‘বহিরাগত সন্ত্রাসী’ প্রশ্নে কঠোর সিএমপি

নির্বাচন সামনে রেখে বেড়েছে চেকপোস্ট, ব্লকরেইড

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ at ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ

সিটি নির্বাচনে ভাসমান ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাথাব্যথার কারণ। এই সন্ত্রাসীরা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার জন্য প্রধান হুমকি হয়ে উঠছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতোমধ্যেই একাধিক বৈঠক করেছেন তারা। প্রতিটি বৈঠকেই দিক নির্দেশনামূলক আলোচনা হয়েছে। ইতোমধ্যে থানায় থানায় মিটিং হয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হচ্ছে ভাসমান ও বহিরাগত অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে রাখা। নগরীতে কী পরিমাণ ভাসমান অপরাধী রয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এসব অপরাধীর নির্দিষ্ট কোনো আবাস নেই। এদের স্থায়ী ঠিকানা নেই। আবার বাইরে থেকে যারা আসছে তারাও এক এক সময় এক এক স্থানে অবস্থান করছে। ফলে এসব অপরাধীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি কিছুটা জটিল।
বহিরাগত ও ভাসমানদের মাধ্যমে নগরীতে সহিংসতা ঘটানোর চেষ্টা সম্পর্কে সিএমপি কমিশনার সালেহ্‌ মোহাম্মদ তানভীর আজাদীকে বলেন, একটি এলাকায় বিশেষ জেলার বাসিন্দাদের আধিক্য থাকতে পারে, এটা এক বিষয়। আবার বহিরাগত অস্ত্রধারীরা এসে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বানচালের চেষ্টা করতে পারে, এটা আরেক বিষয়। আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইছি – কারা আসতে পারে কিংবা কোন জেলা থেকে আসতে পারে সেটা আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রবেশমুখে আমরা চেকপোস্ট বসিয়েছি। আবাসিক হোটেলগুলোয় আমরা স্পেশাল ড্রাইভও দিচ্ছি। সাময়িকভাবে দুষ্কর্ম করতে কেউ এসে কোথাও আশ্রয় নিয়েছে কি না সেটা আমরা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি। অপরাধ করার উদ্দেশ্য নিয়ে বহিরাগত কেউ এসে চট্টগ্রামে অবস্থান করলে আমরা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করব। শহরে আমরা চেকপোস্ট তিনগুণ বাড়িয়ে দিয়েছি। ব্লকরেইড করা হচ্ছে। সবকিছু আমরা করছি, পুলিশি কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়ে সবার মাঝে একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়া যে, আমরা কাউকে ছাড় দেব না। আমরা কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণায় কাউকে নিরুৎসাহিত করছি না। এটা একেবারে উন্মুক্ত আছে-বলেন সিএমপি কমিশনার। একাধিক সূত্র জানায়, নগরীতে যেসব ছিনতাই, পকেটমার, চুরি, ডাকাতির ঘটনা ঘটে তার বেশির ভাগের সাথে জড়িত এই ভাসমান সন্ত্রাসীরা। ভাড়াটে খুনি হিসেবেও এরাই কাজ করে থাকে। সূত্র জানায়, এদের মধ্যে কিছু সন্ত্রাসী রয়েছে যারা নগরীতেই শুধু নয়, নগরীর বাইরে গিয়েও অপরাধ করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এরা ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করে। নির্বাচন উপলক্ষে এসব সন্ত্রাসী বসে নেই। জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে এবং ভাড়াটে হিসেবে তারা কারো-না-কারো পক্ষে কাজ করছে। ইতোপূর্বেও দেখা গেছে নির্বাচনকেন্দ্রিক এসব সন্ত্রাসীকে ভাড়ায় খাটতে। এদের সাথে যুক্ত হয়েছে বাইরে থেকে আসা সন্ত্রাসীরা।
গত ২২ জানুয়ারি কোতোয়ালী থানা পুলিশ নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন এ প্রসঙ্গে আজাদীকে বলেন, গ্রেপ্তার ছয়জন বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে চট্টগ্রাম শহরে এসেছিলেন। তারা বহিরাগত। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলাও রয়েছে। বৃহস্পতিবার তারা যুবদলের একটি মিছিলে অংশ নেয়। যুবদলের ওই মিছিলে আরও বিপুল সংখ্যক বহিরাগত ছিল। নাশকতার মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে এ বহিরাগতদের নগরীতে জড়ো করা হয়েছিল।
পাঠানটুলীতে ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর এবং বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আজগর আলী বাবুল নামে একজন নিহত হন। স্থানীয়দের তথ্য মতে ওই সংঘর্ষে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ অংশ নিয়েছে। তাদের মধ্যে হেলাল নামে একজন গ্রেপ্তার হয়েছে, যাকে পিস্তল হাতে সংঘর্ষে গুলি করতে দেখা গেছে। সে ফেনীর প্রভাবশালী এক নেতার ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। গত ২০ জানুয়ারি পাঠানটুলী থেকে অস্ত্রসহ দুই দাগী সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে বলেন, অর্জুন দে ও হারুনকে অস্ত্র, গুলি ও ছোরাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের পাঠানটুলীতে নিয়ে আসা হয়েছে। এর মধ্যে অর্জুন ২০১৪ সালের নায়েক ফরিদ নামে এক পুলিশ সদস্য হত্যা মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, দস্যুতাসহ চারটি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে হারুনের বিরুদ্ধে অস্ত্র, দস্যুতাসহ তিনটি মামলা রয়েছে। তাদের সাথে আসা আরো কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছে তারা। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।
২০ জানুয়ারি নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার অঙিজেন এলাকা থেকে মো. ফরহাদ উদ্দিন প্রকাশ মজনু (২৯) নামে এক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সিএমপির সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ জোন) পরিত্রান তালুকদার আজাদীকে জানান, নির্বাচনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে অঙিজেন এলাকায় অবস্থান করছিল ফরহাদ। তার বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় হত্যাসহ মোট ৫টি মামলা রয়েছে।
২০ জানুয়ারি নগরীর পাহাড়তলী থানার নোয়াপাড়া এলাকা থেকে অস্ত্রসহ মো. ফারুক (২১) ও মো. মালেক (২১) নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ফারুকের বিরুদ্ধে পাহাড়তলী থানায় ২টি ও মালেকের বিরুদ্ধে একই থানায় ১টি মামলা রয়েছে।
নগরীর লালখান বাজারে সংঘর্ষের ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ১৬ জানুয়ারি ‘কিশোর গ্যাং লিডার’ মো. শরীফকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপ-কমিশনার আলী হাসান জানান, শরীফের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচীন যেভাবে সামাল দিল মহামারি
পরবর্তী নিবন্ধআমার নাম আগে এলে আমিও টিকা নেব : জাফরুল্লাহ