বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন যাত্রা, বড় প্রাপ্তি

| শুক্রবার , ২৬ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:৪৪ পূর্বাহ্ণ

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হতে বাংলাদেশের উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অনুমোদিত হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম প্লেনারি সভায় বুধবার (২৪ নভেম্বর) এ ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এমন অর্জনকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত উল্লেখ করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সময় এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আমাদের কী হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক বিবৃতিতে এ ঐতিহাসিক অর্জনকে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রার এক মহান মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের জাতির পিতা, মহান স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের মাধ্যমে এই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী বিবৃতিতে উল্লেখ করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের যে অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন যাত্রা, এটি তারই একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এই সাফল্যের অংশীদার এ দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষ।
উল্লেখ্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ বা গ্রাজুয়েশনের মানদণ্ড পূরণের মাধ্যমে উত্তরণের সুপারিশ লাভ করেছিল। সিডিপি একইসঙ্গে বাংলাদেশকে ২০২১ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরব্যাপী প্রস্তুতিকালীন সময় প্রদানের সুপারিশ করেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ ইতোমধ্যে সিডিপির সুপারিশ অনুমোদন করেছে। আশা করা হচ্ছে, পাঁচ বছর প্রস্তুতিকাল শেষে বাংলাদেশের উত্তরণ ২০২৬ সালে কার্যকর হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত উত্তরণের তিনটি মানদণ্ড পূরণের মাধ্যমে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের এই অর্জন বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে এবং আরও অধিকতর উন্নয়নের যাত্রাকে ত্বরান্বিত করবে। প্রস্তুতিকালীন এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
বিশ্লেষকরা বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে আরও মর্যাদাশীল জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ উন্মোচিত হলো। বিশ্বের প্রতিটি দেশ এখন বাংলাদেশকে আরও সম্ভ্রমের চোখে দেখবে, পাশাপাশি সমীহ করবে- যা এ দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গর্বের। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের ভাবমূর্তির আরও বৃদ্ধির পাশাপাশি বিশ্বদরবারে বিভিন্ন দরকষাকষিতে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্ত হবে। এ ছাড়া ভাবমূর্তি উন্নয়নের ফলে বৈদেশিক ঋণ পাওয়াও সুবিধাজনক হবে। যেসব দেশ এখন পর্যন্ত স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে উত্তীর্ণ হয়েছে, তাদের প্রায় প্রতিটির ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বেড়েছে। সাধারণত উন্নয়নশীল দেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আস্থা পায়। তাই উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার ফলে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে ব্যাপক শিল্পায়ন হবে বলে আশা করা যায়। এতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহের ফলে একদিকে যেমন আমাদের রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে; যা দেশের বেকারত্ব সমস্যা দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অনেক দেশের সঙ্গে নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বারও উন্মুক্ত হবে’।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। এগুলো হলো- মাথাপিছু আয়, মানব সক্ষমতা ও অর্থনৈতিক ভঙ্‌গুরতা। বাংলাদেশ ২০১৮ সালে এবং ২০২১ সালে সব শর্ত পূরণ করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ বলছে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের অবস্থান থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য প্রস্তুত। বাংলাদেশ চাইলে আগামী তিন বছর বা ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হতে পারে, আর তা না হলে হয়তো আরও কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থসামাজিক যে অবস্থান তাতে তাকে স্বল্পোন্নত দেশ বলার অবকাশ নেই। স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল ও উন্নত রাষ্ট্রের যে বিভাজন, এর চেয়ে অর্থবহ বিভাজন হলো স্বল্প আয়ের দেশ, মধ্যম আয়ের দেশ ও উঁচু আয়ের দেশ। এই বিভাজন স্পষ্ট করে কোন দেশ কোন অবস্থানে রয়েছে। সেই হিসেবে বাংলাদেশ কয়েক বছর আগে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে গেছে। এখন আমরা এগিয়ে যাচ্ছি মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের দিকে। আশা করা যায়, ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা এ লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবো।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অর্থনীতির শক্তিমত্তা প্রমাণিত হয়েছে। গত পাঁচ দশকে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সামপ্রতিক সময়ে চলমান কোভিড-১৯ মহামারীতে পর্যুদস্ত হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ অর্থনীতি তার সহনশীলতা দেখিয়েছে এবং প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বেশির ভাগ দেশের চেয়ে ভালো করেছে। তবে মহামারীর অভিঘাত থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে আরো বেশি কাজ করতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের সুপারিশ অনুমোদনের মাধ্যমে আমাদের দেশ অন্য এক মাত্রায় পৌঁছে গেছে। এখন আরো অগ্রগতি ও মসৃণ উত্তরণের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, যাতে এ অর্জন সংহত ও টেকসই হতে পারে এবং উন্নয়ন দেশের নাগরিকদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে