বন্দরে আটকা পাঁচ হাজার কন্টেনার

ধর্মঘটে আইসিডিগুলোতে আটকে আছে ৯ হাজার ৭০০ কন্টেনার তিন জাহাজে সিডিউল বিপর্যয়

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৮ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ

পরিবহন ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে চট্টগ্রাম বন্দর পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কন্টেনারসহ পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ। বন্দর থেকে বেসরকারি আইসিডিসহ দেশের কোথাও কোনো পণ্য পরিবাহিত হয়নি। আবার আইসিডি থেকে কোনো পণ্য বোঝাই কন্টেনার বন্দরে প্রবেশ করেনি। ফলে বন্দরে ৫ হাজারের বেশি কন্টেনার আটকা পড়েছে। আর বেসরকারি আইসিডিগুলোতে আটকা কন্টেনারের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার ৭০০। পণ্য পরিবহন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর এবং বেসরকারি আইসিডিগুলোতে ৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য আটকা পড়েছে।
অপরদিকে সময়মতো বন্দরে কন্টেনার না পৌঁছার ফলে কলম্বোগামী তিনটি কন্টেনার জাহাজ একদিন বাড়তি সময় জেটিতে অপেক্ষা করছে। আজকের মধ্যে কন্টেনারগুলো বন্দরে না পৌঁছলে জাহাজ তিনটি রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার না নিয়েই বন্দর ত্যাগ করবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গতকাল কয়েকটি ট্রাক ও কভার্ড ভ্যানে কিছু পণ্য পরিবহনের চেষ্টা করলেও পোর্ট কানেকটিং রোডে শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে। এতে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। বন্দর থেকে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো কোনো কন্টেনার ডেলিভারি হয়নি। আবার বাইর থেকেও কোনো কন্টেনার বন্দরে প্রবেশ করেনি।
বেসরকারি আইসিডিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সেক্রেটারি রুহুল আমিন সিকদার গতকাল আজাদীকে বলেন, সব ধরনের পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। বন্দরে কোনো পণ্যই পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। আবার বন্দর থেকেও কোনো পণ্য আসেনি।
গত শুক্রবার থেকে গতকাল পর্যন্ত আইসিডিগুলোতে প্রায় ৯ হাজার ৭০০ টিইইউএস কন্টেনার আটকা পড়েছে। কন্টেনারগুলো বন্দরে পাঠানোর সিডিউল থাকলেও ধর্মঘটের কারণে সম্ভব হয়নি। এসব কন্টেনারের অধিকাংশই গার্মেন্টস সেক্টরের তৈরি পোশাক।
বন্দরের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, আইসিডি থেকে সময়মতো রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার বন্দরের হুক পয়েন্টে না পৌঁছায় তিনটি জাহাজের সিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। কলম্বোগামী জাহাজ তিনটি আজ বন্দর ত্যাগ করার কথা থাকলেও কন্টেনার না পাওয়ায় তারা বেকায়দায় পড়ে। ওই তিনটি জাহাজ একদিন জেটিতে অবস্থান করার অনুমতি প্রার্থনা করলে বন্দর কর্তৃপক্ষ অনুমোদন করে। এতে করে গতকাল যাওয়ার কথা থাকলেও যেতে না পারা জাহাজ তিনটি আজ বন্দর ত্যাগ করবে। তবে এর মধ্যে কন্টেনার বন্দরে না পৌঁছলে জাহাজ তিনটি কন্টেনার না নিয়েই নোঙর তুলবে। এমভি এঙপ্রেস লোটসে, এমভি স্প্রিট অব ব্যাংকক ও এমভি এ এস সিসিলিয়া নামের ওই তিনটি জাহাজে প্রায় ১৩৫০ টিইইউএস পণ্য বোঝাই কন্টেনার গতকাল কলম্বো যাওয়ার কথা ছিল।
বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় অন্যান্য কার্যক্রমও হুমকির মুখে পড়ছে। বন্দরের ইয়ার্ডে বাড়ছে কন্টেনার। বন্দরের ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউএস ধারণক্ষমতার বিপরীতে গতকাল ইয়ার্ডে ছিল ৩৮ হাজার ৭৮৩ টিইইউএস কন্টেনার। তিন দিনের পরিবহন ধর্মঘটে বন্দরে ৫ হাজার টিইইউএসের বেশি কন্টেনার আটকা পড়েছে। ৫ নভেম্বর বন্দরে কন্টেনার ছিল ৩৩ হাজার ৩৩০ টিইইউএস।
এদিকে বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের সাপ্লাই নেটওয়ার্কও মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করেছে। কাঁচাবাজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে পরিবহন ধর্মঘটের প্রভাব দেখা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বন্দর থেকে কোনো কন্টেনার খালাস না হয়নি। ধর্মঘটের কারণে বন্দরের স্বাভাবিক পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। ধর্মঘট লাগাতার হলে সংকট আরো প্রকট হবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এঙপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি ক্রমে নাজুক হচ্ছে। বন্দরে কন্টেনার পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় তৈরি পোশাক খাত মারাত্মক সংকটে। বিভিন্ন আইসিডিতে প্রচুর কন্টেনার আটকা পড়েছে। কন্টেনার রেখে জাহাজ চলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশসহ প্রশাসনের সহায়তায় শনিবার রাতে ঢাকা থেকে বিভিন্ন পোশাক কারখানার রপ্তানি পণ্য চট্টগ্রামের আইসিডিগুলোতে আনার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু আইসিডি থেকে এসব পণ্য বন্দরে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আবার আইসিডিমুখী গাড়িও শ্রমিকেরা বাধা দিয়েছে। এই সংকট দ্রুত নিরসন না হলে তৈরি পোশাক খাত বড় সংকটে পড়বে। অপরদিকে বন্দর থেকে কাঁচামাল সময়মতো কারখানায় না পৌঁছানোর ফলে বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদন চালানো কঠিন হবে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে গত শুক্রবার থেকে পরিবহন ধর্মঘট চলছে। গতকাল বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে ডিজেলের দাম কমানোর দাবিতে চলমান ধর্মঘট অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক, কভার্ড ভ্যান, ট্যাংকলরি প্রাইম মুভার মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাস ভাড়া বাড়ল ২৭ শতাংশ
পরবর্তী নিবন্ধপরীর পাহাড় না কোর্ট হিল