বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর অবদান অপরিসীম

| শনিবার , ৮ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়ার পর টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে টানা এতদিন ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড কারও নেই। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ১২ বছর বা এক যুগ পূর্ণ করে। ‘সরকারের রূপকল্প-২০২১-এর মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। যেসব বিবেচনায় একটি দেশ স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় থেকে উন্নয়নশীল মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে উন্নীত হয়, সেসব অর্জন করেই বাংলাদেশ এরই মধ্যে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে। নিয়মানুযায়ী ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ এলসিডি গ্রুপ থেকে বেরিয়ে আসবে। বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলা গড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে তার কন্যা ধারাবাহিকভাবে সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, তার সরকারের বিগত এক যুগের মূল্যায়ন ভবিষ্যতে হয়তো নানাভাবে করা হতে পারে।’
সাবেক সিনিয়র সচিব, বর্তমানে জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া তাঁর ‘অর্থনৈতিক অগ্রগতির এক যুগ’ শীর্ষক লেখায় বলেছেন, বর্তমান সময়ে দেশে অন্তত ১০-১২টি মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে। পদ্মা সেতুর কাজ ৮২ শতাংশ, কর্ণফুলী টানেল ৬২ শতাংশ, ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬.৭৩ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেলের কাজ ৬০ শতাংশের ঊর্ধ্বে সমাপ্ত হয়েছে। ২০২২-২৩ সালের মধ্যে এ দুটো মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যায়। জাপানের সহায়তায় মেঘনা-গোমতী নদীর ওপর আগের সেতুর তুলনায় প্রশস্ত আরও একটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন নদীর ওপর ১৫০০ মিটার কম দৈর্ঘেরে অসংখ্য সেতু নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম ৪০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
হাওড়ের পানি চলাচলে যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সেজন্য এ সড়কে অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট স্থাপিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জের সঙ্গে মিঠামইনের সংযোগের জন্য প্রায় ১২ কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা শহরের ওপর যানবাহনের চাপ কমানোর জন্য ঢাকা ইস্ট ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-আরিচা ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ককে যুক্ত করে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ও মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ আরও অন্যান্য মেগা প্রকল্প চলমান থাকায় করোনাকালে কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক সুবাতাস দিচ্ছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের এ পর্যায়ে শিল্পায়ন ও ভোগ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এরূপ মুদ্রাস্ফীতি সহনীয় বলা চলে। বিনিয়োগ সুবিধাসহ ব্যাংক ঋণের কোনো অপ্রতুলতা নেই। মুদ্রা সরবরাহ স্থিতিশীল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বরাবরই পর্যাপ্ত ছিল, যা বর্তমানে রেকর্ড ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। তবে ব্যাংক ঋণ ও জামানতের সুদের হার ৯-৬-এ বেঁধে দেওয়ায় ব্যাংকগুলো চাপের মধ্যে রয়েছে এবং আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে প্রতি বছর গড়ে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। যদিও সামপ্রতিক বছরগুলোতে অর্থ বিভাগ কর্তৃক দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব কম আহরিত হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনা মহামারির কারণে রাজস্ব আহরণে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কর জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজস্ব আহরণে আরও গতি সঞ্চার করতে হবে।
ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষেত্রেও দেশে ইতিবাচক ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, আইসিটি রপ্তানি ২০১৮ সালেই ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে আইসিটি খাতে রপ্তানি ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অনলাইন শ্রমশক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সারের আউটসোর্সিং খাত থেকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে। ৩৯টি হাই-টেক বা আইটি পার্কের মধ্যে ইতিমধ্যে নির্মিত ৯টিতে দেশি-বিদেশি ১৬৬টি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে বিনিয়োগ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং কর্মসংস্থান হয়েছে ২১ হাজার, মানবসম্পদ উন্নয়ন হয়েছে ৩২ হাজার। নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ হাজার ৫০০ নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ২০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ স্যাটেলাইটের এলিট ক্লাবের সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান অপরিসীম। তাঁর অবদানের কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাঁর সাফল্য জনগণের সাফল্য। সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে আমরা জানাই অভিনন্দন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে