বন্ধ কারখানায় সিবিএ নির্বাচনের ডামাঢোল

৫ বছর ধরে ধুঁকছে সিইউএফএল

আনোয়ারা প্রতিনিধি | রবিবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

পাঁচ বছর ধরে ধুঁকছে আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়ায় প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)। পাশেই অবস্থিত বহুজাতিক মালিকানার কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো); সেটি ঠিকমত চললেও সিইউএফএলে ভিন্ন চিত্র। গ্যাস সংকট, যান্ত্রিক ত্রুটিসহ নানা কারণে বারবার উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে কারখানাটির। সর্বশেষ গত ৯ সেপ্টেম্বর উৎপাদনে গেলেও দুই সপ্তাহ না যেতেই যান্ত্রিক সমস্যায় ফের বন্ধ হয়ে যায় সিইউএফএল। এভাবে চলতি বছর ৫ দফায় বন্ধ হয়েছে কারখানাটি। সব মিলিয়ে গত ৫ বছরে ১২ মাসও চালু ছিল না সিইউএফএল। এই পরিস্থিতিতে বন্ধ কারখানায় এখন চলছে সিবিএ নির্বাচনের ডামাঢোল। আগামী ২৮ অক্টোবর সিবিএ নির্বাচন। এই নির্বাচনে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া ছাপিয়ে কারখানা নিরবচ্ছিন্নভাবে সচল রাখাটাই হয়ে উঠেছে বড় চ্যালেঞ্জ। সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, সিবিএর সোচ্চার ভূমিকা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সিইউএফএলের রুগ্ন দশার জন্য দায়ী।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সিইউএফএল। সে সময় দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা মেটাতে এই কারখানা ছিল অন্যতম ভরসা। পরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নতুন সার কারখানা হয়েছে। তবে সেই অর্থে আধুনিকায়ন করা হয়নি সিইউএফএলের। কারখানা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ২০ বছরের মেয়াদ বেঁধে দিলেও ইতোমধ্যে পার হয়ে গেছে প্রায় ৩২ বছর।
জানা গেছে, স্থাপনের পর থেকে একনাগাড়ে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সিইউএফএলের উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক ছিল। এরপর গ্যাস সংকট সিইউএফএলের জন্য বিপদ ডেকে আনে। গ্যাস সংকটের কারণে বারবার কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। ১৯৯৭ থেকে কারখানায় নানা রকম যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের অধীন এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রহিম বলেন, বিভিন্ন সমস্যার কারণে সেপ্টেম্বরে উৎপাদনে গিয়েও আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদি সবকিছু ঠিক থাকে আগামী সোমবার থেকে আবারও উৎপাদন শুরু হবে। এতে করে দৈনিক ১২০০ থেকে ১৩০০ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
কারখানা সূত্রে জানা যায়, সবকিছু ঠিক থাকলে এ কারখানায় দৈনিক ১৭০০ মেট্রিক টন সার উৎপাদন হওয়ার কথা। কারখানাটির বার্ষিক ৫ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া ও ৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। কর্ণফুলী নদীর মিঠা পানি নির্ভর এ কারখানা চালু রাখতে দৈনিক ১৯ হাজার ২০০ মেট্রিক টন পানির প্রয়োজন হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কর্ণফুলী নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে গেলে চাহিদামতো পানি নেওয়া সম্ভব হয় না। তখন উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি উৎপাদন শুরু হলেও ১৮ মার্চ তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ৩ এপ্রিল শুরু হলে পরের দিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ১৫ জুন আবার উৎপাদন শুরু হয় এবং ৭ জুলাই পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ কারখানার রিঅ্যাক্টর নষ্ট হলে আবারও উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকায় পাইপলাইন, বয়লার, রিয়েক্টর ও কনভেয়ার বেল্টসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতিতে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে সারাক্ষণ মেরামতের কাজ করতে হয়। এদিকে বেসরকারি সার কারখানাগুলো ঠিকমত চললেও রাষ্ট্রায়ত্ত সিইউএফএল কেন বারবার বন্ধ হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর নেই কারো কাছে। এই প্রেক্ষাপটে সিবিএ নির্বাচনেও এটি হয়ে ওঠেছে মূল এজেন্ডা। প্রার্থীরাও বলছেন, নির্বাচিত হলে কারখানা সচল রাখাটাই হবে মূল লক্ষ্য।
সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি, সিবিএর সোচ্চার ভূমিকা না থাকায় সিইউএফএলে বারবার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে তা অন্য জায়গায় দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সময় উৎপাদন বন্ধ থাকার কারণে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও বন্ধ থাকে। এ কারণে শ্রমিক-কর্মচারীরা কারখানা নিরবিচ্ছিন্ন চালু রাখতে সক্ষম এমন নেতৃত্বই দেখতে চান বলে জানান।
সিইউএফএল সিবিএ’র বর্তমান সহ-সম্পাদক মো. ইমরান খান বলেন, নির্বাচনে পুনরায় জয়ী হলে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কারখানা সার্বক্ষণিক সচল রাখার দাবি জোরালো করা হবে। তিনি বলেন, সিইউএফএল কারখানায় উৎপাদিত সার দেশের কৃষি সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই সার বিসিআইসির ডিলারদের মাধ্যমে দেশের ২৫টি জেলায় সরবরাহ করা হয়। সিবিএ’র সভাপতি পদপ্রার্থী মো. আবুল বশর বলেন, নির্বাচনে জয়ী হলে বন্ধ কারখানা সচল ও কারখানার অনিয়ম প্রতিরোধে শ্রমিকদের সাথে নিয়ে কাজ করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধকখনো কর্নেল, কখনো এসপি