বন্দর প্রায় অচল

ঢাকায় বৈঠক আজ ।। পণ্য পরিবহন ধর্মঘটে ব্যাহত কার্যক্রম ১৯ আইসিডি থেকেও পণ্য ঢোকেনি বন্দরে

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ

১৫ দফা দাবিতে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের পণ্য পরিবহন ব্যাহত হয়েছে। ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের দাবির সাথে প্রাইম মুভার মালিক সমিতি একাত্মতা প্রকাশ করায় পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠেছে। গতকাল ভোর থেকে শুরু হওয়া অচলাবস্থায় আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্টসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আজ বুধবার সকালে ঢাকায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে দাবিগুলোর সুরাহা হলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গতকাল সকাল ৬টা থেকে ধর্মঘট শুরু হলে বন্দরের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় পণ্যবাহী গাড়ি ঢুকতে পারেনি বন্দরে। ফলে বন্দরের এনসিটি, সিসিটি ও জিসিবির জেটি ও ইয়ার্ডে লোড-আনলোড কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। কোনো কোনো জাহাজে সীমিতভাবে কার্যক্রম চললেও কোনো কোনো জাহাজে পুরো কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বন্দরের ইয়ার্ড থেকে আইসিডিতে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা বন্দর এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে পুলিশ, বিআরটিএ ও বন্দরের বিরুদ্ধে মিছিল করে। এদিকে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে প্রাইমমুভার মালিক শ্রমিকরা।
বন্দর সূত্র জানায়, গতকাল বন্দরে বার্থিংয়ে থাকা অধিকাংশ জাহাজে কাজ হয়নি। চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালে বার্থিংয়ে থাকা দুটি জাহাজের মধ্যে এএস সিসিলিয়া জাহাজের এক্সপোর্ট এবং খালি কন্টেইনার লোডিং কার্যক্রম সীমিত আকারে চলেছে। তবে ওই কন্টেনার টার্মিনালে বার্থিংয়ে থাকা অপর জাহাজ এমভি মার্কস জাকার্তায় লোডিং-আনলোডিং হয়নি। বন্দরের ইয়ার্ড থেকে কোনো পণ্য বেসরকারি আইসিডি বা অন্য কোথাও সরবরাহ হয়নি। আবার ১৯টি বেসরকারি আইসিডি থেকেও কোনো পণ্য বন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেনি। আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আমদানি-রপ্তানিকারকসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা। তারা বলছেন, আজকের মধ্যে সংকটের সুরাহা না হলে জট তৈরি হবে। বন্দরের জট পরিস্থিতি শূন্যতে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। দিনে দিনে কন্টেনার জাহাজের বার্থিং ব্যবসা-বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছিল। কিন্তু এই ধর্মঘট সংকট তৈরি করবে।

জানা যায়, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের দুই নেতা গতকাল ঢাকায় বিআরটিএর চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। ভারী লাইসেন্স ইস্যুর ব্যাপারে আলোচনা হলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। রাতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের কথা থাকলেও তা হয়নি। আজ সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার হতে পারে।
এদিকে সংগঠনের সভাপতি লতিফ আহম্মেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহম্মদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান ট্রাক প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক এসোসিয়েশনের সভাপতি মুকবুল আহমদ, অতিরিক্ত মহাসচিব আব্দুল মোতালেব, বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মো. মনির, জেনারেল সেক্রেটারি ওয়াজি উল্লাহ্‌, আন্তঃজিলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সিরাজুল হক, কো-চেয়ারম্যান হাজী শওকত আলী, চট্টগ্রাম বন্দর ট্রাক মালিক ও কন্ট্রাক্টর এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জহুর আহম্মদ প্রমুখ।
১৫ দাবি হচ্ছে, প্রতি ৫০ কিলোমিটার পরপর পণ্য পরিবহন শ্রমিকদের জন্য সড়ক-মহাসড়কের নিরাপদ দূরত্বে বিশ্রামাগার ও কার্ভাডভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার টার্মিনাল নির্মাণ, সারা দেশের জন্য একই পরিমাণ ওজন নির্ধারণ করে অতিরিক্ত (ওভারলোড) পণ্য পরিবহন বন্ধে লোডিং পয়েন্ট তথা পণ্য পরিবহনের উৎস স্থলে সরকার নির্ধারিত ওজন নিশ্চিত করে পণ্যবাহী গাড়িগুলোতে মালামাল লোড করার ব্যবস্থা করা, লোড করা গাড়িগুলোকে উৎস স্থলে পণ্যের ওজন স্লিপ দেওয়া, গাড়ির কাগজপত্র চেকিংয়ের জন্য স্থান নির্ধারণ, মোটরযান মালিকদের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর বাতিল, পুলিশের ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানি বন্ধ করা, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জটিলতা নিরসন করে সহজ শর্তে লাইসেন্স প্রদান, পণ্য পরিবহনের সময় মালামাল চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে জরুরি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ড্রাইভার, মালিক বা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সিসহ সবাইকে আইনের আওতায় আনা এবং গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদ করার সুযোগ দেওয়া।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপরিবেশ ছাড়পত্র বিষয়ে আইনজীবী সমিতির বক্তব্য
পরবর্তী নিবন্ধকোতোয়ালীর আবাসিক হোটেলে অগ্নিকাণ্ড