বহিঃশক্তির রিমোট কন্ট্রোলে পরিচালিত হয়ে লাভ নেই

বিএনপিকে শিক্ষা উপমন্ত্রী ।। সিএমপির জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২০ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকার কোনো বহিঃশক্তির তাঁবেদারি করে না। আরেকটি পনেরই আগস্ট চাইলেও সফল হবে না। তাই বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাই, শেখ হাসিনার সরকারের সাথেই আলোচনা করতে হবে। বহিঃশক্তির রিমোট কন্ট্রোলে পরিচালিত হয়ে লাভ নেই। তিনি বলেন, নির্বাচনকে মাথায় রেখে পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের মতো একটা অবস্থা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। প্রতি বছর আগস্ট মাস এলেই এ চেষ্টা হয়। গতকাল শনিবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এখন প্রচার করা হচ্ছে জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীর সদস্যদের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। জনপ্রিয় সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে জনপ্রিয় সামরিক বাহিনী কী করে ২৬টা ক্যু করে? এই ব্যক্তি অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে প্রায় ১৩০০ অফিসারকে ফাঁসি দেয়। সে জনপ্রিয় হলে এ ধরনের নির্মম হত্যাযজ্ঞ কী করে চালায়? এতেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের সংবিধান, বাংলাদেশের রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি তারা এতটাই অনুগত ছিল যে, অবৈধতাকে তারা প্রশ্রয় দেয় নাই, তারা চ্যালেঞ্জ করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, আগামীতেও আমাদের পুলিশ বাহিনীসহ প্রতিটি বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপস করবে না। সভায় সভাপতিত্ব করেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরেআলম মিনা, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মহানগর ইউনিটের কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ, জেলা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার এ কে এম সরওয়ার কামাল প্রমুখ।

শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, আজকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্যতম কারণ গুড পুলিশিং। একটি দেশের অর্থনীতি কখনোই এগিয়ে যেতে পারে না, যদি সেই দেশের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়। আমাদের দেশের পুলিশ বাহিনী কিন্তু প্রান্তিক অঞ্চল থেকে শহরাঞ্চল পর্যন্ত, বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলসমূহে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশাল অবদান রেখে চলেছে। গুড পুলিশিং না থাকলে গুড ইকোনমি হয় না। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেজন্যই পুলিশ বাহিনীসহ প্রতিটি বাহিনীতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন, ক্যাপাসিটি ডেভেলপ করাচ্ছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে এ কাজটি করেছিলেন।

তিনি বলেন, তারেক জিয়া খুব ভালো করেই জানে, সে কখনোই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। নির্বাচনে বিজয়ী হলেও পারবে না। আইনগতভাবে সেটা সম্ভব নয়। তাই সে কীভাবে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নির্বাচন ভণ্ডুল করবে সে চেষ্টা করে চলেছে।

প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, পনেরই আগস্ট জাতির জীবনে এক কলঙ্কিত দিন। এ কলঙ্ক কখনো মোছা যায় না। বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন ব্যাপার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে চেয়েছিল ঘাতক চক্র। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে নিঃশেষ করা যায় না। বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশ, তার কন্যা দিয়েছেন সমৃদ্ধ এক স্মার্ট বাংলাদেশ।

ডিআইজি নুরে আলম মিনা বলেন, ১৯৭৫এর পটভূমি বর্তমানেও দেখতে পাচ্ছি। প্রাসাদ ষড়যন্ত্র পলাশীর যুদ্ধেও দেখেছি। ৭৫এ খন্দকার মোশতাকসহ অন্যান্যদের ষড়যন্ত্র দেখেছি। পনেরই আগস্টের প্রেক্ষাপট আর যেন রচিত না হয় সেজন্য আমাদের পুলিশ বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে।

আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, আমার দৃষ্টিতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু সেই মানুষ, যিনি বলেছিলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও বলবো আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার নিঃশ্বাসেপ্রশ্বাসে।’ জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু আরো বেশি জীবন্ত হয়ে প্রতিনিয়ত প্রেরণা যুগিয়ে চলেছে বাঙালি মননে। তিনি বলেন, শোকের মাস আগস্টকে আমি দেখি শোককে শক্তিতে রূপান্তরের মাস হিসেবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও বঙ্গবন্ধু ও তার কর্মযজ্ঞ পূর্ণ অবয়বে উদ্ভাসিত।

সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, এদেশের সেই মানুষগুলো পরাজয়ের গ্লানি তারা ভুলতে পারেনি। ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। এখনো পাকিস্তান ভাঙার কষ্ট তারা ভুলতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুকে নানাভাবে হেয় করার চেষ্টা তারা করে যাচ্ছে। নানা লোককে বঙ্গবন্ধুর সমকক্ষ বানানোর চেষ্টা করছে। অথচ পাকিস্তানের জনপ্রিয় নেতারা আজ বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়ন করছে। অতীতে বঙ্গবন্ধুকে অবমূল্যায়নের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। আমরা বলতে চাই, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বাংলাদেশ পুলিশ সবসময় দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে।

পরে প্রধান অতিথি আবৃত্তি, রচনা, চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। এ সময় সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অর্থ ও প্রশাসন) এম এ মাসুদ, অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আ স ম মাহাতাব উদ্দিন এবং বিভিন্ন ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার এবং পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেকনাফে দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্রের কারখানা
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে দুজনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৮০