বন্দরের উন্নয়নে একগুচ্ছ দাবি

বে টার্মিনাল ও পিসিটিকে দ্রুত অপারেশনে আনার আহ্বান বন্দর উন্নয়ন ও গবেষণা পরিষদের সভা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিক কার্যক্রমে গতি আনতে একগুচ্ছ দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতি থেকে রক্ষা করে বন্দরকে বিশ্বমানের একটি বন্দরে পরিণত করার লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে বে টার্মিনাল ও পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালকে (পিসিটি) দ্রুত অপারেশনে আনার পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন ও গবেষণা পরিষদের সভায় উপরোক্ত আহ্বান জানানো হয়। কমোডোর (অব.) জোবায়ের আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনারের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি পণ্যসামগ্রী পরিবহন গত বছর ৩২ লাখ টিইইউএস ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর ১১ কোটি টনেরও বেশি পণ্য খোলা অবস্থায় হ্যান্ডলিং হয়েছে।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বলা হয়, আগামীতে ভারতের ৭টি রাজ্যে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়া হতে পারে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি পাবে। ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বহু গুণে বৃদ্ধি পাবে। বিপুল সংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাই চট্টগ্রাম বন্দরকে দেশের ও আন্তর্জাতিক চাহিদা পূরণে উন্নীত করতে হবে। নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
বন্দরের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন কমডোর (অব.) জোবায়ের আহমেদ। এসব প্রস্তাবনার মধ্যে বর্তমানে নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল ও বে টার্মিনাল নির্মাণ কার্যক্রম দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা, টার্মিনালে স্বচ্ছতার মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে যোগ্য ও অভিজ্ঞ টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগ দেওয়া, কর্ণফুলী কন্টেনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ দ্রুততার সাথে শুরু করা, কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা রক্ষার্থে সদরঘাট থেকে নদীর মোহনা পর্যন্ত খননকাজ শুরু করা, মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের কাজ দ্রুত শেষ করে যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ অপারেটর নিয়োগ দেওয়া, চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকাকে সংযুক্ত করা, যাতে বন্দরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুততর হয়। কন্টেনার হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটাইজড করা, বিশেষ করে বন্দরের ট্যারিফকে সহজতর করে ব্যবহারকারীদের সাথে আর্থিক লেনদেন অনলাইনে করা। নিলামযোগ্য (প্রায় ১০ হাজার) কন্টেনার বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করে কন্টেনার জট এড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া। সন্দ্বীপ চ্যানেলে বাড়বকুণ্ড থেকে মীরসরাই পর্যন্ত নৌ পথে পরিবাহিত পণ্য (কন্টেনার ও বাল্ক) খালাসের জন্য জেটি নির্মাণ, যা মীরসরাই বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর্মকাণ্ডকে গতিশীল ও ব্যয় সাশ্রয় করবে।
সভায় বলা হয়, বন্দর থেকে বন্দরমুখী হাজার হাজার ভারী যানবাহন শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় পার্কিং ও চলাচল করায় যানবাহনের কবলে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে এবং রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে আধুনিক সুবিধাসম্বলিত ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করে ভোগান্তি থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে পারে। রেল ও নৌ পথ ব্যবহার করে ঢাকায় কন্টেনার পরিবহন বাড়ানো দরকার। বর্তমানে বছরে রেলের মাধ্যমে ৭০ হাজার টিইইউএস কন্টেনার পরিবহন হলেও তা ৫ লাখে উন্নীত করা দরকার। এতে রেলওয়ের আয় বৃদ্ধি এবং হাইওয়ের দুর্ঘটনা এড়ানো, ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কমবে ও পরিবেশবান্ধব হবে।
সভায় আরো বলা হয়, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বোর্ডের আর্থিক ক্ষমতা ২৫ কোটি টাকা। তাই বন্দরের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা নির্মাণ খাতে ও ভারী যন্ত্রপাতি ক্রয় খাতে আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানো দরকার। এতে বন্দরের কার্যক্রমের গতি দ্রুত হবে। বন্দর সীমানার মধ্যে উপকূলীয় সাগর সংলগ্ন তীরসমূহে জেটি নির্মাণ করে নৌ পথে কম খরচে পণ্য পরিবহন করা যেতে পারে। বন্দরের অভ্যন্তরে প্রতিদিন পণ্যবাহী ৬ হাজার গাড়ির আসা-যাওয়া হয়। কিন্তু জেটির অভ্যন্তরে ভারী যানবাহন চলাচলের কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নেই। তাই পণ্য খালাসের সময় দুর্ঘটনা বা দেরি হয়। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বন্দর সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দরকার, যাতে জেটিতে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা আসে।
সভায় অভিযোগ করা হয়, চুক্তি অনুযায়ী বন্দরের শ্রম শাখার অন্তর্ভুক্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ না দিয়ে লাখ টাকার বিনিময়ে নাম-পরিচয়বিহীন বহিরাগত লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যা বন্দরের নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং আইএস, পিএস কোডের সরাসরি লঙ্ঘন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মোবারক হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার সলিমুল্লাহ খান, ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী, হাজী জহুর আহমদ, সাংবাদিক অঞ্জন কুমার সেন, এম নাসিরুল হক, তপন চক্রবর্তী, নাজিমুদ্দিন শ্যামল, জসিম চৌধুরী সবুজ ও কালাম চৌধুরী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমাকে বন্দি করার পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়া হয়েছে : জেলেনস্কি
পরবর্তী নিবন্ধনতুন ইসি দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে : আওয়ামী লীগ