আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন তিন জেলার কয়েক লাখ মানুষ। বলা হচ্ছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার বা বান্দরবানে বন্যা হতে পারে এমন ধারণাই ছিল না আবাহাওয়া অধিদপ্তর বা বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের। ফলে কোনো প্রস্তুতিই ছিল না এই এলাকার মানুষের।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের নির্দেশে চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতি ও ভূমিধস মোকাবেলায় অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার লক্ষ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আইএসপিআর জানায়, মোতায়েন করা সেনাসদস্যদের মাধ্যমে নিরলসভাবে উদ্ধার তৎপরতা, জরুরি ত্রাণকার্য পরিচালনা, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান এবং বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বাত্নক সহায়তা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর অন্যান্য ফরমেশনসমূহও এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে এবং অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সদা প্রস্তুত রয়েছে। উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী প্রধান বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
এদিকে, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার স্রোতে চন্দনাইশের দোহাজারীতে ভেসে যাওয়া দাদা–নাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার ৯ আগস্ট বিকেল ৪টার দিকে দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন কাছেমুল উলুম মাদরাসার পাশে স্থানীয়রা বন্যার পানিতে জাল দিয়ে মাছ শিকারের সময় একটি গাছে আটকে থাকা অবস্থায় প্রথমে নাতি মো. আনাছ (১০)-এর মরদেহ এবং বিকেল ৫টার দিকে হাশিমপুর পাঠানীপুল এলাকা থেকে দাদা আবু ছৈয়দ (৮৩)-এর মরদেহ উদ্ধার করে। জানা যায়, বন্যার পানি বাড়তে থাকায় গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে দোহাজারী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড আফজল সওদাগর বাড়ি এলাকা থেকে তার পিতা আবু ছৈয়দ নাতি আনাছকে নিয়ে জামিজুরীস্থ তার বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে তারা বন্যার স্রোতে পড়ে ভেসে যায়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিল।
হঠাৎ করে কেন এই বন্যা– এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এই বন্যার আগাম কোনো সতর্কতা ছিল না। এটা সব সময় হয় না। গত ২৫–৩০ বছরে এই এলাকায় এমন বন্যা হয়নি। কারণ, হিসেবে আমরা যেটা দেখেছি, সাগরে একটা গভীর নিম্নচাপ ছিল, যেটা পরে সমতল ভূমির উপর দিয়ে গেছে। এটা ছিল ৩১ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর ৩ আগস্ট ছিল পূর্ণিমা। পূর্ণিমার সময় জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বাড়ে। এর সঙ্গে আছে বৃষ্টি। আমরা দেখলাম, গত তিনদিনে বান্দরবানে ৮০০ মিলিলিটার বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামে দুই দিন ৪৬০ মিলিলিটার বৃষ্টি হয়েছে। একসঙ্গে এত বৃষ্টি হলে পানি নামতে সমস্যা হয়। তখন সেটা সমতলে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোর সঙ্গে তো যেসব জলাধার আগে পানি ধরে রাখতো সেগুলো বন্ধ করে নগরায়ন হয়েছে। আবার নদীর তলদেশে পলি জমে পানি এখন আর নীচে যেতে পারে না। ফলে উপরে সেটা ছড়িয়ে পড়ছে। এর বাইরে জলবায়ুর পরিবর্তন তো আছেই।’
এ কথা আমরা জানি, বর্তমান সরকারের সময়ে যতগুলো বন্যা হয়েছে, তাতে মানবিক কোনো বিপর্যয় স্পর্শ করতে পারেনি। বন্যার্তদের সাহায্যে সরকার কোনো ধরনের গাফিলতি করেনি। তারপরও বলা জরুরি, ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ ব্যবস্থায় যারা জড়িত তাদের তরিৎকর্মার ওপরে অনেক কিছুই নির্ভরশীল। এবার যে ভয়াল বন্যা দেখা দিয়েছে এবং ব্যাপক ক্ষতি ডেকে এনেছে, এতে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফলে আগেভাবেই সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে মানুষ যাতে বিশুদ্ধ পানি খাদ্যসহ ত্রাণ সামগ্রীর অভাবে যেনো কোনো কষ্ট না পায়। তাদের যেনো উপোস থাকতে না হয়।
বিশ্লেষকরা বলেন, বৃষ্টি ও বন্যায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অনেক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাবারের সঙ্গে বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ তীব্র পানি সংকট বোধ করতে পারে। নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি ও সংগঠন পর্যায়ের তৎপরতাও দরকার। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দুর্গত মানুষের, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রায় বার্ষিক এ দুর্যোগ মোকাবেলায় স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার। বন্যাদুর্গতদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় দেওয়া এবং শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা জরুরি। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। বিত্তবানদেরও উচিত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো মানুষের কাজ।