বন্দরের ১৮০ কোটি টাকা ছাড় নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ

নগরীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রয়োজনীয় সাত একর ভূমির ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। বন্দর কর্তৃপক্ষের অন্তত ১৮০ কোটি টাকা দামের এই ভূমির বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। উচ্চ পর্যায়ের চার সদস্যের একটি কমিটিকে বিষয়টি চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়। দুই যুগ্ম সচিবের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটি বিষয়টি চূড়ান্ত করতে আগামী সপ্তাহে চট্টগ্রাম আসছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দরের সন্নিকটস্থ টানেল রোড পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। চারটি পৃথক ধাপে বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকল্পটির কাজ। প্রকল্পটির বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার এলাকায় বিদ্যমান সড়কের ওপর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা ফ্লাইওভার নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বিবেচনায় কর্তৃপক্ষের আপত্তির মুখে ডিজাইন পরিবর্তন করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিদ্যমান সড়কের অন্তত ৩০ ফুট বাইরে। এতে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাত একর ও ব্যক্তি মালিকানাধীন পাঁচ একর মিলে মোট ১২ একর জায়গা হুকুম দখল করতে হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের ৬.৬৬৯ একর ভূমির ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ১৮০ কোটি টাকার একটি বিষয় রয়েছে। কিন্তু মূল প্রকল্পে এই টাকার বিষয়টি না থাকায় একটি জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় বন্দর কর্তৃপক্ষ মূল্য না নিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য ভূমি প্রদান করবে, নাকি মূল্য নেবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। বন্দর ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতার বিষয়টি জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের সচিব মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ খোন্দকারের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বন্দর ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দুইজন কর্মকর্তাকে সদস্য করা হয়। চার সদস্যের এই কমিটিই সরেজমিন পরিদর্শন করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রয়োজনীয় ভূমির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী সপ্তাহেই কমিটি বিষয়টি চূড়ান্ত করবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন, বারিক বিল্ডিং-সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। রাস্তার ডানপাশে বিদ্যমান ফুটপাত থেকে ৩০ ফুট জায়গা নিয়ে নির্মাণ করা হবে পিলার। চার লেনের ৫৪ ফুট ফ্লাইওভারের অর্ধেক থাকবে বিদ্যমান ফুটপাত এবং রাস্তার একাংশের উপর। বাকিটা চলে যাবে ফুটপাতের বাইরে। এতে নিচের বিদ্যমান সড়ক আরো দুই লেন বৃদ্ধি পাবে। বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে পশ্চিমে নিমতলা মোড়ের দিকে ডান পাশের বহুতল ভবনগুলোর বেশ কিছু অংশও ভাঙ্গা পড়বে। ভাঙ্গা পড়বে বন্দর ও কাস্টমস ভবনের দেয়ালও। এতে ৬.৯৯৬ একর ভূমি বাড়তি লাগছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস দৈনিক আজাদীকে জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। এ প্রকল্পের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের ৭ একরের মতো জায়গা লাগছে। এর দাম প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। বিষয়টি আমাদের ডিপিপিতে ছিল না। তাই নতুন করে এই টাকার সংস্থান করতে হবে। এখন বন্দর কর্তৃপক্ষ যদি টাকা না নিয়ে ভূমি দেয় তাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সুবিধা হয়। তিনি বলেন, দুইটিই সরকারি সংস্থা। প্রকল্পও সরকারি, ভূমিও সরকারি। এখন সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা তা বাস্তবায়ন করবো। এই সপ্তাহেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
উল্লেখ্য, ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বহুল প্রত্যাশিত প্রকল্পটি গত ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমশা থেকে মুক্তি মিলবে?
পরবর্তী নিবন্ধবাইডেন প্রশাসনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জেইন সিদ্দিক