বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় ম্যানচেস্টার থেকে মাটিরাঙায়

মাহফুজ রাসেলের অন্যরকম উদ্যোগ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | সোমবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় প্রকৃতি রক্ষায় কাজ করছে ‘পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগ’। ছয় বছর আগে মাটিরাঙার পূর্বখেদার নিভৃত অরণ্য বেষ্টিত পিটাছড়ায় মাহফুজ রাসেল একাই এমন উদ্যোগ নেন। পরে বন্ধুরা মিলে গড়ে তুলেন পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগ। ৫ একরের ছোট টিলা কিনে শুরু করলেও এখন সেখানে ২৩ একরের প্রাকৃতিক বন রয়েছে। দেশে বেসরকারি উদ্যোগে প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণের উদ্যোগ এটা প্রথম বলে জানান তিনি।
মাহফুজ রাসেল জানান, ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে আমার একটা বাড়ি ছিল। সেটা বিক্রি করে দেশে ফেরার পর পাহাড়ে বসবাসের জন্য ছোট একটা পাহাড় নিই। এখানে থিতু হওয়ার পর বুঝতে পারি দেদারছে বন উজাড় হচ্ছে। শিকারিরা বন্যপ্রাণী শিকার করে নিচ্ছে। এসব থামানোর জন্য পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলি। এসব কাজে কয়েকজন বন্ধু আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে। শুরু হয় পথচলা। বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধে মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিই। এরই মধ্যে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সহায়তায় এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে কর্মশালাও করা হয়। ভালো সাড়া পেয়েছি। মানুষ বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধ করেছে। তবে এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। তবে ছয় বছরে ৫০ শতাংশ শিকার কমেছে। সম্প্রতি লজ্জাবতী বানর সংরক্ষণের জন্য সচেতনতা কর্মসূচি পালন করা হয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগের ২৩ একরের প্রাকৃতিক বন রয়েছে। সেখানে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, লতা-গুল্ম। বন না বাঁচলে বন্যপ্রাণী কোথায় থাকবে? ইকোসিস্টেম বাঁচাতে হলে আগে বন রক্ষা করতে হবে। তাই বনের পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। এজন্যই মূলত প্রাকৃতিক বন গড়ে তুলেছি।
বনের পরিধি বাড়ায় বন্যপ্রাণীর বংশ বিস্তার হয়েছে। বন্যপ্রাণীর পরিমাণ বাড়ছে। এর মধ্যে বনে সজারু, হলুদ কাছিম, চিতা বিড়ালসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী দেখা গেছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মাহফুজ বলেন, এখানে ব্যক্তি মালিকানাধীন বন উজাড় থামেনি। শিকার বন্ধ হলেও এক শ্রেণীর সিন্ডিকেট তার বন থেকে কাঠ কেটে তা স্থানীয় ইটভাটায় বিক্রি করছে। এতে বন্যপ্রাণীর আবাস নষ্ট হচ্ছে।
ব্যক্তি উদ্যোগে শুরু হলেও বন রক্ষায় এই উদ্যোগে সানজিদা জুঁই, পাখি বিশেষজ্ঞ সায়েম চৌধুরী, বন্যপ্রাণী গবেষক হাসান আলী রাজী, ইনাম আহমেদ, ডা. রাফিয়াসহ বেশ কয়েকজন বন্ধু যোগ দেন বলে জানান মাহফুজ রাসেল।
পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগ দেখতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আলী আকবর রাফি ও সাদিয়া সুলতানা জানান, আমরা নিজেদের বাসস্থান করতে গিয়ে বন্যপ্রাণীদের বাসস্থান নষ্ট করে ফেলছি। এখানে ব্যতিক্রমী ধারণা তৈরি করছে পিটাছড়া। এই এলাকায় বন্যপ্রাণী শিকার কমেছে। যখন মানুষ দেদারছে বন উজাড় করছে সেখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বন সংরক্ষণ সত্যিই ব্যতিক্রম। আমরা চাইব, সবাই বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় এগিয়ে আসুক।
বন্যপ্রাণী গবেষক হাসান আলী রাজী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বন সংরক্ষণের সবচেয়ে বড় বাধা হলো উজাড় হয়ে যাওয়া। ইটভাটার জন্য বন ধ্বংস করা হচ্ছে। এমন সময়ে পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগ বন রক্ষায় দারুণ কাজ করছে। এখন যদি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বনগুলো রক্ষা করতে পারি তাহলে বন্যপ্রাণী তাদের আশ্রয় খুঁজে পাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৫০ ধার্য তারিখেও দুদকের মামলায় হল না সাক্ষ্য
পরবর্তী নিবন্ধগরম মসলার বাজারেও সিন্ডিকেটের কারসাজি