বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের লাখো মানুষের স্বপ্ন তথা গোটা বাংলাদেশের চোখ এখন এই পদ্মাসেতু ঘিরেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রতীক পদ্মাসেতু। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো এই পদ্মাসেতু। পদ্মাসেতু তৈরির মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হলো আমরা বাঙালিরাও পারি আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে। কারণ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে যা এখনো সম্ভব হয়নি তাই করে দেখিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক সময় আমাদের দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অবজ্ঞা করা হয়েছিল কিন্তু এখন সেই দেশের ঝুলিতেই (পদ্মাসেতু) রয়েছে বেশ কয়েকটি বিশ্ব রেকর্ড।
এই সেতু নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিগুলো। পানিপ্রবাহের দিক থেকে বিবেচনায় খরস্রোতা পদ্মানদীর অবস্থান বিশ্বের আমাজন (ব্রাজিল) নদীর পরেই। এর মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হলো বাঙালি চেষ্টা করলে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে বড় বড় কাজ সমাধান করতে পারে। পদ্মা সেতু নির্মাণের পুরো কাজটাই ছিল খুব চ্যালেঞ্জিং।
পদ্মা সেতু বিশ্বে যে কয়েকটি বিষয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে যা এখন পর্যন্ত কোন দেশ করতে পারেনি। প্রথমত, পদ্মা সেতুর জন্য পাইল বসানো ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। খুঁটির নিচে সবোর্চ্চ ১২২ মিটার (প্রায় ৪০ তলা ভবনের সমান) গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়েছে। এসব এসেছে চীন থেকে। যা বিশ্বে এখনো পর্যন্ত এটাই প্রথম। দ্বিতীয়ত, পদ্মাসেতুর বিয়ারিংয়ের ক্ষমতা আরেকটি বিশ্বরেকর্ড। পিলার ও সেতুর নিচের অংশের পাটাতনের মাঝে রয়েছে ১০ হাজার টনের ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’। এত শক্তিশালী বিয়ারিং পৃথিবীর আর কোনো সেতুতে নেই। রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো করে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিয়ারিংগুলো আনা হয়েছে চীন থেকে। তৃতীয় রেকর্ডটি ছিল নদী শাসন সংক্রান্ত। ১৪ কিলোমিটার (১ দশমিক ৪ কিলোমিটার মাওয়া প্রান্তে ও ১২ দশমিক ৪ কিলোমিটার জাজিরা প্রান্তে) এলাকা নদী শাসনের আওতায় আনা হয়েছে। যা আরো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাসমান ক্রেন ‘তিয়ান-ই-ইয়ান’ দিয়ে সেতুর ৪১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। যা চীন থেকে আনা হয়েছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যামার পদ্মা সেতুতে ব্যবহার করা হয়েছে। যার ওজন ৩ হাজার ৫০০ টন। বাংলাদেশসহ প্রায় ২০টি দেশের বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, টেকনিশিয়ান ও কর্মীর মেধা-শ্রম এই সেতু তৈরিতে কাজ করেছে। প্রতিটি কাজ ও প্রকল্পে দক্ষ লোক নিয়োগ দিলে তবেই আমরা কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পেতে পারি।