বহমান সময়

ফজলুল হক | সোমবার , ২৪ মে, ২০২১ at ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ

হালিশহরের অতীত-বর্তমান
কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে, আপনার বাড়ি কোথায়? তাহলে উত্তরে আমাকে বলতে হবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৩৭নং ওয়ার্ড। আমি এই ধরনের ঠিকানা বলতে একেবারেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করিনা। সিটি করপোরেশনের এই ওয়ার্ডটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে মুনির নগর। ছোট বয়সের বাচ্চারা, তরুণরা হয়তো তাদের ঠিকানা হিসেবে হালিশহর মুনির নগর বলে থাকে। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। চট্টগ্রাম শহরে ছোট্ট একটি মিউনিসিপালটি ছিল, তাও আজকের শেখ মুজিব রোড, তৎকালীন জিন্নাহ রোডের পূর্ব পাশে, যার বিস্তৃতি ছিল চকবাজার পর্যন্ত। তখন চট্টগ্রামে শহর ও শহরতলী এলাকায় দুইটি থানা ছিল, একটির নাম ডবলমুরিং অন্যটির নাম কোতোয়ালী। আজ সে দুইটি থানা ভেঙ্গে অনেক থানা হয়েছে, গুণে শেষ করা যাবে না। আমি যদি আমার পাশের বাসার কোন লোককে জিগ্যেস করি, তোমার বাড়ি কোথায়? সে হয়তো বলবে আমার বাড়ি লক্ষীপুর জেলার জকসিনে কিংবা ভবানীগঞ্জে অথবা চর আলেকজান্ডারে। অন্য কাউকে জিগ্যাসা করলে, সে হয়তো বলবে আমার বাড়ি উখিয়ার সোনার পাড়া গ্রামে। কিন্তু আমাকে জিগ্যাসা করলে, আমি বলবো ৩৭নং ওয়ার্ডে। এখন আমার কাছে আমার ঠিকানা বলাটা বিরক্তিকর কাজ বলে মনে হয়। ১৯৫৩-৫৪ সালে আমার বয়স যখন ৫-৬ বছর তখন থেকে শুনে আসছি আমরা হালিশহরের মানুষ। আমাদের পোষ্ট অফিসের নাম ছিল মহেশখালী। হালিশহরের পরিচয়ে আমি গর্ববোধ করতাম। পতেঙ্গায় তখন বার্মা অয়েল কোম্পানী বা বিওসি এর স্থাপনা ছাড়া, স্টিলমিল, নৌবাহিনীর দপ্তর, ইপিজেড কিছুই ছিলোনা। সমুদ্রের সৈকত এবং ধুধু প্রান্তর পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর থেকে পূর্বে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বর্তমানে এয়ারপোর্ট যাওয়ার যে রাস্তা আছে সেটি ছিলোনা। এখানে একটি সরু গলিপথ ছিল। এই মাটির গলি দিয়ে সাইকেল চালিয়ে অথবা পায়ে হেঁটে আমরা কর্নফুলীর মোহনায় ১৫নং ঘাটে অথবা লালদিয়ার চরে যেতাম। নিউমুরিংয়ে ন্যাশনাল কটন মিল, তার পাশে একটি পাওয়ার হাউস, গুপ্তাখালে তেলের স্থাপনা, কমল মুন্সীর হাট, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এই স্থাপনাগুলোর বাহিরে ছিল মানুষের বাড়িঘর ও ধানের জমি। নিউমুরিং হয়ে পুরাতন বিমানবন্দর যাওয়ার একটি রাস্তা ছিল। পতেঙ্গা তরমুজের জন্য বিখ্যাত ছিল। এই পতেঙ্গা, হালিশহর এবং কাট্টলী সম্ভবত কোন এক সময়ে একটি মাত্র ইউনিয়ন ছিল। আমি যখন খুবই ছোট তখন আব্দুল হাকিম মিয়ার বাড়ির ইসলাম মিয়া হালিশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন। উনি যে সাইকেল মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন সেটি আমার মনে আছে। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এম.এ.