বাজারের আগুনে দ্রব্যমূল্য চাপে ভোক্তারা দিশেহারা। এই রমজানে ইফতার সেহরিতে রোজাদারেরা ভালো–মন্দ খেতে চায়। কিন্তু খাদ্যপণ্য এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ গরিব ক্রেতাদের পক্ষে ইচ্ছেমতো ছোলা, বুট, মুরগি, মাছ, গরু, খাসির মাংস ও সবজি কেনা খুবই কঠিন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কি উপায় অবলম্বন করলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে সেটি খুঁজে বের করা। আমরা মনে করেছিলাম সরকার চেষ্টা করলে বাজারে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনতে পারবে কিন্তু বাস্তবে সেটি করতে দেখা যাচ্ছে না কিংবা অর্থনৈতিকবিদগণ এমন কোন উপায় বলে দিতে পারেন যার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে কিন্তু সে ক্ষেত্রেও কোন কার্যকর কিছু আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার জন্য কে দায়ী। কথাবার্তা শুনে মনে হয় এজন্য সিন্ডিকেট দায়ী। বড় বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে জিনিসপত্র দাম বাড়িয়ে দেয়। এই আঘাত গিয়ে পড়ে ভোক্তাদের ওপর। আবার অনেক বিশ্লেষকের বক্তব্য হল ডলারের দাম বৃদ্ধি পেলে তাতে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। যখন এক ডলার সমান বাংলাদেশে নব্বই টাকা ছিল তখন আমদানি পণ্যের যা বিক্রয় মূল্য দাঁড়াতো। এখন একশ দশ থেকে বিশ টাকা প্রতি ডলারের যদি মূল্য দাঁড়ায় তাহলে সম্ভবত আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে এবং বাজারে তখন আগের দামে পণ্য পাওয়া কঠিন হতেও পারে। আরেকটি কারণ হলো যেসব উৎস দেশ থেকে আমরা খাদ্যপণ্য আমদানি করি সেই সব দেশে যদি পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পায় তাহলে আমাদের দেশে তা প্রভাব পড়বে। আরো একটি নতুন উপসর্গ পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে সেটি হচ্ছে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন। ইজরাইল এবং হামাসে দ্বন্দ্বের কারণে গাজায় নিরীহ মানুষের ওপর বোমাবর্ষণ করছে ইজরাইল তার প্রতিবাদে হিজবুল্লা এবং হাওতিদের সংগঠন ইজরাইলের ওপরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করার চেষ্টা করছে। হাওতিরা লোহিত সাগরে ব্রিটিশ এবং আমেরিকান মালিকানাধীন পণ্যবাহী জাহাজে হামলা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু জাহাজের নাবিক মারা গেছে এবং একটি জাহাজ ডুবে গেছে। এই কারণে জাহাজ কোম্পানিগুলো পণ্য পরিবহনে রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে যার ফলে আমাদের দেশে বিদেশি পণ্য পরিবহনে খরচ অনেক গুণ বেড়ে যাচ্ছে এটিও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ।
এই প্রসঙ্গে আমি আরেকটি দিক আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই তুলে ধরতে চাই সেটি হলো মনস্তাত্ত্বিক। মানুষের অভাবের ক্ষেত্রে ভোক্তা হিসেবে মানুষ কি আচরণ করে সেটি বিশ্লেষণ করেছেন তারা। একটি দেশের সকল মানুষ অভাবের একটি নির্দিষ্ট স্তরের বসবাস করেন না বা অভাবের একটা স্তরের অবস্থানও করেন না। বিভিন্ন ইনকাম গ্রুপের মানুষ বিভিন্ন অর্থনৈতিক অবস্থানের মানুষ বিভিন্নরকম অভাবের স্তরে থাকেন এবং তাদের আচরণও আলাদা আলাদা হয়।
