কোভিড মহামারীর লকডাউন উঠে গেলে বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা চাহিদার কারণে এলএনজির দাম বেড়েছে ৫০০ গুণ; এ চড়া মূল্যের মাশুল কিছুটা দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকেও, গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। বর্তমানে বৈশ্বিক জ্বালানির অন্যতম যোগান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ ও চাহিদার ফারাকের কারণে দাম আকাশচুম্বী হলে দেশে দেশে জ্বালানি নিয়ে নতুন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোতে সঙ্কট চরমে পৌঁছেছে। খবর বিডিনিউজের।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। গ্যাসের বিদ্যমান বাড়তি চাহিদা মেটাতে আন্তর্জাতিক বাজার (স্পট মার্কেট) থেকে উচ্চ মূল্যে এলএনজি কিনতে হচ্ছে সরকারকে। তবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে কোনো সঙ্কট হবে না বলে জানিয়েছেন জ্বালানি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আনিছুর রহমান।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরের মধ্যে এশিয়ার খোলা বাজারে এলএনজির দাম ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বছরের শুরুতে প্রতি এমএমবিইউটি ৮ ডলারের মধ্যে থাকলেও সম্প্রতি তা ৪০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। গত কয়েক দিনে তা আরও বেড়ে ৫০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। অথচ গত ১০ মার্চ সিঙ্গাপুরের ভিটল এনার্জির কাছ থেকে প্রতি ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট ৭ দশমিক ২১ ডলার মূল্যে এলএনজি কিনেছিল বাংলাদেশ সরকার। সর্বশেষ গত ৬ অক্টোবর গানভর সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে প্রতি ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট ৩৬ দশমিক ৯৫ ডলার মূল্যে এলএনজি কিনতে হয়েছে।
এ কয়দিনের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে (স্পট মার্কেটে) দাম আরও বেড়ে প্রতি ইউনিট প্রায় ৫০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর। যদিও আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশকে এমন চড়া মূল্যের এলএনজি আর কিনবে হবে না বলে জ্বালানি সচিব জানিয়েছেন। তবে ইতিমধ্যে স্পট মার্কেট থেকে অনেক বেশি দামে এলএনজি কেনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে; সমালোচনা করেছেন ভোক্তা অধিকারকর্মী ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম এ ক্ষেত্রে সরকারের ‘দুর্বল পরিকল্পনা’ ও ‘অদূরদর্শীতা’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। জ্বালানি নিরাপত্তায় নিজস্ব খনিজ উৎসগুলোর ওপর গুরুত্ব না দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার নির্ভরতার সমালোচনা অনেক দিন থেকেই করে আসছিলেন সরকারি কর্মকাণ্ডের বাইরে থাকা জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভোক্তা অধিকারকর্মীরা। জ্বালানির বিশ্ববাজার অস্থিতিশীল হয়ে যাওয়ায় সেই আশঙ্কার বিষয়টিই সামনে এল বলে সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য।
অধ্যাপক শামসুল বলেন, আজকের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, এবিষয়ে আমরা বহু আগ থেকেই সতর্ক করে আসছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কথায় কান দেননি। জ্বালানির এ সঙ্কটে তাদের অদূরদর্শীতা ও দুর্বল পরিকল্পনার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এ সঙ্কট থেকে যে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা নিতে হবে সেই চিন্তাও আমাদের মাঝে নেই। ক্রয় কমিটিতে একবার এলএনজি কেনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে পরে আরও চড়া দামে কিনতে হল, সেটা থেকে আমরা দূরদর্শীতার প্রমাণ দিলাম?
নিজস্ব জ্বালানি সক্ষমতা উন্নয়নের দিকে অগ্রসর না হয়ে বার বার বিশ্ববাজারমুখী হওয়ার সরকারি পদক্ষেপের সমালোচনা করেন তিনি।
জ্বালানি সচিব বলেন, আমরা সব হিসাব নিকাশ করে ডিসেম্বর পর্যন্ত চাহিদা পূরণে খুব উচ্চমূল্যে এলএনজি কিনেছি। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে পাঁচটা কার্গো আনার কথা ছিল, আমরা তিনটা কিনেছি।
পেট্রোবাংলা ও মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিদিন মোট চাহিদার ১২০ থেকে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট কম দিতে হচ্ছিল জাতীয় গ্রিডে। তখন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ডিজেল ও হাই স্পিড ফুয়েল বা ফার্নেস অয়েল দিয়ে চালাতে বলা হয়েছিল। শিল্প কারখানাতেও গ্যাস কম পাচ্ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে খোলা মার্কেট থেকে কেনার অনুমতি চায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়। তিনটা কার্গো আনার প্রস্তাব পাঠানো হয়।