আজিজ উনাকে সমর্থন দিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে যেমন, বলি খেলা, গরুর লড়াই, চুঁয়াবাজি খেলা, কুস্তি খেলায় আমাদের হালিশহরের মানুষের নামডাক ছিল। আমাদের বাড়ি থেকে বাটালি পাহাড়ের উপরের অংশ স্পষ্ট দেখা যেতো। ফলে উত্তরে বাটালি পাহাড় পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর দক্ষিণে নদী এবং সাগরের মোহনার সংগমস্থল এবং পূর্বে কর্ণফুলি নদী এই জায়গাটি আমাদের কাছে এত মধুময় ছিল যে এটি ছেড়ে কোথাও যাওয়ার কথা আমরা ভাবতেই পারতাম না। আমাদের এই এলাকার মানুষ ঐতিহাসিকভাবে এবং ঐতিহ্যগতভাবে অনেক ধনী ছিলো। তৎকালীন সময়ে সমুদ্রগামী জাহাজের (সরের জাহাজ) একাধিক মালিক ছিল হালিশহরের। সুদূর অতীত থেকে আরবীয়, ইউরোপীয় বণিকদের স্বাগতম জানানোর স্বর্ণদ্বার ছিলো হালিশহর। আমাদের বাড়ি কিংবা এম.এ.আজিজের বাড়ি থেকে বাটালি পাহাড় দেখা যেতো-এই কথা বললে আজকের অনেক তরুণের কাছে সেটা বিশ্বাসযোগ্য মনে নাও হতে পারে। তাদের জন্য আমাকে এখানে বলতে হচ্ছে ১৯৫০’র দশকের প্রথম দিকে চট্টগ্রামে তিনটি হাইরাইজ বিল্ডিং ছিল। একটি হল আগ্রাবাদের ইস্পাহানী বিল্ডিং, অপরটি দেওয়ানহাটের স্টিল ব্রাদারের বিল্ডিং, অন্যটি সদরঘাট পি.কে.সেনের সাত তলা। ইস্পাহানী বিল্ডিং ছিল পাঁচ তলা, স্টিল ব্রাদারের বিল্ডিং ছিল তিন তলা, পি.কে.সেনের ভবনটি সাত তলা হলেও সেটি তত উঁচু ছিলো না। বন্দর ভবনের মতো ভবনগুলি তখন নির্মিত হয়নাই। হালিশহরের মানুষ ব্রিটিশ আমলে আরাকান, আকিয়াব, মান্ডালয়, রেঙ্গুন এবং ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন স্থানে চাকুরির সুবাদে প্রবাসে জীবন কাটাতো। যারা প্রবাসে না গিয়ে হালিশহরে বসবাস করতো তাদের একাংশ চাষাবাদ করতো বাকীরা ব্যবসা বাণিজ্য করতো। বঙ্গোপসাগর ছিল একটি ওপেন একসেস রিসোর্স সেন্টার, এখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। হালিশহরে অনেক বড়ো বড়ো দীঘি ছিল, যা ছিল সুপেয় পানির মাছের বিরাট উৎস। এই দীঘিগুলি সারা চট্টগ্রামে বহুলভাবে পরিচিত ছিল। শুধু কাট্টলী নয়, লতিফপুর, সলিমপুর, পাহাড়তলী, পাঞ্জাবী লেইন, মাহাল খাঁর মসজিদ এলাকা, মগবিল, মফজল কেরানীর বাড়ি এলাকা, আসকারাবাদ, রঙ্গিপাড়া, পান্নাপাড়া, ডাকাইত্যা বিল এইসব জায়গাকে আমরা নিজেদের এলাকা মনে করতাম। হালিশহরের মানুষের সাথে ব্যবসায়িক সূত্রে করাচীর এবং বোম্বের যোগাযোগ ছিল। ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের সুবাদে হালিশহরের অনেক মানুষ আসামে চাকুরি করতো। আজকের সিআরবি এলাকায় যে স্থাপনা দেখতে পাচ্ছেন তা আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের জন্য করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ব্রিটিশরা বন্দরে জাপানী বিমান আক্রমন ঠেকানোর জন্য চৌচালা এলাকায় যুদ্ধবিমান অবতরণকেন্দ্র স্থাপন করেছিল। ঐ এলাকায় অসংখ্য বিমান সেনা নিয়োজিত ছিল। চট্টগ্রাম থেকে করাচি যাওয়া তখন কোন কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিলোনা। আমি ষাটের