বর্তমান চেয়ারম্যানের শেষ কর্মদিবস ৩০ ডিসেম্বর

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড ।। পদের জন্য চলছে দৌড়ঝাঁপ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তীর চাকরির বয়স পূর্ণ হচ্ছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর। তবে ওই দিন শুক্রবার হওয়ায় আগের দিন (৩০ ডিসেম্বর) তার কর্ম দিবস শেষ হচ্ছে। সে হিসেবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে এ কর্মকর্তার অবসরোত্তর (পিআরএল) ছুটি শুরু হচ্ছে। তবে সরকারি কর্মকর্তাদের মূল পদ থেকেই অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার নিয়ম রয়েছে। ফলে শেষ কর্মদিবসের আগেই তাকে বোর্ডের শীর্ষ পদ থেকে অবমুক্ত করে মাউশির (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর) অধীনে মূল পদে পদায়ন করতে পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মূলত সরকারি কলেজের শিক্ষকের পদ থেকেই প্রেষণে শিক্ষাবোর্র্ডের বিভিন্ন শীর্ষ পদে পদায়ন করা হয়ে থাকে। প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ পান। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ আদেশের একদিন পরই (২৯ জানুয়ারি) তিনি বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে যোগদান করেন। হিসেবে বোর্ড চেয়ারম্যান পদে প্রায় দুই বছর (২৩ মাস) দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী।
এদিকে, বর্তমান চেয়ারম্যানের চাকরির বয়স পূর্ণ হওয়ায় আগামী ৩০ ডিসেম্বরের পর থেকে বোর্ড চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য হচ্ছে। আর এই পদে নিয়োগ পেতে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই চলছে দৌড়ঝাপ। নানা তদবির ও মন্ত্রী-এমপির ডিও লেটার নিয়ে এ দৌঁড়ে সামিল হয়েছেন সরকারি কলেজের বেশ কয়জন শিক্ষক। বিশেষ করে সরকারি কলেজের বেশ কয়জন অধ্যক্ষ এ পদের জন্য দৌঁড়-ঝাপ করছেন। অবশ্য, শিক্ষাবোর্ডের একাধিক কর্মকর্তাও রয়েছেন এ দৌঁড়ে। এছাড়া চাকরির বয়স পূর্ণ হলেও নতুন করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী জোরালো তদবির অব্যাহত রেখেছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত পদটিতে কে আসীন হচ্ছেন, তা জানা যাবে কয়েকদিনের মধ্যেই। কারণ, এই সময়ের মধ্যেই পদটিতে প্রেষণে নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করতে পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
যদিও বোর্ড চেয়ারম্যান হিসেবে সৎ ও নীতিবান কোন শিক্ষককেই চান বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গুরুত্বপূর্ণ এ পদে বিতর্কিত কাউকে নিয়োগ দেয়া হবে না বলেই তাদের প্রত্যাশা। যদিও বেশ কয়বছর ধরে বোর্ডে জালিয়াত ও দূর্নীতিবাজদের একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে উল্লেখ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ বলছেন, চক্রটি নিজেদের বলয়ের কাউকে এ পদে বসাতে জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ জন্য তারা অনেকটা মরিয়া। যাতে নির্বিঘ্নে অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত রাখা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে এমনিতেও অনিয়ম-জালিয়াতিতে বার বার খবরের শিরোনাম হয়েছে শিক্ষাবোর্ড। কিন্তু এসব অনিয়ম-জালিয়াতিতে জড়িত ও বিতর্কিতরা বহাল তবিয়তেই আছেন। এখন নতুন করে চক্রটির প্রচেষ্টা সফল হলে শিক্ষাবোর্ড ‘জালিয়াতের হাট’ হিসেবে পরিণত হতে পারে বলে শঙ্কা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে- পরবর্তী বোর্ড চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেতে বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ তুষার কান্তি বড়ুয়া, পটিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক ও চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ সুদীপা দত্ত বিভিন্নভাবে চেষ্টায় আছেন। এর বাইরে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বর্তমান সচিব প্রফেসর আবদুল আলীম, কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর আবুল মনছুর ভূঁইয়াও এ তালিকায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। আরো কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষের নামও শোনা যাচ্ছে।

তাঁদের মধ্যে বেশ কয়জন একাধিক মন্ত্রী-এমপির ডিও লেটার নিয়েও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। সম্ভাব্য হিসেবে তাঁদের কয়েকজনের নাম তালিকায় রয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত পরবর্তী বোর্ড চেয়ারম্যান হিসেবে কে নিয়োগ পাচ্ছেন, তা জানতে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে আরো কয়েকদিন।
অবশ্য, তদবির ও জোর প্রচেষ্টার বিষয়টি স্বীকার করতে আগ্রহী নন পদ প্রত্যাশীরা। নাম প্রকাশ করে বক্তব্য জানাতেও অনাগ্রহ দেখিয়েছেন তাঁরা।
যোগাযোগ করা হলে চেয়ারম্যান পদ প্রত্যাশী একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা আজাদীকে বলেন, এটি সম্পূর্ণ সরকারের (বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের) এখতিয়ার। সরকার যাকে যোগ্য মনে করে, দায়িত্ব দেবেন। আর দায়িত্ব পেলে সরকারের আদেশ অনুযায়ী তাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাষ্ট্রপতির সংলাপ আগ্রহী নয় বিএনপি
পরবর্তী নিবন্ধ১২ দিনে ভ্রমণ ব্যয় ৬১৩ কোটি টাকা!