আব্রাহাম এইচ মাজলুম নামে একজন বিশ্লেষক গবেষক দেখিয়েছেন যে একটি দেশে মানুষের বা জনগণের একটি অংশ শরীর ভিত্তিক অভাব বোধের জায়গায় অবস্থান করে। তাদের আয় রোজগার খুবই কম। অর্থনৈতিকভাবে তাদেরকে বিপর্যস্ত বলা যায়। তারাই হচ্ছে হতদরিদ্র মানুষ।
তারা শুধু শরীর টিকিয়ে রাখার জন্য খাবারের অভাব অনুভব করে। তাদের প্রধান চাহিদা হল ভাত রুটি ডাল তরিতরকারি। এই মানুষগুলি কিছুই চায় না, শুধু তারা পেট ভরে খেতে চায়। আমার একজন সহকর্মী অধ্যাপক আমাকে একবার বলেছিলেন পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন রোগের নাম হচ্ছে ক্ষুধা। আর এ রোগের মহাঔষধ হচ্ছে খাবার, ভাত রুটি তৈরি তরিতরকারি। যারা একেবারে হত দরিদ্র তারা অভাবের এই স্তরে বসবাস করে এবং তাদের আচার–আচরণ ও এই অভাবের দাপট দ্বারা প্রভাবিত হয় । তখন তার কাছে নৈতিকতা ভালো–মন্দ কাজ এসব কিছুর চাইতে বড় হচ্ছে সে এই বেলা খাবার পেলে পরের বেলায় খাবার কোথায় পাবে এ প্রশ্নটি। যারা দ্বিতীয় স্তরে থাকেন অর্থাৎ যাদের খাবার দাবার সংস্থান করা সম্ভব হয় তারা তখন বাসস্থান কাপড়চোপড় এইধরনের পণ্যের অভাব বোধ করেন এটা অনেকটা তার নিরাপত্তা বিষয়ক ভাবনা তখন তাকে তাড়া করে অর্থাৎ তখন মানুষ খাবারের অভাব সমাধান করতে পারে তখন তার ঘরবাড়ি কাপড়চোপড় ওষুধপত্র দরকার হয়। এভাবে যদি কোন মানুষের খাবারের সংস্থান হয় নিরাপদ বাসস্থান থাকে তারপরে সে চায় সোশ্যাল নিড বা সামাজিক চাহিদা। সামাজিক মানুষের সাথে মেলামেশা করা ভালোভাবে সময় কাটানো ইত্যাদি এই সামাজিক চাহিদা পূরণ করতে চায়। তারপরে তার ইগোনিডস দেখা দেয় অর্থাৎ তখন সে চায় যে তার কথাবার্তা মানুষসুলভ তার নেতৃত্ব মেনে নিক। এটাও যদি অর্জন করা যায় তখন সে যায় সেলফ একচুয়েলাইজেশন নিড পূরণ করতে।
এই স্তরের একজন মানুষকে আপনি গবেষণার অবদান রাখার জন্য পুরস্কার দিতে পারেন। তখন সে এ পুরস্কার বা স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য তার অবদানকে মানুষ চিরস্মরণীয় করে রাখুক এসবের জন্য তার মনে হাহাকার তৈরি হয়। তখন সে ভাত–কাপড় বাসস্থানের আর চিন্তা করেনা কারণ তখন সেগুলি তার কাছে আগের থেকে রয়েছে। অভাবের স্তর গুলি বিশ্লেষণ করলে আপনারা দেখতে পাবেন যে আমাদের দেশে একজন শিল্প গ্রুপের পরিচালক কে আপনি তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ যদি পাঁচ কেজি চাল উপহার দেন সে তাতে অসম্মানিত বোধ করবে। তকে আপনি সম্মান সূচক ডিগ্রি দিতে পারেন তাকে আপনি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দিতে পারেন সে খুশি হবে কিন্তু তাকে পাঁচহাজার টাকা দিলে সে খুশি হবে না। অন্যদিকে একজন হতদরিদ্র মানুষকে যদি আপনি একটি পিএইচডি ডিগ্রি অফার করেন সে এটার