বদলে যাচ্ছে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৯ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলা। এই পর্যটন কেন্দ্র দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকলেও এবার বদলাতে শুরু করেছে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরের এই পর্যটন কেন্দ্রকে পর্যটন বান্ধব করতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। আলুটিলার উন্নয়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে মাস্টার প্ল্যান। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হওয়ার পর এটি পর্যটকদের কাছে আরো আর্কষণীয় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি জেলা ঘোষণার পর পর্যটন কেন্দ্রটির দায়িত্ব নেয় জেলা প্রশাসন। এখানকার রহস্যময় প্রাকৃতিক গুহা পর্যটকদের কাছে প্রধান আর্কষণ। দীর্ঘ এই গুহা ঘিরে পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও তা ছিল অবহেলিত। এখানে আসা পর্যটকরা কেবল গুহা দেখলেও পর্যটন বান্ধব তেমন কোনো স্থাপনা ছিল না। গুহা দেখে পর্যটকরা ফিরে যেতেন।
তবে বর্তমানে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র ঘিরে মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে ভিউ পয়েন্ট কুঞ্জছায়া, প্রবেশ মুখে নির্মাণ করা হয়েছে স্বর্ণ তোরণ। কুঞ্জছায়া থেকে দেখা যাবে নয়নাভিরাম খাগড়াছড়ি শহর ও দূরের পর্বত শ্রেণী। বৃষ্টির সময় মেঘ এসে ছুঁয়ে যায় পর্যটকদের। মাস্টার প্ল্যানের অংশ হিসেবে নির্মাণ হচ্ছে ঝুলন্ত ব্রিজ, নন্দনকানন পার্ক, অ্যাম্ফিথিয়েটার ও খুমপুই রেস্ট হাউস।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আলুটিলা জেলার প্রধান পর্যটন আর্কষণ। তবে সম্ভাবনা অনুযায়ী তেমন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এখানে পর্যটনের উন্নয়নে মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করেছি। সেভাবে কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। পাহাড়ে যে ধরনের স্থাপত্য শৈলী দেখা যায় তার সাথে সঙ্গতি রেখে দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া আলুটিলার দুটি পাহাড়ের মাঝে সংযোগ
স্থাপনের জন্য ৮১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ঝুলন্ত ব্রিজ। এতে পর্যটকরা গুহা দেখে ঝুলন্ত ব্রিজের মাধ্যমে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যেতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়গুলোতেও পর্যটন বান্ধব স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ল্যান্ডস্কেল গার্ডেনিং। যেখানে বসে পর্যটকরা পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। এছাড়া নির্মাণ হবে ভিউ পয়েন্ট বা ছবি কর্নার। পাহাড়ের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে নির্মাণ করা হচ্ছে অ্যাম্ফিথিয়েটার। দর্শক গ্যালারিতে বসে ৫শ পর্যটক একসাথে পাহাড়ের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারবে। অনেক পর্যটক সাজেক বেড়াতে এসে শহরে রাতযাপন করে। পর্যটকরা যাতে আলুটিলা পাহাড়ে রাতযাপন করতে পারে সেজন্য খুমপুই রেস্ট হাউস নির্মাণ করা হচ্ছে। ২ কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে ৪তলা বিশিষ্ট এই রেস্ট হাউস নির্মাণ করা হচ্ছে।
খাগড়াছড়ির স্থানীয় বাসিন্দা সুইটি চাকমা ও প্রতিভা ত্রিপুরা বলেন, আগে দিনের বেলায় আলুটিলায় ভ্রমণ করা যেত। এখানে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতের বেলায়ও এখান থেকে শহরটাকে দেখা যায়।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক কোকোনাথ ত্রিপুরা ও চন্দ্রকিরণ ত্রিপুরা বলেন, বর্তমানে পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে প্রতিদিন এক হাজার পর্যটক আলুটিলা বেড়াতে আসে। এছাড়া প্রতিদিন পর্যটকের ভিড় থাকে। ঝুলন্ত ব্রিজসহ চলমান প্রকল্পগুলো শেষ হলে এখানে পর্যটকদের আগমন আরো বাড়বে।
খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ইউনিট ইনচার্জ এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, আলুটিলা ঘিরে মাউন্টেন ট্যুরিজমের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও আলুটিলাকে ঘিরে অনেকগুলো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে পাহাড়ের পর্যটন অর্থনীতি আরো বিকশিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজিয়ার সমাধি সংসদ এলাকা থেকে সরানো হবে : তথ্য প্রতিমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে নৌকা প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