টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বির্পযয়ের মুখে খাগড়াছড়ি। রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে প্লাবিত হয়েছে গ্রাম থেকে শহর।সম্প্রতিকালে খাগড়াছড়ি শহর না ডুবলেও আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেই রের্কডও ভেঙেছে। শহরের ভেতরে প্রবেশ করছে বন্যার পানি। সকাল থেকে শহরের আদালত সড়ক, মাস্টারপাড়া, মিলনপুর, বায়তুশরফসহ খাগড়াছড়ি পৌর শহরের সাতটি সড়ক এখন পানির নিচে। জেলা সদরের বেশীর এলাকার মানুষ পানিবন্দি।
গতকাল বুধবার পানি কমে যাওয়ায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের আশ্রয় কেন্দ্র থেকে আসা পরিবার কেন্দ্রগুলো বাড়ি ফিরেছিল। তবে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে পুনরায় বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মাইনী নদীর পানি বেড়ে দীঘিনালার মেরুং, বোয়ালখালি ও কবাখালি ইউনিয়নের ৫০ গ্রাম প্ল্যাবিত হয়। বন্যায় পানিতে ডুবে গেছে সড়ক, কৃষি জমি ও পুকুর। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পরে দুর্ভোগে পরেছে সাধারণমানুষ।
খাগড়াছড়ি পৌর শহরের বাসিন্দা আরাফুলত ইসলাম, মাঈন উদ্দিন ও মো.বেলাল হোসান বলেন, এতো পানি গত ১০ বছরেও দেখি নাই। শহরের মধ্যে সাধারণত পানি উঠে না। এবার শহরের প্রধান সড়কগুলোতে পানি উঠে গেছে।
টানা এক সপ্তাহ বৃষ্টি আর নদীর পানি বেড়ে পৌরসভার গঞ্জপাড়া, অপর্ণা চৌধুরী পাড়া, রাজ্যমনি পাড়া, কালাডেবা, বটতলী, ফুটবিল, শান্তিনগর, মুসলিম পাড়া পুরোপুরি পানির নিচে। কেবল খাগড়াছড়ি সদরের ৩ হাজারের মতো পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে অনেকেই আবার আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে।
মঙ্গলবার থেকে বিকেল থেকে সাজেক সড়কের কবাখালি, বাঘাইহাট বাজার ও মাচালং বাজারসহ একাধিক অংশ ৫ থেকে ৬ ফুট পানির নীচে তলিয়ে যায়। এতে সড়কটিতে পর্যটকবাহী যানবাহনসহ সকল ধরনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়ক ডুবে যাওয়ায় সাজেকে বেড়াতে এসে আটকা পরেছে অন্তত আড়াইশ পর্যটক।
এদিকে পাহাড়ি ঢলে দীঘিনালা-লংগদু সড়কের হেড কোয়াটার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ার রাঙামাটির লংগদুর সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ডুবে গেছে মেরুং বাজার।
মেরুং ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ঘনশ্যাম ত্রিপুরা বলেন, বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। মাইনী নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এর মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র ডুবা শুরু হয়েছে। মেরুং বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রের নীচতলা ডুবে গেছে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া ২৯ টি পরিবারকে বিদ্যালয় ভবনে দ্বিতীয় তলায় তুলে দেয়া হয়েছে।
খাগড়াছড়ি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১ শ ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে।
বন্যা দুর্গত মানুষে মাঝে তিন দিন ধরে গরম খাবার রান্না করে বিতরণ করছে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। এদিকে ফেনী নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে রামগড় পৌরসভাসহ নিচু এলাকা। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে সহস্রাধিক মানুষ।
জেলা প্রশাসক মো: সহিদুজ্জামান জানান, খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ১৮টিসহ পুরো জেলায় ৯৯টি আশ্রয় খোলা রাখা হয়েছে। আশ্রিতদের জন্য শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।