অর্থ বুঝবে না এবং এ ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখাবে না তাকে আপনি পাঁচ–দশ কেজি চাল দিলে সে অত্যন্ত খুশি হবে। অভাবের এই স্তর– বিশ্লেষণ করার পর আপনারা অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। কিছু মানুষকে আপনি দেখবেন সে বাজারে যে জিনিসের দাম কমে যায় সে জিনিস কিনতে চায় না। সে বেশি দামের জিনিস কিনবে। আর যারা একেবারে হত–দরিদ্র তারা সব সময় কম দামে জিনিস কিনবে কারণ এ কম দামে জিনিস কেনার মত সামর্থ্য তার কাছে পুরোপুরি থাকে না ।
এজন্য আমরা যখন গণমাধ্যমে গড়পরতা আলোচনা করি দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে তার সমাধান কি এই বিষয়ে গরিবদের না যত আগ্রহ বড়লোকদের তত আগ্রহ থাকতে নাও পারে। এখন যদি অর্থনৈতিক তথ্য অনুরণ করে কিছু বলতে হয় তাহলে বলতে হবে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বাজার মনিটরিং বা কোন অধিদপ্তর বা ভোক্তা অধিদপ্তর বা অন্য কোন অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের অভিযান বাজার নিয়ন্ত্রণ আনতে পারবে না, এর একটা সুফল হবে যে এটা মানুষ বুঝতে পারবে বা জানতে পারবে যে সরকার বাজারের পণ্যমূল্য কমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু অভিযান এবং মনিটরিং করে পণ্যমূল্য কমাতে পারবে না।
মূল্য কমানোর মূল মেকানিজম কি সেই বিষয়ে যদি আপনি অর্থনৈতিকবিদদের কাছে প্রশ্ন করেন উনারা বলবে যে বাজারের সংজ্ঞা সেটি সকল মানুষের কাছে পরিষ্কার হবে এমন কোন কথা নয়। বাজার নিজে একটি প্রতিষ্ঠান যা পুলিশের চাইতে, প্রশাসনিক কর্মকর্তার চাইতে, সচিবের চাইতে, মন্ত্রীর চাইতে অনেক বেশি শক্তিশালী। বাজার কারো পরোয়া করে না। বাজার নিজেই নিজের কাজ করে। এখানে অর্থনৈতিক তত্ব হচ্ছে যদি পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকে বা বেড়ে যায় দাম কমে যাবে, যদি পণ্যের ঘাটতি হয় সরবরাহ কমে যায় চাহিদা বেড়ে যায় তাহলে দাম বেড়ে যাবে। এটাকে বলা হয় চাহিদা ও সরবরাহ তত্ত্ব। এখন এ চাহিদা ও সরবরাহ তথ্যের বাইরে আমরা যেতে পারবো যদি এখানে কোন ব্যতিক্রম তৈরি হয় যাকে বলা হয় একসেপশন টু দিস ল।
এ তত্বের ব্যতিক্রম কি সে ক্ষেত্রে আমরা তার বাইরে যেতে পারি। একসময় অর্থনীতিকে ধনবিজ্ঞান বলা হত। কিন্তু পরবর্তীকালে এমনকি ক্লাসিক্যাল অর্থনৈতিকবিদগণ এটা স্বীকার করেছেন যে অর্থনৈতিক ধন বিজ্ঞান নয়, এটা ধনসম্পদ মালপত্র পণ্য চাল ডাল নিয়ে আলোচনা করা। অর্থনীতি হচ্ছে একটি বিজ্ঞান যা মানুষের আচরণ সম্পর্কে মাথা ঘামায়। মানুষের সব আচরণ নয়, অভাব এবং অভাব পূরণের ক্ষমতা। অভাব পূরণের উপকরণের ক্ষেত্রে মানুষের আচরণ নিয়ে অর্থনীতি মাথা ঘামায়। মানুষের অভাব হচ্ছে অসীম, আনলিমিটেড। কিন্তু মানুষের অভাব পূরণের সক্ষমতা হচ্ছে অত্যন্ত সীমিত।
