চীন যেভাবে সামাল দিল মহামারি

উহানে লকডাউনের এক বছর

| শনিবার , ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ at ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ

এক বছর আগে আজকের এই দিনে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর প্রথম লকডাউন করা হয়। ধারণা করা হয়, এই শহর থেকেই প্রথম করোনাভাইরাস মহামারির রূপ নেয়। সেই সময়ে বিশ্ববাসী এই কঠিন বিধিনিষেধ এবং সেটার কঠোর বাস্তবায়নে হতবিহ্বল হয়।
জানুয়ারির শেষ দিক থেকে জুন পর্যন্ত উহানকে দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। এই সিদ্ধান্তের উচ্চ মূল্য দিতে হয়েছে। তবে দিন শেষে এই ভাইরাস মোকাবেলা করার একটা সফল কৌশল হিসেবে দেখা হয়েছে। এক বছর হতে চলেছে, ভাইরাস মোকাবেলায় চীন সফল হিসেবে ধরা হয়। খবর বিবিসি বাংলার।
চীন যেভাবে সংক্রমণ ঠেকাল : ২০১৯ সালের শেষের দিকে যখন প্রথম এই রোগের প্রাদুর্ভাব হয়, তখন দেশটির কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক অসুস্থতা বলে এর ব্যবস্থা ধীরে নিয়েছিল। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ছিল চীনের নতুন বর্ষ পালনকে কেন্দ্র করে প্রচুর ভ্রমণ করে মানুষ। চীন সেটায় বাধা দেয়নি।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা স্বাধীন প্যানেল একটা অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে বলেছে, কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিতে ধীর গতিসম্পন্ন ছিল। তারা চীনের সেই সময়কার প্রতিক্রিয়াকে সমালোচনা করেছে। কিন্তু যখন চীন বুঝতে পারে এটা একটা সমস্যা, তখন কর্তৃপক্ষ সেটা কঠোরভাবে দমন করার উদ্যোগ নেয়। জানুয়ারির ২৩ তারিখ। চীনের নতুন বছর উদযাপনের দুদিন আগে উহানের রাস্তা জনশূন্য হয়ে পড়ে। ১১ মিলিয়ন লোককে কঠোর কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। মুখের মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়ে তারা মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে বিশাল ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করে ফেলে।
উহানের বাসিন্দা উয়েজাং ওয়াং জানান তিনি কতটা ভীত ছিলেন। তিনি বলেছেন, সেই সময় তার চাচা কীভাবে মারা গিয়েছিল, তারা বাবা-মা অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মেডিকেল সহায়তা পাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব।
উহান যে কৌশলে ভাইরাস মোকাবেলা করছিল সেভাবে চীনের অন্যান্য বড় শহর বেইজিং এবং সাংহাই তাৎক্ষণিক লকডাউন এবং ব্যাপক হারে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়। ইতোমধ্যে চীন সেদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠিন নিয়ম এবং কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থা করে। কিন্তু প্রথম দিকে কর্তৃপক্ষ ভাইরাস সংক্রমণের খবরটা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে ব্যাপারেও ছিল কঠোর। যেসব চিকিৎসক একে অপরকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছিল, তাদের তিরস্কার করা হয়েছিল এবং তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যাতে করে তারা নীরব থাকে। এদের একজন ছিলেন ডা. লি ওয়েনলিয়াং। তিনি এই ভাইরাস সংক্রমণে মারা যান।
সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রাথমিকভাবে কিছু প্রতিবেদন করতে পারছিল। কিন্তু নাগরিক সাংবাদিক যারা উহান থেকে খবর দিচ্ছিল তাদেরকে চুপ থাকতে বলা হয়। সমপ্রতি এদের একজনকে চার বছরের জেল দেয়া হয়েছে।
চীনের এই কঠোর পদক্ষেপ মানুষের কাছে প্রথম দিকে কঠিন মনে হয়েছিল। কিন্তু এক বছর পর অফিসিয়াল তথ্যে দেখা যাচ্ছে, তাদের পদক্ষেপের ফলে তুলনামূলক কম মৃত্যু এবং শনাক্তের হার কম হয়েছে। চীনে করোনায় এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৮শ জন মারা গেছে। সংক্রমিত হয়েছে ১ লাখ লোক। এদিকে এক বছর পর উহানে জীবন অনেকটাই স্বাভাবিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহালিশহরে বাস কাউন্টারে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধ‘বহিরাগত সন্ত্রাসী’ প্রশ্নে কঠোর সিএমপি