বর্ণিল উৎসবে খুলল সমৃদ্ধির দ্বার

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২৬ জুন, ২০২২ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

প্রমত্তা পদ্মার তীরে উন্মোচিত হলো ফলক, বাতাসে উড়ল রঙিন আবির, দিকে দিকে উঠল জয়বাংলা স্লোগান; বর্ণিল উৎসবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বললেন, এই সেতু শুধু একটি সেতু নয়, এই সেতু দুই পাড়ের যে বন্ধন সৃষ্টি করেছে তা নয়, এই সেতু শুধু ইট, সিমেন্ট, স্টিল, লোহা, কংক্রিটের একটা অবকাঠামো নয়, এই সেতু আমাদের অহংকার, এই সেতু আমাদের গর্ব। এই সেতু আমাদের সক্ষমতা, আমাদের মর্যাদার শক্তি। এই সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, সাহসিকতা, সহনশীলতা এবং আমাদের প্রত্যয় যে আমরা এই সেতু তৈরি করবই। সেই জেদ, সেই প্রত্যয়। খবর বিডিনিউজের।

স্বপ্ন বোনার শুরুটা হয়েছিল দুই যুগ আগে; নানা টানাপড়েন আর অপপ্রচার পেরিয়ে, ষড়যন্ত্র আর প্রতিকূলতা প্রতিহত করে এ দেশের মানুষের টাকায় বাস্তব রূপ পেয়েছে পদ্মা সেতু। গতকাল শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে দেশের মানুষকে ‘স্যালুট’ জানালেন শেখ হাসিনা, বললেন, জনগণের সমর্থন আর সাহসেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কঠিন কাজটি করা সম্ভব হয়েছে। এই সেতু যে কেবল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে তাই না, পুরো দেশের সামনে খুলে দেবে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার, যে পথ ধরে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণের অভিযাত্রায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে এবং পরে সেতু পেরিয়ে জাজিরা প্রান্তে ফলক ও ম্যুরাল উন্মোচন করেন সরকারপ্রধান। দুই দশক আগে তিনিই দক্ষিণ জনপদের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের এ সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। সেতুতে টোল দিয়ে তিনিই এ সেতুর প্রথম যাত্রী হয়েছেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে পদ্মার দুই তীরের তিন জেলার পাশাপাশি সারা দেশেই ছিল উৎসবের রঙ। বঙ্গবন্ধু এঙপ্রেসওয়ের দুই পাশ সাজানো হয় অসংখ্য ব্যানার-ফেস্টুনে, যেখানে শোভা পেয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। পদ্মাপাড়ের আনুষ্ঠানিকতা সাজানো হয়েছিল মূলত দুই ভাগে। মাওয়ায় রাষ্ট্রীয় আয়োজনে হয় সুধী সমাবেশ, যেখানে সরকারের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা, কূটনীতিকসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার অতিথি উপস্থিত ছিলেন।

এই সমাবেশ থেকেই পদ্মাসেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকিট, স্মারক নোট, স্যুভেনির শিট, সিলমোহর ও উদ্বোধন খাম উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সেতুর দুই তীরে ফলক উন্মোচন করে সারেন উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা। পরে তিনি যোগ দেন মাদারীপুরের শিবচরে আওয়ামী লীগের বিশাল সমাবেশে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা ছাড়াও মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা ও অন্যান্য জেলা থেকেও বাস, আর লঞ্চে করে কয়েক লাখ মানুষ সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন সকাল থেকেই। কোনো অবকাঠামোর উদ্বোধন উপলক্ষে এত বড় উৎসব, এত বড় আয়োজন আর কখনও বাংলাদেশ দেখেনি।

বলা হয়েছিল, গতকাল উদ্বোধন হলেও এ সেতুতে ওঠার সুযোগ সবার থাকবে না। আজ পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে যানবাহন চলাচলের জন্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শিবচরে থাককেই সেতুর দুই প্রান্তে উৎসুক জনতার ঢল নামে। কাউকে কাউকে রেলিংয়ে উঠে সেলফি তুলতেও দেখা যায়। পরে তাদের সরাতে সক্রিয় হতে হয় পুলিশকে।

লিখব নতুন ইতিহাস : সকালে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে মুন্সীগঞ্জরে মাওয়ায় পদ্মা সেতু সার্ভিস এরিয়ায় সুধী সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। আমন্ত্রিত অতিথিরা সকালেই উপস্থিত হয়েছিলেন সেখানে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামও ছিলেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে। মঞ্চের দুই পাশে দুটো ডায়াস আর তার দুটো জায়ান্ট স্ক্রিন। এক পাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, অন্য পাশে তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন অতিথিদের আসনে। আরও ছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন, ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী।

পদ্মা সেতুর থিম সং ‘মাথা নোয়াবার নয়, বাঙালি যেহেতু; বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন দেশ, তুমি দিলে পদ্মা সেতু’ বাজিয়ে সুধী সমাবেশ শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য দেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব। পদ্মা সেতু গড়ে তোলার প্রেক্ষাপট এবং বন্ধুর পথ পরিক্রমা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয় অনুষ্ঠানে। তারপর বক্তৃতা দেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সবশেষে বক্তৃতা দিতে দাঁড়ান শেখ হাসিনা।

অনেক ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করেই যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ সম্ভব হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কেউ ‘দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, আমরা বিজয়ী হয়েছি।

বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা মাথা নোয়াইনি। আমরা কখনও মাথা নোয়াব না। জাতির পিতা শেখ মুজিব কখনও মাথা নোয়াননি, মাথা নোয়াতে শেখান নাই। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি জীবনের জয়গান গেয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ষড়যন্ত্রের কারণে সেতু নির্মাণ করতে প্রায় দুই বছর দেরি হয়। আমরা কখনও হতোদ্যম হইনি। হতাশায় ভুগিনি, আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলেছি এবং শেষ পর্যন্ত সকল অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর পথে যাত্রা করতে সক্ষম হয়েছি। আজকে পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি রঙের আলোর ঝলকানি। ৪২টি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

যারা বলেছিলেন, পদ্মা সেতু একটি স্বপ্ন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করা সম্ভব না, তাদের বিরুদ্ধে তার ‘কোনো অভিযোগ নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমার কোনো অনুযোগ নাই। তাদের হয়তো চিন্তার দৈন্যতা আছে, আত্মবিশ্বাসের দৈন্যতা আছে বলে আমি মনে করি। আজ থেকে আমি মনে করি, আজ থেকে তাদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে যে বাংলাদেশ পারে। আমি আশা করি, সেতুর কাজ বন্ধ করতে যারা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছে বা বাধা দিয়েছে, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তাদের হৃদয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। দেশের মানুষের প্রতি তারা আরও দায়িত্ববান হবে।

পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের মানুষ, যারা নির্দ্বিধায় তাদের জমি হস্তান্তর করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। তাদের ও তাদের পরিবারকেও আমরা পুনর্বাসন করেছি। কিন্তু যারা নিজের জায়গা ছেড়ে চলে যায়, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যে, তাদের ত্যাগ ও সহযোগিতা না হলে হয়ত এ সেতু নির্মাণ করা কঠিন হতো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি বীরের জাতি। বাঙালির ইতিহাসের প্রতিটি বাঁক রঞ্জিত হয়েছে ত্যাগ-তিতিক্ষা আর রক্ত ধারায়। কিন্তু বাঙালি আবার সদর্পে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। ‘যতবারই হত্যা করো, জন্মাবো আবার; দারুণ সূর্য হবো, লিখবো নতুন ইতিহাস’, কবির ভাষায় বলেন তিনি।

উন্মোচন উদ্বোধন : সুধী সমাবেশে বক্তব্য শেষে স্মারক ডাক টিকিট, স্মারক নোট, স্যুভেনির শিট, সিলমোহর ও উদ্বোধনী খামের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেতু নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলীদের সঙ্গে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গ্রুপ ছবি তুলতে দাঁড়ান ক্যামেরার সামনে। মাওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বেলা ১১টা ৪৯ মিনিটে ৭৫০ টাকা টোল দিয়ে প্রথম যাত্রী হিসেবে পদ্মা সেতু এলাকায় প্রবেশ করেন সরকারপ্রধান। শুধু নিজের গাড়ির নয়, বহরে থাকা সবগুলোর গাড়ির মোট ১৬ হাজার ৪০০ টাকা টোল মেটান তিনি।

টোল প্লাজা থেকে বেরিয়ে বেলা ১১টা ৪৯ মিনিটে পদ্মা সেতুর দিকে এগিয়ে যায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর। সেতুতে ওঠার আগে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচন করেন সরকারপ্রধান। বাতাসে রঙিন আবীর উড়িয়ে বর্ণিল পরিবেশে উদ্বোধন হয় বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর।