অভাব বেশি, পণ্য কম, এক্ষেত্রে মানুষ কি রকম আচরণ করে সেটাই হল অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়। এখন চাহিদা তত্ত্বে যে ব্যতিক্রম সেটা ঘটার কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভূত উন্নতি হয়েছে। যোগাযোগ অবস্থাযর কাঠামো দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে বিস্তৃত হয়েছে। গ্রামগঞ্জে রাস্তাঘাট কালভার্ট হয়ে গেছে, এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়ও রাস্তাঘাট আগের তুলনায় অনেক বিস্তৃত লাভ করেছে। সুতরাং যে কোন সময় চট্টগ্রামের পণ্য ঢাকায় যেতে পারে, পঞ্চগড়ের পণ্য চট্টগ্রাম আসতে পারে, খুলনা থেকে পণ্য নিয়ে গাড়ি চলে আসতে পারে কক্সবাজার। এই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি চাহিদা সরবরাহার ক্ষেত্রে একটি পরিবর্তন এনেছে। তাতে চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে এবং এই চাহিদা পূরণে সরবরাহের ক্ষেত্রে অনেক কিছু কাজ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। একজন কৃষক খুলনায় যে পণ্য উৎপন্ন করে তার পক্ষে ঢাকায় এসে সে পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হয় না। তার ফলে সেখানে মধ্যস্বত্বভোগীরা হাত বদল করে, এটাকে বলা হয় ট্রেড চ্যানেল। এই ট্রেড চ্যানেলে চারটি স্তর আছে উৎপাদনকারী, পাইকার, খুচরা ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা। অনেক সময় এ চারটির বাইরেও ডিলার এজেন্টসহ নানাবিধ মধ্যস্বত্বভোগী এমনকি ফড়িয়া আড়তদার তারাও যুক্ত হয়ে যায়।
এরাই দাম বৃদ্ধি করে। সেজন্য যে পণ্য কৃষক পাঁচ টাকা দামের কেজি বিক্রি করল, ঢাকার বাজারে সেটি একশ টাকা হয়ে যায়। মধ্যস্বত্বভোগীরা বিরাট অঙ্ক লাভ করে এবং কৃষক যত উপকৃত হয় মধ্যস্বত্বভোগী তার চেয়ে অনেক বেশি লাভবান হয়। আপনি দেখবেন বাটার জুতা অথবা যেকোনো এমআরপি অর্থাৎ রিটেল প্রাইজ যেসব পণ্য নির্ধারণ থাকে এইসব পণ্য যে দামে বিক্রেতা বা উৎপাদনকারী বাজার ছাড়ে ক্রেতা সেই দামে কিনে মধ্যস্বত্বভোগীরা কমিশন পায়। এরকম পণ্যের দাম বাড়ে না কিন্তু কৃষি পণ্য বা খাদ্যদ্রব্য পণ্যের ক্ষেত্রে সেটি হওয়া সম্ভব নয়। অনেক সময় অনেক কৃষক পাইকার বা আরতদারের কাছ থেকে দাদন নেয়। বিশেষ করে মৎস্য চাষীরা, মৎস শিকারী ও জেলেরাও দাদন নেয় ।
এ দাদনের চাপে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভোক্তা ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভোক্তার বিভিন্ন চরিত্র আছে। এটা বিস্তারিত এখানে বলার কোন সুযোগ নাই, আমি একটি উদাহরণ দেই। আমি যদি জাপান থেকে একটি গাড়ি কিনে আনি বা বাস নিয়ে আসি আমি হলাম বাসের সর্বশেষ ক্রেতা কিন্তু যখন এই বাস আমি রাস্তায় চালায় তখন যারা বাসের যাত্রী হয় তারাও কিন্তু এই বাসের ক্রেতা। এমনকি এ বাসের কালো ধোঁয়া দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তারাও কিন্তু এক ধরনের নেগেটিভ ভোক্তা। এভাবে বাজারে পণ্য বেঁচা কেনা হয় সেটার ওপর একটি বিস্তারিত আলোচনা দরকার। কিন্তু সেটি না করে আমরা খন্ডিতভাবে যার যেমন ইচ্ছা তেমন বলছি, ফলে ব্যাপক একটা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছি