদের রপ্তানির বৃহত্তম গন্তব্য, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস, দীর্ঘকালের উন্নয়ন অংশীদার এবং প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ সরকারের ‘রূপকল্প ২০২১’ এর যে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েছে তার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়াতে ‘প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম’ আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ৬০টিরও বেশি দেশে ১০০ কোটি ডলারের বেশি আইসিটি পণ্য রপ্তানি করে, যেখানে শীর্ষ গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। এসময় বাংলাদেশ নিয়ে ‘ইউএসএআইডির বিস্তৃত বেসরকারি খাত মূল্যায়ন ২০১৯’ প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আইসিটি শিল্প ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় পাঁচগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রায় পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগে আইসিটি শিল্পের জন্য ২৮টি হাই-টেক পার্ক তৈরি করছে এবং মার্কিন কোম্পানিগুলোকে আইসিটি খাতে বিনিয়োগ উৎসাহী করতে সরকার হাই-টেক পার্কের প্রস্তাব রাখছে। বক্তব্যের শুরুতে শেখ হাসিনা বলেন, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে যুক্ত হতে পেরে আমি আনন্দিত। এই অনুষ্ঠান এমন সময়ে হচ্ছে যখন আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বার্ষিকী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে; ৩০ লাখ শহিদ ও দুই লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ছাইয়ের উপর সমৃদ্ধ বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। ‘জাতির পিতার দারিদ্র্য, শোষণ ও অর্থনৈতিক বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন’ বাস্তবায়নের অসমাপ্ত কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, একদশকে, আমরা আর্থ-সামাজিক সূচকগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি। বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তি এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্দান্ত স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। বাংলাদেশ এখন ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ-আয়ের উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটিকা নেওয়ার পর অ্যান্টিবডি টেস্ট কি জরুরি?
পরবর্তী নিবন্ধএতিমখানা ছাড়া কওমিসহ সব মাদ্রাসা বন্ধের নির্দেশ