ফলক উদ্বোধনের পর মোনাজাত পরিচালনা করেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সেখানে লাল গালিচায় ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদও ছিলেন এ সময়। এই উৎসবের ক্ষণে মায়ের সঙ্গে তাকে মোবাইল ফোনে সেলফি তুলতে দেখা যায়। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন এ সময়। এছাড়া ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ ওঠায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হওয়া যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং তখনকার যোগাযোগ সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াও উপস্থিত ছিলেন এ সময়। যদিও সেই অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।

মাওয়ায় ফলক উন্মোচনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর মূল সেতুতে ওঠে বেলা ১২টা ৭ মিনিটে। কিছুক্ষণ পর বহরের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে দাঁড়ান শেখ হাসিনা। সেখানে প্রায় ১৫ মিনিট সময় কাটান তিনি, উপভোগ করেন বিমান ও হেলিকপ্টারের ফ্লাইং ডিসপ্লে। কয়েকটি হেলিকপ্টার পতাকা উড়িয়ে প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। বিমান থেকে ছড়ানো লাল, সবুজ, নীলসহ নানা রঙের ধোঁয়া।

সেতুতে দাঁড়িয়ে মিগ-২৯ জঙ্গি বিমানের প্রদর্শনীও উপভোগ করেন সরকারপ্রধান। উৎসবের এ মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরায় ধারণ করতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে। স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরীও সেতুর ওপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন এ সময়।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতু পাড়ি দিয়ে ১২টা ৩৪ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছান শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে। সেখানে সেতুর আরেকটি ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে যোগ দেন মাদারীপুরের শিবচরে আওয়ামী লীগের বিশাল সমাবেশে।

সেখানে তিনি বলেন, সেতু নির্মাণে যারা বাধা দিয়েছিল, তাদের ‘উপযুক্ত জবাব’ দেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ দেখিয়েছে, ‘আমরাও পারি’। বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর জনগণের ‘সাহস ও শক্তি নিয়েই’ সেতুর কাজ শুরু করেছিলেন জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এই খরস্রোতা পদ্মা নদী পার হতে গিয়ে আর কাউকে সন্তান হারাতে হবে না, বাবা-মাকে, ভাইবোনকে হারাতে হবে না। আজকে সেখানে আপনারা নির্বিঘ্নে চলতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। পদ্মা সেতুকে ‘প্রাণের সেতু’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ পাশে ছিল বলেই সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।

যান চলাচল আজ থেকে : উদ্বোধনের পরদিন থেকেই পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলবে, সেজন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। আজ রোববার সকাল ৬টা থেকেই সব ধরনের যানবাহন সেতুতে উঠতে পারবে বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম।

গতকাল সেতু উদ্বোধনের পর বিকালে তিনি বলেন, আজ সেখানে কোনো যানবাহন চলাচল করবে না। রোববার সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলো। এই ২১টি জেলার মাওয়া রুট ব্যবহারকারী বাসসহ যানবাহনগুলো এতদিন ফেরিতে পারাপার হতো। এখন সেতুতে চলবে। পদ্মা সেতু নিয়ে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ থাকায় আজ ভিড় হবে বলে ধরে নিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প পরিচালক শফিকুল বলেন, শুরুর দিন যানবাহন ব্যাপক চাপ হবে বলে আমরা ধারণা করছি। আমাদের টোলপ্লাজার কর্মীদেরও সেভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, তারা ভিড় সামলাতে পারবে। এছাড়া সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার জন্যও সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।

সেতুতে টোলের হার : ছোট বাসে ১৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে ২০০০ টাকা এবং বড় বাসে ২৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। ছোট ট্রাকের টোল ১৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ২১০০-২৮০০ টাকা, বড় ট্রাকে ৫৫০০ টাকা। পিকআপের টোল ১২০০ টাকা। কার ও জিপের টোল ধরা হয়েছে ৭৫০ টাকা, মাইক্রোবাসে ১৩০০ টাকা। মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতু পার হতে চাইলে টোল দিতে হবে ১০০ টাকা। পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াতকারী বেশিরভাগ পরিবহনের বাস ছেড়ে যাবে ঢাকার সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ : বাইডেন
পরবর্তী নিবন্ধপ্রমাণ করেছি বাংলাদেশও পারে