বাঁশ আর বাঁশি

স্বরূপ বিকাশ বড়ুয়া বিতান | বৃহস্পতিবার , ২৬ মে, ২০২২ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

বাঁশির জন্ম শুধু কাঁদাতে নয় মন ভালোর জন্যও খুব উপকারী মহৌষধ। শুষির বাদ্যযন্ত্র বাঁশ, কাঠ বা অন্য প্রকার ধাতব পদার্থ দিয়ে বানানো হয়। হাওয়া, মুখের ফু দ্বারা ধ্বনির উৎপত্তি করা হয় তাকে শুষির বাদ্যযন্ত্র বলে। যেমন- সানাই, বাঁশের বাঁশি, ভেরী, বীণ, শঙ্খ, শিঙ্গা ইত্যাদি।

হিন্দুস্তানী উচ্চাঙ্গসংগীতে বহুল ভাবে ব্যবহৃত হয় বাঁশি বা বাঁশরি। বাউল আর বাংলা সংস্কৃতির আবহমান কালের ধারা কীর্তনে, উচ্চাঙ্গসংগীত রাগ বেহাগে বাঁশির মূলপ্রতিপাদ্য কোথায় নেই। হিন্দু পুরাণে লিখা আছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বাঁশি বাজাতেন, সে বাঁশি এক যাযাবর তাকে দিয়েছিলেন এবং তাকে সে বাঁশি বাজানো শিখিয়ে দিয়েছিলেন। আর সে বাঁশির মোহন সুরে সর্বৌষধ বিরাজ করতো, পাপীর পাপ মুছে যেতো, অসুস্থ গবাদি পশু সুস্থ হয়ে উঠত, আবার কৃষ্ণ লীলায় সে বাঁশির কথা উল্লেখ আছে। হেমন্তের বিখ্যাত গান ‘যখন বাজতো বাঁশি, তখন রাঁধে যেতো যমুনায়’। এখানে প্রেম বা বিরহ আছেই, পথ্য হিসেবেও দেখানো হয়েছে বাঁশিকে।

আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ভালো বাঁশি বজাতেন, তিনি বিশ্ব কবি রবি ঠাকুরকে বাঁশির সুর শুনাতেন। কবি লিখেছেন ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি, আরেক হাতে রণ তূর্য’। উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সংগীতের দিকপাল ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ বাঁশি বাজাতেন ওনার সুযোগ্য শিষ্য পান্না লাল ঘোষ যিনি বাংলা বাঁশিকে এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠা করেছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে বর্তমান বংশী বাদক আধুনিক বাঁশির রূপকার হরি প্রসাদ চৌরসিয়া বাঁশের বাঁশিকে আধুনিক রূপ দিয়েছেন। চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান একুশে পদক প্রাপ্ত বংশী বাদকের নাম ওস্তাদ ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলাম সংগীতে অবদানের জন্য ঐ সম্মানে সম্মানিত হন। বাংলাদেশের খ্যাতিমান যাদুশিল্পী জুয়েল আইস্‌ ভালো বাঁশি বাজান তিনি সুরের মূর্ছনায় যাদুতে বিমহিত করে রাখেন দর্শকদের।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী প্রয়াত এস,এম সুলতান দারুণ বাঁশি বাজাতেন। আবার বাউল সম্রাট শাহ্‌ আবদুল করিম গাইতেন আর বাঁশিতে সুর তুলতেন, বাংলা সংগীতের আরেক দিকপাল প্রয়াত বারী সিদ্দিকীও ভালো বাঁশি বাজাতেন, তাই তিনি লিখে ও গেয়ে গেছেন’। আমার অনেক বাঁশের বাঁশি আছে মিছে কেনো কিনবি চাটাই বাঁশ, আমি বারী বাঁশরীয়া বাঁশি যে মোর প্রাণ প্রিয়া’। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের বাঁশি বাদকের নাম জালল আহম্মেদ প্রত্যেকটা টিভি চ্যনেলে তার সম্মোহনী বাঁশির সুরে পুরো বাংলাদেশকে সম্মোহিত করে রাখে। হ্যামিলনের বাঁশির সুরের করুন কাহিনি আজও মনকে নাড়া দেয়। আমার মাতামহ সুরকার গীতিকার প্রয়াত বাবু রাম দুলাল বড়ুয়া ভালো বাঁশি ও সানাই বাজাতেন।

শীতের ভোর সকালে দাদু বাঁশির সুরের মূর্ছনায় ঘুম ভঙ্গাতেন। সে সুর যেনো আজো কানে বাজে। বাঁশের বাঁশির আটটি ছিদ্র থাকে সে আটটি ছিদ্রে ৩৬ রকম লয় থাকে আর ২৬ রকমের সুর তোলা যায়। আবার এর মধ্যে প্রশিক্ষণ ছাড়াও বাঁশি বাজান যারা তারা শুধু বাজাতে বাজাতেই বাদক। বাঁশি কিন্বা বাঁশরি বেণু কিন্বা বংশী, কলমি আর পাতা মৃগশিশু বাঁশি এতো সহজ নয়। মন হারিযে যাওয়া সুরের নাম মোহন বাঁশি। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির সুরে রাধারাণী পাগলিনী হয়ে বৃন্দাবন ছুটে যেতেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ
পরবর্তী নিবন্ধকোন পথে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম