কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে। সরকার বঞ্চিত হচ্ছে কয়েকশ’ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে। চট্টগ্রাম বন্দরের অকশন শেডে পড়ে থাকা প্রায় সাত হাজার টিইইউএস কন্টেনার ভর্তি এসব পণ্য আটকা পড়ে আছে বহুদিন ধরে। এতে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
পদশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দরে ৫০ হাজার টিইইউএস কন্টেনার রাখার জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে গতকাল অকশন শেডে পড়েছিল ৬ হাজার ৮৭৭ টিইইউএস কন্টেনার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য নিয়ে আসা এসব কন্টেনারে কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য রয়েছে। নানা ধরনের আইনি জটিলতায় আমদানিকৃত এসব কন্টেনার জব্দ করা হয়েছে। আবার কিছু কিছু কন্টেনারে বোঝাই করে আনা পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় কিংবা অন্যান্য অসুবিধা হওয়ায় আমদানিকারক খালাস না করেই সটকে পড়েছে। শুল্কায়ন জটিলতায় মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়েও আটকা পড়ে বেশ কিছু কন্টেনার। এসব কন্টেনারে থাকা পণ্য নিলামের জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট অকশন শেডে নিয়ে রাখে। নিয়মানুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে নিলাম সম্পন্ন করার কথা থাকলেও এক বছরেরও বেশি সময় পড়ে আছে এমন কন্টেনারের সংখ্যা শত শত। নিলাম অনুষ্ঠান সম্পন্ন না হওয়ায় সরকার কোটি কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে দীর্ঘদিন কন্টেনারে আটকে থাকা বহু পণ্য বাণিজ্যিক মূল্যও হারিয়ে ফেলছে। ব্যবহারের উপযোগীও থাকছে না। মেয়াদ চলে যাচ্ছে কিংবা পচে যাচ্ছে। এসব পণ্য পরবর্তীতে আর নিলামে তোলারই উপযুক্ত থাকে না।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যদি নির্দিষ্ট সময়ে নিলাম করে তাহলে আটকে পড়া কন্টেনারে থাকা বহু পণ্যই ব্যবহার উপযোগী থাকবে। এসব পণ্য নিলাম করে অর্জিত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হবে। যাতে সরকার লাভবান হবে। নির্দিষ্ট সময়ে নিলাম না হওয়ায় বহু পণ্য ইতোমধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। যেগুলো পুনরায় অর্থ খরচ করে ধ্বংস করতে হবে। অপরদিকে বন্দরের অকশন শেডে দিনের পর দিন আটকে থাকা শত শত কন্টেনার বন্দরের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। বহুদিন ধরে বন্দর কর্তৃপক্ষ অকশন শেডে কন্টেনারের সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে আসলেও তা হচ্ছে না। এতে করে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে সংকট তৈরি হচ্ছে।
বন্দরের নিলাম শেডে আটকে শত শত রেফার কন্টেনার রয়েছে। যেগুলোতে রাতে দিনে চব্বিশ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়ে রাখতে হয়। এতে এমএলও কিংবা বক্স অপারেটরকে বিদ্যুৎ বিলও পরিশোধ করতে হয়। দ্রুত নিলামে তোলা হলে এসব অনাহুত বিদ্যুৎ ব্যবহার কমে যেতো।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যদি প্রতি ৩০দিন অন্তর নিলামের আয়োজন করে তাহলে বহুমুখী সুবিধা হবে বলে মন্তব্য করে সূত্র জানিয়েছে, এতে শুধু সরকারের রাজস্বই আয়ই নয়, মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানিকৃত কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার অবস্থা থেকেও রক্ষা করা যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, নিলামের কন্টেনারগুলো বন্দরের অতি প্রয়োজনীয় বহু জায়গা দখল করে রয়েছে। এগুলো যদি না থাকে তাহলে বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। নিয়মানুযায়ী নিলাম অনুষ্ঠিত হলে অনেক সংকটেরই সুরাহা হবে বলেও তারা মন্তব্য করেছেন।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, আটকা পড়া অনেক কন্টেনার নিয়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা রয়েছে। যেগুলো ইচ্ছে করলেও কাস্টমস নিলাম করতে পারছে না। তবে একটি ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বন্দরের অকশন শেড ক্লিয়ার করার উদ্যোগ নেয়া দরকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তবে এক্ষেত্রে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকেই একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।