আমরা। সিন্ডিকেট সম্পর্কে বলতে হয় যে সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফা উপার্জন করা। যদি কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মুনাফা অর্জন না করে তখন তাকে রিয়েল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বলা মুশকিল। সুতরাং মুনাফা অর্জন যিনি করবেন তিনি কি পরিমাণ মুনাফা অর্জন করবেন বেশি করবেন না কম করবেন এটার কোন সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া সম্ভব নয়। এখানে যেটা করণীয় সেটা হল পুরোপুরি পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার অর্থাৎ কম্পিটিশন যদি থাকে তখন কিন্তু এই কাজ করার সুযোগ থাকে না অতিরিক্ত মুনাফা করতে পারে না। আমাদের পণ্য বিপণতার ক্ষেত্রে কম্পিটিশনের পরিবর্তে এক ধরনের কেন্দ্রীয়ভূতকরণ হয়ে গেছে। অর্থাৎ যাকে বলা হয় মনোপলি মার্কেট। মূলত সমস্যা সিন্ডিকেট নয় মনোপলি বাজার তৈরি হয়েছে, একচেটিয়া বাজার তৈরি হয়েছে। একচেটিয়া বাজার হচ্ছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সবচেয়ে খারাপ একটি দিক, এটি অনেক আগে বলা হয়েছে যে পুঁজিবাদ ভোক্তাদেরকে, উৎপাদনকারীকে শোষণ করবে। যারা মধ্যস্বত্বভোগী তারা হচ্ছে পুঁজিবাদের সবচেয়ে খারাপ একটি অংশ। তারা কোনরকম এফোর্টস বা প্রয়াস না দিয়ে অতি সহজে প্রচুর মুরাফা অর্জন করে। সুতরাং চিকিৎসা এখানেই করতে হবে যে, কৃষকের পণ্য কিভাবে মধ্যখানের মধ্যস্বত্বভোগীদের এড়িয়ে খুব সহজে ভোক্তার ঘরে পৌঁছে যায়, মধ্যখানে স্তরগুলো কমানো যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারলে সেটা সহনশীল পর্যায়ে আসবে। কিন্তু কাজটা খুব সহজ নয়, এটি কোন সরকারি আদেশে, কারো নির্দেশে, পুলিশের নজরদারিতে হবে না। এটাকে একটা সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে আনতে হবে এবং এখানে ক্ষমতা প্রয়োগের চাইতে জ্ঞান প্রয়োগের প্রয়োজন অনেক বেশি হবে বলে আমার মনে হয়। বর্তমান সরকার একটি বিরাট রাজনৈতিক দল দ্বারা পরিচালিত তাদের সাথে জনগণের অনেক নিকটতম সম্পর্ক আছে। তারা যদি সিন্ডিকেট বা শিল্প গ্রুপের সাথে কথাবার্তা বলে বাজারের ওপরে সরকারি চাপ দলীয় চাপ সৃষ্টি করতে চায় তা ফলপ্রসু হবে বলে আমার মনে হয় না। এটার জন্য বাজার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উপায় বের করতে হবে। যেহেতু বাংলাদেশের যোগাযোগ অবকাঠামো সুদক্ষ এবং সফল, সেহেতু বাজারের নিয়মে বাজার ব্যবস্থাপনার পদক্ষেপ নিলে সরকার সফলতা লাভ করতে পারে এবং জনগণ মূল্যস্ফীতির হাত থেকে বাঁচতে পারে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রা ব্যবস্থা ব্যংক ব্যবস্থা এবং ইনফ্লোয়েশন বেড়ে যাওয়ায় এগুলিরও লাগাম টেনে ধরা দরকার।
আমরা আশা করি একটি সমাধান জনগণ অচিরেই দেখতে পাবে।
লেখক : শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট। প্রাক্তন অধ্যক্ষ, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ।