বাঁশখালীর পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ের ঢালে মাল্টা চাষে সফল হচ্ছে চাষিরা। ফলে অতি অল্প সময়ে এ বারি মাল্টা-১ চাষে সফল হয়ে বাজারে তুলতে সক্ষম হয়েছে কৃষক। বাঁশখালীর প্রতিটি হাটে-বাজারে এখন দেশি মাল্টা চোখে পড়ার মতো। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালীতে বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ২০ জন এ চাষ করলেও ২০০ জনের অধিক মাল্টা চাষ করছেন। যাদের প্রতিনিয়ত কৃষি অধিদপ্তর থেকে নানা ভাবে তদারকিসহ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
জানা যায়, মে-আগস্ট মাস মাল্টা চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে উপযুক্ত পরিবেশে সেচ নিশ্চিত করা গেলে বছরের যেকোনো সময়ে ও মাল্টার চারা লাগানো যায়। বারি মাল্টা-১ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত জাত। মার্চ -এপ্রিল মাসে ফুল আসে এবং অক্টোবর মাস ফল আহরণের উপযুক্ত সময়। বিঘা প্রতি ৬০/৭০ মণ এবং গাছ প্রতি ৩০০/৪০০ টি ফল পাওয়া যায়। ফলের গড় ওজন ১৫০/২০০ গ্রাম হয়ে থাকে। বারি মাল্টা-১ জাতটি উচ্চফলনশীল হওয়ায় নিয়মিত ফল ধারনে সক্ষম। পাকা ফলের রং সবুজ, শাঁস হলুদাভ, রসালো, মিষ্টি এবং সুস্বাদু যার মিষ্টতা ৭.৮% হয়। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ওচমান গনি ছিদ্দিকী বলেন, কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সবসময় কৃষি ও কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ফলজ বাগান সৃজনশীল করার পাশাপাশি কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের চারা সারসহ প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কৃষকের কাছে থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া, ফল বাগানে যেসব প্রযুক্তির মাধ্যমে ডালপালা ছাঁটাই, বছরে দুইবার বর্ষার আগে ও পরে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ, গাছের গোড়ায় মালচিংকরণ, ফল পাতলা করণ, ফল ব্যাগিং, পানি তেউড় ডগা দেখা দেওয়া মাত্র কেটে ফেলাসহ রোগ বালাই ও পোকামাকড় দমন বিষয় নিয়ে। প্রতি পাড়ায় বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে গ্রুপ করে কৃষক/কৃষাণীদের প্রতিনিয়ত কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে বৈলছড়ির পাহাড়ে বহুমুখী বাগানসহ মাল্টা চাষ করে সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে সফল চাষি মো. ওসমান। তিনি ২০১৮ সালে এনএটিপি-২ প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি চারা দিয়ে মাল্টা বাগান শুরু করে এক বিঘা জমিতে। তিনি জানান, তিন বছরের মধ্যে বাগানের মাল্টা বাজারে বিক্রি করতে সক্ষম হন। বর্তমানে তার মাল্টা বাগানের থোকা থোকা মাল্টা যে কারো নজর কাড়বে। বর্তমানে তিনি বাজারে বিক্রি করছেন এ মাল্টা। এছাড়া তার ২ বিঘা বারি মাল্টা-১, থাই পেয়ারা ১ বিঘা, চায়না ৩ জাতের লিচু ৫ বিঘা, পেঁপে ১০ বিঘা, দেশীয় জাতের সাগরকলা ২ বিঘা ছাড়াও আম্রপালী আম, জাম, শরীফা, ডালিম, চায়না কমলাসহ হরেক রকমের ফলদ গাছ রয়েছে। তার বহুমুখী বাগান ও উৎপাদন সবার নজর কাড়ছে। তার দেখাদেখি আশেপাশের অনেক কৃষক ফল বাগানে আকৃষ্ট হয়ে নানামুখী ফল বাগান করছে।
কৃষক ওসমানের মতো কৃষক গফুর, ইউনুচ, শফিকুর, আবুল হাশেম, ছগীর, রফিক, আবদুল মালেক, মাহমুদুল, আবু তাহেরসহ অনেকে মাল্টা বাগানে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এদিকে বাঁশখালীর পুকুরিয়ার চেয়ারম্যান আহসাব উদ্দিন বাণিজ্যিকভাবে এবং বৈলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন শখের বশে মাল্টা চাষ করে সবার নজর কেড়েছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শ্যামল সরকার বলেন, কৃষকদের আধুনিক ও সময়োপযোগী করতে মাঠে রয়েছি আমরা। ফলে সহজে যেকোনো সমস্যা সমাধানের সুযোগ পাচ্ছে। আর বাঁশখালী একটি উর্বর এলাকা। যেখানে বছরের বার মাস নানা ধরনের সবজি ফলানোর উপযুক্ত স্থান ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক বলেন, বর্তমানে বাঁশখালীর পূর্বের পাহাড়ি এলাকায় বাণিজ্যিক ও সাধারণভাবে প্রায় ২শর অধিক চাষে মাল্টা চাষ করছে।
এ চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়া এখানকার চাষিরা লাভবান হচ্ছে। আর কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ, উন্নত জাতের চারা সরবরাহ, সার প্রদান থেকে শুরু সামগ্রিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। তিনি জানান, বাঁশখালীর ১২টি ইউনিয়নে কৃষি সম্প্রাসারণ অফিস রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক ফসল তদারকি করছেন।