দশকে দেখেছি চট্টগ্রাম টু করাচি প্যাসেঞ্জার জাহাজ চলাচল করতো। কর্ণফুলী নদীর তীরে এবং মোহনায় আজকের যে বন্দর গড়ে উঠেছে এবং যা সম্প্রসারিত হয়ে পশ্চিম দিকে বে টার্মিনাল পর্যন্ত বিস্তৃত হবে এই পুরো জায়গাটাই হালিশহরবাসীর। হালিশহরবাসী ঘর থেকে বের হলেই বন্দরের দাঁড়িয়ে থাকা জাহাজগুলি চোখে দেখতে পায়। করাচিতে বা বোম্বেতে আমাদের অনেক পাড়া প্রতিবেশী থাকার সুযোগে ঐসব জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কোন ভয়ভীতি ছিলোনা। বরং আমরা সেখানে হোমলি ফিল করতাম। প্যাসেঞ্জারি জাহাজ আল আব্বাস, আল শামস-এগুলি খুব আরামদায়ক ছিল। কোন কোন জাহাজে প্যাসেঞ্জার এবং কার্গো দুটিই বহন করতো। তখন কন্টেইনার জাহাজের কথা, ল্যাস ভ্যাসেলের কথা কল্পনাও করা যেতোনা। আমাদের হালিশহরের অনেক তরুন জাহাজের ভাড়া না দেওয়ার জন্য টালী ক্লার্কদের ম্যানেজ করে গোপনে কার্গো সেকশনে লুকিয়ে থাকতো। জাহাজ আউটারে গেলে সে গোপন স্থান থেকে বের হতো এবং জাহাজ কর্তৃপক্ষ তাকে করাচিতে নামিয়ে দিতে বাধ্য হতো। জাহাজ ভাড়া ছিল পঞ্চাশ টাকা। প্যাসেঞ্জারি জাহাজগুলি দুইটি রুটে চলতো। চট্টগ্রাম থেকে সাতদিনে কলম্বো, কলম্বোতে একদিনের বিরতি, পরের সাতদিনে করাচি। কিংবা চট্টগ্রাম থেকে সাতদিনে কলম্বো, একদিন বিরতি আবার তিনদিন কোচিন হয়ে পরবর্তী তিনদিনে করাচি। প্রতিনিয়ত যাওয়া আসার কারণে চট্টগ্রাম টু করাচি প্যাসেঞ্জারি জাহাজ এবং কার্গো জাহাজ সমুদ্রে ভাসতে থাকতো। আমরা ঢাকা খুব কম যেতাম। কলম্বো, কেরালা, বোম্বে এবং করাচি যাতায়াত সহজ ছিল। প্লেনে করাচি যাওয়ার দরকার হলে ঢাকা গিয়ে পিআইএ এর প্লেন ধরতে হতো। পিআইএ এর এফ-২৭ প্লেনে আমরা ৪০/৪৫ টাকা ভাড়ায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতাম। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার কোন বাস সার্ভিস ছিলোনা কারণ চট্টগ্রাম ঢাকা যাতায়াতে ছয়বার ফেরি পার হতে হতো। উলকা এবং গ্রীন এ্যরো নামে দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন ঢাকা চট্টগ্রাম চলাচল করতো। আমরা অনেক সময় চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে চাঁদপুর গিয়ে চাঁদপুর থেকে স্টিমারে ঢাকা যেতাম।
আমাদের অতীত স্মৃতি থেকে এতোক্ষণ যে আলোচনা করলাম তাতে আজকের তরুনরা হয়তো বুঝতে পারছে যে পুরো ব্রিটিশ আমলে এবং পাকিস্তান আমলে সুখ, সমৃদ্ধি, চাষাবাদ, ব্যবসা বাণিজ্য, প্রবাসে আয় রোজগার করা-এসবের মধ্যে ডুবে ছিল হালিশহরবাসী। কিন্তু আজ আমার বিবেচনায় হালিশহরের অস্তিত্ব বলতে কিছু অবশিষ্ট নাই। এই এলাকার তরুণরা অনেকেই বেকার। যারা চাষাবাদ করতো তারা ভূমিহীন। যারা সুখে দিন যাপন করতো তাদের চেহারা বিবর্ণ।
হালিশহর পতেঙ্গা কাট্টলী এলাকাটি অন্ততপক্ষে ১৩/১৪টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। হালিশহর এখন একটি থানার নাম। ঐ থানাটি ২৬নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। সুতরাং আমাদের মধ্যে হালিশহর নামের যে মাদকতা রয়েছে তা এখন বিলুপ্ত। একসময় হালিশহরকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছিল, উত্তর হালিশহর, মধ্য হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর। তার উত্তরে কাট্টলী, দক্ষিণে পতেঙ্গা, এই বিভক্তি নিয়েও আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম কিন্তু এখন সেটিও অবশিষ্ট নাই। হালিশহরে ধনী ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আধ্যাত্মিক সাধক আছেন কিন্তু বড় মাপের কোন লেখক সাহিত্যিক নাই।
আব্দুল গাফফার চৌধুরী নাই, শামসুর রাহমান নাই, হুমায়ুন আহমেদ নাই। এরকম কারো জন্মও হালিশহরে হবে না। কারণ এ ধরণের মানুষের কোন কদরও এখানে নাই। যদি তেমন মানুষ থাকতো তাহলে হালিশহরকে নিয়ে লেখালেখি হতো। নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি এই এলাকার উপরে ঘটে যাওয়া অসঙ্গতিগুলির দিকে আকর্ষণ হতো। তলোয়ারের জোরে, বন্দুকের জোরে, টাকার জোরে যা করা যায়না কলমের জোরে তা করা যায়। মফজল কেরানী, দেওয়ান আলী সওদাগর, খলিল সওদাগর, প্রাণহরি বাবু, আব্দুল মাবুদ সওদাগর, ইমাম শরীফ সওদাগর, ইউসুফ মিয়া ইনাদের মতো দেশবরেণ্য, জগৎবিখ্যাত কোটিপতি যা করতে পারতেন হুমায়ুন আহমেদ’র মতো একজন লেখক তার চাইতেও অনেক বেশি কিছু করতে পারতেন। ব্রিটিশ আমল থেকে হালিশহরের কর্ণফুলী তীরবর্তী এবং মোহনা সংলগ্ন সকল জমি বন্দরের জন্য হুকুম দখল করা হয়েছিল। হাউজিং এস্টেট করার জন্য হালিশহরের উত্তরাংশের অনেক জমি হুকুম দখল করে তা পাকিস্তান আমলে বিহারীদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে সেই হাউজিং এস্টেটে চট্টগ্রামের বাহিরের লোকজন জমি বরাদ্দ পায়। পাকিস্তান সরকার এই জমির একটা অংশ ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলসকে বরাদ্দ দিয়েছিল। ডাকাইত্যা বিল নামে খ্যাত জায়গাটি পাকিস্তান আমলে হুকুম দখল করে এখানে বানানো হয়েছে সরকারি কলোনী এবং সরকারি অফিস। যা এখন সিজিএস কলোনী ও বহুতলা কলোনী নামে পরিচিত। তার পার্শ্ববর্তী জমি হুকুম দখল করে সিডিএ আবাসিক এলাকা তৈরী করেছে এবং প্লট আকারে জমি বিক্রি করেছে। স্থানীয় মানুষের জমি হুকুম দখল করে হাউজিং এস্টেট, আবাসিক এলাকা করা এবং তার প্লট বিক্রি করা কতটুকু ন্যায়সঙ্গত? বর্তমান সরকার ব্যক্তিগত মালিকের জমি হুকুম দখলের পর পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয় কিন্তু পাকিস্তান আমলে কিংবা ৭০-৮০’র দশকে ক্ষতিপূরণ পর্যাপ্ত ছিলোনা। পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রাম ওয়াসা হালিশহরের সৈকত সংলগ্ন বিঘা কে বিঘা জমি হুকুম দখল করেছে। ষাটের দশকে খুব কম দামে হুকুম দখল করা এইসব জমি এখনো কোন প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়নাই। মূল মালিককে জমি ফেরতও দেয়নাই। বন্দরের জন্য টোল রোড করবে বলে হালিশহরের জমি হুকুম দখল করেছে। ব্রিটিশ আমলে রেলের ইয়ার্ডের জন্য ভূমি হুকুম দখল করেছে। ষ্টিলমিলে রেলের ওয়াগন নিয়ে যাওয়ার জন্য জমি হুকুম দখল করেছে। বন্দর ভবন এবং কাস্টম হাউস থেকে দক্ষিণ দিকে গেলে হালিশহরের অধিকাংশ ভূমি আপনি দেখতে পাবেন হুকুম দখলে চলে গেছে। সম্প্রতি বে টার্মিনাল করার জন্য সৈকতের সকল ভূমি হুকুম দখল করা হয়েছে। হালিশহরবাসীর অস্তিত্ব বিপন্ন। সামান্য যা ভূমি অবশিষ্ট আছে তাতে ছিটেফোটা পরিবার টিকে আছে। অবারিত মাঠ, পাখির কুজন, গোধূলির বিষন্নতা, দিঘীর পাড়ে বৃক্ষের হাতছানি, বাঁশ ঝাড়ের ছড়াছড়ি এখন কল্পনার বিষয়। সৈকতে যেখানে পাহাড়ের মতো বালি জমে ‘‘ধুম” নামে এক ধরণের বালিয়াড়ি তৈয়ার হতো, যার মধ্যে লাল কাকড়া, সামুদ্রিক লার্ক খেলা করতো তাও এখন কল্পনা। চট্টগ্রামবাসীর উন্নয়ন হবে না, তারা চাকুরি পাবে না কিন্তু চট্টগ্রামের উন্নয়ন হবে এটা অকল্পনীয়। হালিশহরবাসী বাস্তুহারা হবে কিন্তু হালিশহর সিঙ্গাপুর হবে এটা কখনো আমাদের কল্পনার মধ্যে ছিলো না। হালিশহর পতেঙ্গা কাট্টলী থেকে অনেকেই এমপি মন্ত্রী পদে বহাল হয়েছে। জিয়া এবং এরশাদের আমলে আমাদের লিয়াকতের মতো মানুষ নেতা ও এমপি হয়েছিলেন। জহুর আহমদ চৌধুরী, এম.এ.আজিজ, ইসহাক চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য কোন এমপি মানুষের জন্য কথা বলেছেন বলে কি আপনাদের মনে হয়? বর্তমানে আমরা ১১নং সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার মানুষ। আমাদের পার্শ্ববর্তীটি হচ্ছে ১০নং সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা। ১০নং নির্বাচনী এলাকায় ডা. আফছারুল আমিন বর্তমানে এমপি’র দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একজন পরিপূর্ণ রাজনীতিবিদ হওয়ার কারণে উনার এলাকার জনগণের সঙ্গে উনার সম্পর্ক রয়েছে। উনি উনার এলাকার জন্য সংসদে কথাবার্তা বলেছেন। কিন্তু আমাদের নির্বাচনী এলাকায় রাজনীতিবিদ খোরশেদ আলম সুজনকে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়ার পরেও তা প্রত্যাহার করা হয়। আমি ১১নং সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার ভোটার হিসেবে খোরশেদ আলম সুজনকে যোগ্য রাজনীতিবিদ বলে মনে করি। আমি এও মনে করি সারা বাংলাদেশে আমাদের ১১নং সংসদীয় নির্বাচনী এলাকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকা। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি যে রাজনৈতিক দলই হোক না কেন এই নির্বাচনী এলাকার এমপি প্রার্থী হিসেবে যোগ্য রাজনীতিবিদকে মনোনয়ন দেওয়া উচিত। পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরে এলাকার জন্য এবং জনগণের জন্য সরকারের কাছে কোন কথাই বলতে পারবে না এমন এমপি কতটুকু জনবান্ধব হবে সেটাই এখন আমাদের ভাবতে হবে। একসময় বলা হতো দল কলাগাছকে মনোনয়ন দিলে তুমি কলাগাছকে ভোট দাও। আমরা কলাগাছকে ভোট দিয়েছি। আমাদের অভিজ্ঞতা খুব ভালো নয়। জনপ্রতিনিধিকে জনগণের মধ্যে দেখতে চাই। এই করোনা বিপর্যয়ের মধ্যে সবচাইতে যার প্রয়োজন বেশি তিনি হলেন জনপ্রতিনিধি।
লেখক, সাবেক অধ্যক্ষ, কলামিস্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনাকালীন সামাজিক দায়বদ্ধতায় বিকাশ
পরবর্তী নিবন্ধকরোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়ালো