বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করায় আগেই দুর্ঘটনার শঙ্কা প্রকাশ করেছিল শ্রমিকরা

খাগড়াছড়িতে ছাদ ধসে দুজনের মৃত্যু

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১১ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নতুন ভবনের কেন্টিলিভার (পার্কিং শেড) নির্মাণে সাটারিংয়ের জন্য ব্যবহার করছে বাঁশের খুটি। বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করায় আগেই দুর্ঘটনার শঙ্কা প্রকাশ করে ঢালাইয়ের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের বেডে শুয়ে সেদিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন নির্মাণ শ্রমিক মো. রোকন ও মো. হানিফ। তারা বলেন, মাটি থেকে বিশ ফুট উপরের ছাদে ঢালাইয়ের সাটারিং বাঁশের খুটি দিয়ে হয় না। আমরা যখন কাজ করতে উঠছিলাম তখনই আমাদের ভয় লাগছিল। বিষয়টি আমাদের মাঝি (যিনি শ্রমিকদের তদারিক করেন) জালালকে জানিয়েছিলাম। মাঝিকে জানানোর আধা ঘন্টা পরই ছাদ ধসে পরে। তারা আমাদের কথা শুনেনি। সাটারিংয়ের দুর্বলতা ছিল।’ ছাদ ধসে রোকন বুকে ও পায়ে আঘাত পায়। এছাড়া হানিফের পা ভেঙে গেছে। চোখেও আঘাত পান তিনি। হাসপাতালের চিকিৎসা নেয়া মো. সোহেল জানান, ঢালাইয়ের এক পর্যায়ে বাঁশের খুঁটি ছাদের লোড নিতে পারে নাই। এসময় হঠাৎ করেই ছাদ ধসে পরে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী প্রশান্ত কুমার হালদার বলেন, ঘটনার দিন আমি পূজার ছুটিতে ছিলাম। এখানে দায়িত্বে ছিল পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী জিকো দেওয়ান। ছাদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ছিল ২৮ ফুট বাই ২৮ ফুট। দুর্ঘটনা তো যে কোনো কারণেই হতে পারে। বাঁশের খুঁটি না দিয়ে লোহার পাইপ দিলেও দুর্ঘটনা হতে পারত। তবে সাটারিংয়ের ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ছাদটি মাটি থেকে অতন্ত ২০ ফুট উঁচু ছিল।
তিনি জানান, শেড নির্মাণের জন্য এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা নামে এক ঠিকাদার কাজ পেলেও, কাজটি বাস্তবায়ন করছিল প্রণত মিত্র চৌধুরী নামে এক উপ-ঠিকাদার। পার্কিং শেড ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের জন্য নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকার বেশি।
নির্মাণ কাজের ঠিকাদার এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, শেড নির্মাণের কাজটি পেয়েছিল আমার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে উপ-ঠিকাদার হিসেবে বাস্তবায়ন করছিল চট্টগ্রামের ঠিকাদার প্রণত মিত্র চৌধুরী। ঠিকাদার প্রণত মিত্র চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরবর্তীতে তাকে হোয়াটসআপে করা টেঙট সিন করলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। ঘটনার তদন্তে পৃথক দুটি কমিটি করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আমিনুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক কতৃর্ক মনোনীত প্রতিনিধি, পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান কর্তৃক একজন নির্বাহী প্রকৌশলী, কমিটির সদস্য সচিব হলেন -মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব আশীষ কুমার সাহা।
৯ অক্টোবর গঠিত হওয়া কমিটিকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।
অন্যদিকে ছাদ ধসে দুই শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পার্বত্য জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী জানান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সমপ্রসারিত ভবনের কেন্টিলিভার (পার্কিং শেড) নির্মাণের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন ও দায় দায়িত্ব নিরুপণের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। জেলা পরিষদের সদস্য কল্যাণ মিত্র বড়ুয়াকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী এবং খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগ নির্বাহী প্রকৌশলী।
আগামী সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে নিহতদের ১ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিবে জেলা পরিষদ।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস । তিনি বলেন, নির্মাণ জনিত ত্রুটির কারণে এমনটি হয়েছে। কারো গাফিলতি ছিল কিনা তাও বের করা হবে। মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি হয়েছে। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দায়ীদের খুঁজে বের করা হবে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার বিকেলে জেলা পরিষদের সমপ্রসারিত ভবনের ছাদ ধসে সাজ্জাদ হোসেন ও সাইফুল ইসলাম নামে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরো ৫ শ্রমিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজন্মের পরপরই মিলবে এনআইডি আইন হচ্ছে
পরবর্তী নিবন্ধবরের সাজে বিজয় গেল শ্মশান ঘাটে